পাঙ্গাস মাছ স্বল্প নোনা জল এবং মিঠা জলের মাছ। প্রতিকূল পরিবেশ এই মাছ উৎপাদনক্ষম। তাই পাঙ্গাস মাছের চাহিদা অনেক। পাঙ্গাস মাছের বাহ্যিক চেহারা সুন্দর হওয়ায় “অ্যাকোয়ারিয়াম ফিশ” হিসেবেও পাঙ্গাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । অনেক বড় অ্যাকোয়ারিয়ামেও এদের সহজে রাখা যায়। আবার অধুনা এই মাছ স্থানীয় বাজারেও বেশ একটা স্থান করে নিয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে অনেক মৎস্য চাষি এটির চাষাবাদ শুরু করেছেন।
পাঙ্গাসের কতিপয় রোগ ও তার প্রতিকার-
এই মাছে খুব বেশি রোগ-পোকার প্রাদুর্ভাব ঘটে না। তা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিন মাস বাদে বাদে মাছ তুলে নেওয়া হয়। তাই রোগে খুব ক্ষতি করতে পারে না। সুষ্ঠু পরিচর্যা ও নিয়মিত নুন, চুন প্রয়োগ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাই এই চাষের মূল মন্ত্র। প্রয়োজন হলে প্রতি ডেসিম্যাল পুকুরে ২৫ গ্রাম হলুদ প্রয়োগ করলে মাছের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেড়ে যায়।
তবে শীতকালে অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রায় Trichodina এবং Apisomia নামক বহিঃ পরজীবী দ্বারা পাঙ্গাস মাছ রোগাক্রান্ত হতে পারে। এই রোগে অনেক সময় পাঙ্গাস মাছের ত্বক ও পাখনার গোড়ায় লালচে দাগ দেখা দেয় এবং কখনও কখনও মুখে ঘা দেখা দেয়। পুকুরে পাঙ্গাস মাছ বহিঃ পরজীবী বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত মাছগুলোকে জাল টেনে উঠিয়ে ১ মিলি/লিটার জলে ফরমালডিহাইড দ্রবণ প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পুনরায় পুকুরে ছেড়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তবে জাল খুব সাবধানে টানতে হবে কারণ কোনও ক্ষত এদের শরীরের পক্ষে ভালো নয়, বিশেষ করে মুখের শুঁড় দু’টি খুবই সংবেদনশীল। কোনও কারণে ক্ষত হলে এদের মৃত্যু হতে পারে।
আক্রান্ত পুকুরে ০.৫-১.০ কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। শীতকালে সপ্তাহে ১-২ দিন পরিমিত পরিমাণে ডিপ টিউবয়েলের জল পুকুরে সরবরাহ করলে পাঙ্গাস মাছের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
লালচে দাগ বা লেজ ও পাখনা পচা রোগে পাঙ্গাস আক্রান্ত হলে ০.২৫ মিগ্রা/লিটার জলে এক্রিফাভিন বা ম্যালাকাইট গ্রিন প্রয়োগ করে সেই দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১-২ মিনিট রেখে পুনরায় পুকুরে ছেড়ে দিলে লেজ ও পাখনা পচা রোগ ভাল হয়।
আরগুলাস দ্বারা পাঙ্গাস মাছ আক্রান্ত হলে ০.২৫ পিপিএম ডিপটারেক্স সপ্তাহে ১ বার করে ৩ সপ্তাহ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
আক্রান্ত পুকুরে ০.৫-১.০ কেজি হারে কলিচুন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শীতকালে সপ্তাহে ১-২ দিন পরিমিত পরিমাণে ডিপ টিউবয়েলের জল পুকুরে সরবরাহ করলে পাঙ্গাস ং
রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
লালচে দাগ বা লেজ ও পাখনা পচা রোগে পাংগাস আক্রান্ত হলে ০.২৫ মিগ্রা/লিটার মাত্রায় এক্রিফাভিন বা ম্যালাকাইট গ্রিন দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে ১-২ মিনিট গোসল করিয়ে পুনরায় পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে অথবা প্রতি কেজি দেহ ওজনে ১০ মিগ্রা. টেট্রাসাইকিন ইনজেকশন ১ সপ্তাহে ২ বার দিতে হবে অথাব প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫০ মিগ্রা. টেট্রাসাইকিন মিশিয়ে ৭ দিন খাওয়ালে লেজ ও পাখনা পচা রোগ ভাল হয়।
আরগুলাস বা উকুন দ্বারা পাঙ্গাস মাছ আক্রান্ত হলে প্রতি শতাংশে ৪০-৫০ গ্রাম (৪-৫ ফুট পানি) করে ডিপটারেক্স সপ্তাহে অন্তর ২ বার পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
অনেক সময় সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পাঙ্গাস মাছ আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত মাছের দেহ পৃষ্ঠে লাল দাগ এবং কখনও কখনও ক্ষত দেখা যায়। এই রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার হিসাবে পিপিএম ৩-৫ গ্রাম ১০০০ লি. জলে ৩ দিন ১ মাস প্রয়োগ করতে হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments