এই বর্ষার (Monsson) মরসুমে গবাদি পশুদের খাদ্য সংরক্ষণে অত্যন্ত নজর দেওয়া উচিত | ভেজা খড় ও কাঁচা ঘাস সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পদ্ধতির উপর কৃষক ভাইদের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে | নিবন্ধটি পুরো পড়ুন এবং আপনার গবাদি পশুর খাদ্য সংরক্ষণে নিম্ন ভুমিকাগুলি পালন করুন |
ভেজা খড় সংরক্ষণ পদ্ধতি(Wet Straw preserve method):
সাধারণত, গরুর প্রধান খাদ্য হল খড়। বর্ষাকালে ইরি-বোরো ও আউশ ধানের খড় বেশির ভাগ ভিজে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ পচনশীল খড় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষণ করা হলে দেশে গো-খাদ্যের চাহিদা অনেকটা পূরণ হতে পারে। ইউরিয়া সহযোগে খড় প্রক্রিয়াজাতকরণের পদ্ধতি নিম্নে বর্ণিত হলো।
উপকরণ:
প্রতি ১০০ কেজি খড়ের জন্য ১.৫-২.০০ কেজি ইউরিয়া সার এবং আচ্ছাদন দেওয়ার জন্য পলিথিন পেপার।
প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি:
১) প্রথমে জল জমে না এমন একটি উঁচু ও সমতল স্থান নির্বাচন করতে হবে।
২) নির্বাচিত উঁচু জায়গাটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৩) এরপর পলিথিনের উপরে খড় বিছাতে হবে |
৪) ৮-১০ ইঞ্চি করে খড়ের স্তর করে তার উপর পরিমাণ মত ইউরিয়া ছিটাতে হবে।
৫) খড়ের স্তর করার সময় পা দিয়ে খুব চেপে চেপে খড় রাখতে হবে যাতে খড়ের গাদায় বাতাস না থাকে।
৬) খড়ের গাদা তৈরি শেষ হয়ে গেলে পলিথিন দিয়ে এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাইরে থেকে বাতাস এবং জল না প্রবেশ করে |
আরও পড়ুন - Rooftop Poultry Farming: বাড়ির ছাদেই পালন করুন মুরগি, শিখে নিন নিয়ম
প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানোর নিয়ম:
৭-১০ দিন পর গাদা থেকে খড় বের করার পর কিছুক্ষণ ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে তারপর খাওয়াতে হবে। এর ফলে গাদায় উৎপাদিত এমোনিয়া গ্যাস বের হয়ে যায়। এ খড়ের সাথে শতকরা ৪০ ভাগ হারে সাধারণ শুকনো খড় মিশিয়ে খাওয়ালে এমোনিয়াজনিত কোনো বিষক্রিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে না। এই খড়ের গাদা প্রয়োজনে ১ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় |
কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি(Raw Grass preserve method):
বর্ষাকালে দূর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল, শস্য ক্ষেতের আগাছা ইত্যাদি জাতীয় কাঁচা ঘাস প্রচুর পাওয়া যায় অথবা জমিতে চাষ করা নেপিয়ার, পারা, ভুট্টা, সরগম, ওট ইত্যাদি খুব সহজেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাইলেজ করে ১ বছর পর্যন্ত পশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। ১০০ ঘনফুট একটি মাটির গর্তে ২.৫-৩.০ মেট্রিক টন ঘাস সংরক্ষণ করা যায়।
উপকরণ:
১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের জন্য ৩-৪ কেজি চিটা গুড়, চিটা গুড়ের সমপরিমাণ জল, শুকনো খড় ও পলিথিন কভার।
সাইলেজ প্রস্তুতের পদ্ধতি:
১) প্রথমে জল জমে না এমন একটি উঁচু স্থান নিবার্চন করতে হবে।
২) সেখানে এমনভাবে একটি গর্ত খুঁড়তে হবে যাতে গর্তের নীচের অংশ পাতিলের তলার মত অথবা ইংরেজি বর্ণমালার ইউ (U ) এর আকৃতি হয় যাতে সেখানে কোনো কৌণিক অংশ না থাকে।
৩) এরপর গর্তের মাটিতে পুরু করে শুকনো খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
৪) এবার গর্তে পরতে পরতে সবুজ ঘাস ও শুকনো খড় বিছিয়ে দিতে হবে ( প্রতি পরতে ৩০০ কেজি সবুজ ঘাস ও ১৫ কেজি শুকনো খড় থাকবে)।
৫) প্রতি পরতে পরিমাণ মতা চিটাগুড় পানিতে গুলে ঘাসের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে (৯-১২ কেজি চিটা গুড় ও ৮-১০ কেজি জল)।
৬) মাঝে মাঝে ঘাসের স্তরের উপর পা দিয়ে চাপ দিতে হবে যাতে ভিতরে বাতাস না থাকতে পারে।
৭) ঘাসে জলের পরিমাণ বেশি হলে স্তরের মাঝে শুকনো খড় দিতে হবে। ফলে খড় অতিরিক্ত জল শুষে নেবে।
৮) এই ভাবে স্তরে স্তরে ঘাস সাজিয়ে মাটির উপরে কোমর সমান উঁচু করতে হবে।
৯) সবশেষে শুকনো খড় দিয়ে পুরু করে আস্তরণ দ্বারা পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে ঘাসের গাদা ঢেকে দিতে হবে।
ভুট্টা সংরক্ষণ:
বর্ষাকালে ভুট্টা সংগ্রহ করার পর ভুট্টার গাছ শুকিয়ে দা দিয়ে ছোট ছোট টুকরা করে বস্তায় বেঁধে রেখে দিলে বর্ষা বা বন্যার সময় আপদকালে গরুকে খাওয়ানো যায়। ভুট্টা গাছের টুকরা জলে ভিজিয়ে চিটাগুড় দিয়ে মাখিয়ে দিলে গরু খায়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Beetal Goat Farming: বিটল জাতের ছাগল পালনে পশুপালকের হবে দ্বিগুন আয়
Share your comments