Boal fish farming process: বানিজ্যিক উদ্যোগে বোয়াল মাছ চাষ পদ্ধতি

“আয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে॥ না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে। তা দেখে দেখে ভোঁদর নাচে” – গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ছড়াতে আমরা বোয়াল মাছের পরচিতি পাই। আর এমন এক মাছ যে কিনা নৌকা পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেল।

রায়না ঘোষ
রায়না ঘোষ
Boal fish farming
Boal fish (image credit- Google)

“আয় রে আয় টিয়ে নায়ে ভরা দিয়ে॥ না নিয়ে গেল বোয়াল মাছে। তা দেখে দেখে ভোঁদর নাচে” – গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ছড়াতে আমরা বোয়াল মাছের পরচিতি পাই। আর এমন এক মাছ যে কিনা নৌকা পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেল।

 বোয়াল মাছ প্রচন্ড রাক্ষুসে ধরনের মাংসাশী মাছ। তারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং প্রাণীকে জল থেকে খায়। ছোট বোয়ালগুলি বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র মাছ এবং কীটপতঙ্গ খায়। বোয়াল একটি উচ্চ শক্তিপন্ন মাছ। গভীর সমুদ্রের মাংসাশী মাছ হাঙরের সাথে তুলনা করা হয় । এদের মাংস খাওয়ার প্রবণতা ও এই মাছের হিংস্রতার জন্য এই মাছকে মিষ্টিজলের হাঙর বলা হয়। বোয়াল মাছের আবার একটি খুব অদ্ভুত চরিত্র রয়েছে যে দিনের বেলা মাছটি শান্ত এবং আক্রমণাত্মক নয়। বোয়াল মাছ রাতেই খাবার খায়। একটি পরিনত বোয়াল মাছ ২৪০ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ৪৫.০ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। 

বোয়াল মাছের পরিচিতি:

বোয়ালের বিজ্ঞানসম্মত নাম ওয়ালাগো অট্টু । বোয়াল মাছের ফ্যাট বা চর্বি থাকায় মাছটি সুস্বাদু হয়। আবার উচ্চ পুষ্টিগুণের কারণে খাদ্য মাছ হিসেবে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বোয়াল মাছের পুষ্টিগুণ ভালো রয়েছে। পুষ্টিকর উপাদান পুষ্টি মূল্য হিসেবে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে প্রোটিন ১৫.৪ গ্রাম, চর্বি ২.৭০ গ্রাম, আয়রন ০.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.১৬ গ্রাম,ফসফরাস ০.৪৯ গ্রাম থাকে। আবার বোয়াল একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ হওয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগে বোয়াল মাছের মিশ্রচাষও সম্ভব। উত্তর-পূর্ব ভারতে বোয়াল মাছের ভালই চাহিদা আছে। সম্প্রতি এটি একটি ক্রীড়া মাছ হিসাবেও জনপ্রিয় এবং সম্প্রতি শোভাময় মাছের বাজারে প্রবেশ করেছে।  এই মাছ বড় নদী, হ্রদ, এবং জলা জায়গাতে পাওয়া যায়। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ায় দেশে পাওয়া যায়।

মাছ সাধারণত ট্যাঙ্ক, বিল এবং জলাশয়ের তীরে গর্তের নিচে লুকিয়ে থাকে। এটি স্থির জলের গভীর অঞ্চলে বা কাদা মাটি দিয়ে ধীর গতিতে প্রবাহিত জলে বাস করে। তবে মাছটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে হারিয়ে যাওয়া মাছের পর্যায় পড়েছে। আসলে বোয়াল ওয়ালাগো সিলুরিডি পরিবারের একটি ক্যাটফিশ । এই ওয়ালাগো প্রজাতি একটি বড় শিকারী ক্যাটফিশ। দুই জোড়া গোফ আছে এবং এক জোড়া খুব দীর্ঘ হয়। তাদেরকে এই গোফের জন্য ক্যাটফিশ বলা হয়।

আরও পড়ুন -Lathyrus farming process: জেনে নিন খেসারী ডালের চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

বোয়ালের শারীরিক গঠন:

আবার এই বোয়ালের দেখাও মেলে কম। কেমন দেখতে বোয়াল? বোয়াল মাছের শরীর দীর্ঘ হয়, উভয় পাশ চাপা হয় এবং ক্রমশ লেজের দিকে সরু হয়। লেজের পাখনা দুই ভাগে বিভক্ত। তাদের পৃষ্ঠীয় পাখনায় পাঁচটি রশ্মি রয়েছে।  বেশ স্থুলকার দেহ। সব পাখনায় হালকা লালচে হলুদ রঙ থাকে। মুখ বড় আকারের এবং মুখের মধ্যে কিছু দাঁত আছে। নিম্ন চোয়াল উপরের চোয়ালের তুলনায় দীর্ঘ। ত্বক অত্যন্ত মসৃণ। উল্টো দিকে মাথা ভালভাবে উন্নত। মাথা নরম ত্বক দিয়ে আচ্ছাদিত হয়। ম্যাক্সিলারি এবং ম্যান্ডিবুলার বারবেল রয়েছে কিন্তু অনুনাসিক বারবেল নেই। পৃষ্ঠীয় পাখনা মাঝারি শক্তিশালী মেরুদণ্ডে পরিবর্তিত হয়েছে। পায়ু পাখনা অনেক লম্বা এবং কডাল ফিন অব্যাহত থাকে কিন্তু কডাল ফিন এর সাথে সংযুক্ত থাকে না। বোয়ালের শরীরের রঙ ফ্যাকাশে সাদা। তাদের শরীরের কোন আঁশ নেই।

এই মাছ অত্যন্ত মাংসাশী। এটি মাছ, পোকামাকড়, প্ল্যাঙ্কটন, বাচ্চাদের লার্ভা, ক্রাস্টাসিয়ান, মোলাস্কান, কৃমি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের খাদ্য দেয়। এই প্রজাতিটি খুব জনপ্রিয় এবং খাদ্য হিসাবে পছন্দ করা হয় কিন্তু অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য ছোট আকারের মাছ পছন্দ করা হয়। মানুষ এদেরকে শিকারী মাছ হিসেবে চেনে। এটি গ্রীষ্মে প্রকৃতিতে প্রজনন করে।

চাষ পদ্ধতি:

প্রজনন পদ্ধতি:

বোয়াল মাছ এখন বিপন্ন প্রায়। তবে বেশি বেশি চাষ করেই এর বংশ রক্ষা করা সম্ভব। কেননা প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম নষ্ট হওয়ায় মাছটি আগের মত পাওয়া যায় না। তবে বোয়াল একটি রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। কাজেই এ মাছকে প্রজননের আওতায় এনে উৎপাদন করতে কয়েকটি বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হয়। বৃষ্টির সময় বোয়াল মাছ প্রজনন করে। তারা সাধারণত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ডিম পাড়ে। তারা উভয় আবদ্ধ এবং খোলা  জলাধারে ডিম পাড়ে। প্রজননের সময় খুব সহজেই পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে শনাক্ত করা যায়। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেটভর্তি ডিম থাকে আর পুরুষ মাছের পেট সাধারণ মাছের মত থাকে। তাছাড়া পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বের হয়। এভাবেই বোয়ালের পুরুষ-স্ত্রী শনাক্ত করা যায়।  স্ট্রিপিং বা চাপ পদ্ধতিতে বোয়াল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কিভাবে করা যেতে পারে । বোয়াল মাছকে পিজি (পিটুইটারি গ্ল্যান্ড) হরমোন দিয়ে ইঞ্জেকশন করলেই ডিম দিয়ে থাকে। প্রথম ডোজের সময় শুধু স্ত্রী মাছকে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। ডোজের মাত্রা ২ মিগ্রা বা কেজি। ৬ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ মিগ্রা বা কেজি। দুটি পদ্ধতিতে বোয়ালের ডিম সংগ্রহ করা যায়। বোয়াল মাছকে পিজি হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে আলাদা আলাদা হাপাতে  রাখতে হয়। দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টা পর সাধারণত বোয়াল মাছ ডিম দিয়ে থাকে। খেয়াল রাখতে হবে, যখনই ২-১টি ডিম বের হবে; তখনই মাছগুলোকে একে একে হাপা থেকে তুলে আনতে হবে।

এবার স্ত্রী মাছের পেটে আস্তে করে চাপ দিলেই ডিম বের হবে। স্ত্রী মাছের ডিম বের করার পর তাৎক্ষণিকভাবে পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে মিল্ট বের করে ডিমের উপর পাখির পালক দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর ডিমগুলোকে ২-৩ বার বিশুদ্ধ জলে  পরিষ্কার করে ৩-৪ ইঞ্চি উচ্চতার জলে হাপাতে  রাখতে হবে। জলে ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে ২০-২২ ঘণ্টার মধ্যেই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবে।

অন্যভাবে, পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে হরমোন ইঞ্জেকশন দিয়ে একসাথে একটি বড় চৌবাচ্চায় ছেড়ে দিতে হবে। তাতে দ্বিতীয় ডোজের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে এরা ডিম পারবে। ডিম পারা শেষ হলে ব্রুডমাছগুলোকে সর্তকতার সাথে সরিয়ে নিতে হবে। তারপর চোউবাচ্চার জল কমিয়ে ৩-৪ ইঞ্চি রেখে ছিদ্রযুক্ত পাইপ দিয়ে জলর ঝরনা দিতে হবে। এখানেও ২০-২২ ঘণ্টার মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হবে।

তবে বোয়াল মাছের পোনা খুবই রাক্ষুসে। ডিম থেকে ফোটার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একটি আরেকটিকে খেতে শুরু করে। অন্য মাছের রেণু পোনা ডিমের কুসুম বা ক্ষুদ্র আকৃতির প্ল্যাংকটন খেলেও বোয়ালের পোনা ডিমের কুসুম বা কোনো ধরনের প্ল্যাংকটন খায় না। সে ক্ষেত্রে তাদের জীবিত অবস্থায় মাছের রেণু বা পোনাকে খেতে দিতে হয়। এভাবে ৮-১০ দিনেই ২ ইঞ্চি সাইজের পোনায় পরিণত হয়।

মাছ আহরণ:

বোয়াল মাছ এককভাবে চাষ লাভজনক নয়। তাই এদের বিভিন্ন মাছের সাথে চাষ করে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাছ ছাড়ার সময় একটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে, বোয়ালের পোনা যেন কোনো অবস্থায়ই পুকুরের অন্যান্য মাছের আকারের সমান না হয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য মাছের ওজন যখন ১৫০-২০০ গ্রাম ওজন হবে; সেখানে ২ ইঞ্চি সাইজের বোয়ালের পোনা ছাড়তে হবে। আর তা না হলে বোয়াল দ্রুত বড় হয়ে অন্যান্য মাছ খেয়ে ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: সুমন কুমার সাহু, মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক, হলদিয়া

আরও পড়ুন -Azolla cultivation guide: বেকার সমস্যা দূরীকরণে অ্যাজোলা চাষে লাভ করুন দ্বিগুন

Published On: 30 September 2021, 12:23 PM English Summary: Boal fish farming process: Boal fish farming method in commercial enterprise

Like this article?

Hey! I am রায়না ঘোষ . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters