আমাদের দেশীয় গরুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি সাধারণত তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে আশানুরূপ দুধও উৎপাদন হয় না। অথচ গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে কাঁচা ঘাস, পরিমিত প্রক্রিয়াজাত খড়, দানাদার খাদ্য (কুড়া, গমের ভূষি, চালের খুদ, খৈল, কলাই, মটর, খেশারী, কুড়া ইত্যাদি), পর্যাপ্ত পরিমানে পরিষ্কার জল (নলকূপের শুদ্ধ জল) সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা, নিয়মিত কৃমিনাশক চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হলে এদের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়। আমাদের দেশে গবাদি পশুর সবচেয়ে সহজলভ্য ও সাধারণ খাদ্য হল খড় যার ভিতর আমিষ, শর্করা ও খনিজের ব্যাপক অভাব রয়েছে। বর্তমানে খড়কে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করলে তার খাদ্যমান বহুগুণে বেড়ে যায়।
খাদ্য উপকরণে যে পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমানে থাকে তাকে সে জাতীয় খাদ্য বলে। যেমন-
-
শর্করা জাতীয় খাদ্য (ভুট্টা, গম, কাওন, চালের কুঁড়ো, গমের ভুষি, ইত্যাদি)।
-
আমিষ জাতীয় খাদ্য (সয়াবিন মিল, তিলখৈল, শুটকিমাছ, মিটমিল, ইত্যাদি)।
-
চর্বি জাতীয় খাদ্য (এনিমেল ফ্যাট, ভেজিটেবল অয়েল, সার্কলিভার ওয়েল, ইত্যাদি)।
-
ভিটামিন জাতীয় খাদ্য (শাকসজি ও কৃত্রিম ভিটামিন)
-
খনিজ জাতীয় খাদ্য (ঝিনুক, ক্যালশিয়াম ফসফেট, রকসন্ট, লবন, ইত্যাদি)।
-
জল: দেহ কোষে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ জল থাকে। তাই কোন প্রাণি খাদ্য না খেয়েও কিছু দিন বাঁচতে পারে,কিন্তু জল ছাড়া সামান্য কিছু দিনের বেশী বাঁচে না।
-
সাধারণত দেহ থেকে জল ক্ষয় হয় মলমূত্র ও শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
-
অপরদিকে জল আহরিত হয় জল পান করে, রসালো খাদ্য গ্রহণ করে এবং দেহের ভিতর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অক্সিডিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
-
দেহের বেশির ভাগ অংশ জল দ্বারা গঠিত।
আরও পড়ুনঃ গরুপালনে প্রয়োজন সঠিক উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মান ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
প্রণির দেহে জলের কাজ
-
খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য বস্তু নরম ও পরিপাকে সহায্য করে।
-
খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে পুষ্টি উপাদান তরল করে দেহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহণ করে।
-
দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহকে সতেজ রাখে।
-
দেহের ভিত্তিতে দুষিত পদার্থ অপসারণ করে।
-
দেহের গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস, হরমোন, এনজাইম এবং রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে।।
গরুর খাদ্যকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যেমন
১. আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য, যেমনঃ খড়, সবুজ ঘাস বা কাঁচা ঘাস, ইত্যাদি
২. দানাদার জাতীয় খাদ্য, যেমন চালের কুঁড়া, গমের ভূষি, খেসারি ভাঙ্গা, তিল বা বাদাম খৈল, ইত্যাদি
৩. সহযোগী অন্যান্য খাদ্য যেমনঃ খনিজ উপাদান, ভিটামিন, ইত্যাদি
-
শুকনা খড়ঃ একটি দেশী গাভীকে দৈনিক ৩ কেজি খড় খাওয়াতে হয়। উন্নত সংকর জাতের একটি গাভীর জন্য দৈনিক ৪ কেজি খড় প্রয়োজন হয়। খড় কেটে ও কাটা খড়ের সহিত ১০% চিটাগুর মিশিয়ে খাওয়ালে পুষ্টির মান বেড়ে যায়। খড়ে প্রোটিনের ভাগ বাড়ানোর জন্য ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়াতে হবে,
-
সবুজ কাঁচা ঘাসঃ গাভীর সুষম খাদ্যের প্রধান অংশ সবুজ কাঁচা ঘাস। কাঁচা ঘাস গাভীর দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। তাই দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রতিদিন ১০-১২ কেজি কাঁচা ঘাস অবশ্যই যোগ করতে হবে। একটি উন্নত সংকর জাতের গাভীকে দৈনিক ১৫ কেজি সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়।
আরও পড়ুনঃ ছাগল প্রজনন,গর্ভবতী ছাগল এবং ছাগলের বাচ্চার পরিচর্যা পদ্ধতি না জানলে বড় ক্ষতি হতে পারে
বিভিন্ন জাতের সবুজ কাঁচা ঘাস
-
অস্থায়ী ঘাস: শীতকালীন ঘাস যেমন- ওটস, ভুট্টা ইত্যাদি।
-
শুটি জাতীয় ঘাস: খেসারী, মাসকলাই, কাউপি, সেন্ট্রোশিমা, বারশিম, লুসার্ন ইত্যাদি।
Share your comments