কৃষিজাগরন ডেস্কঃ প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ 'আদর্শ খাদ্য' দুধ। কিন্তু এ দুধ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে অতি সহজে দূষিত হয়ে পড়ে। দুধ দোহন পদ্ধতিই এর প্রধান কারণ এবং দোহনের সময়ই অসংখ্য ক্ষতিকর জীবাণু দুধে ঢুকে পড়ে। দুধে জীবাণু এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে দুধের পুষ্টিমান অতি সহজেই নষ্ট করে ফেলে। তাই দুধ দোহনের সময় যত বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা যায় তত ভাল দুধ পাওয়া যায়।
দুধ দহনের পদ্ধতি
১. দোহনের পূর্বে গাভীকে ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গাভীর পশ্চাৎভাগ, ওলান, বাঁট, লেজ, মলদ্বারের চারপাশে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং শুকনো পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। শীতকালে সামান্য গরম জল ব্যবহার করতে হবে।
২. দুধ দোহনের পূর্বেই গাভীর শরীরকে ব্রাশ করে আলগা পশম সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩. গোয়ালা বা দুধ দাহনকারীকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। গোয়ালার হাত বা শরীরের অন্যস্থানে যেন কোন চর্মরোগ না থাকে এবং হাতের নখ ও আঙ্গুল সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।
৪. দোহনের পাত্র অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। এ জন্য আগে থেকেই ফুটন্ত পানি দিয়ে দুগ্ধ পাত্র পরিষ্কার করে শুকিয়ে রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ উন্নত জাতের এই তিন মুরগী পালনে ফিরতে পারে ভাগ্য,জেনে নিন সঠিক পালন পদ্ধতি
৫. যেখানে অনেক গাড়ী দোহন করতে হবে, সেক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের (stainless Steel)স্টেইনলেস্ স্টীলের তৈরি দুধ দোহন পাত্র করা বাঞ্ছনীয়। ঐ দুধ দোহন-পাত্রের (Milking pail) ভিতর মসৃণ হওয়া উচিত এবং তার মুখ উপরিভাগের এক পার্শ্বে ঢাকা থাকতে হবে।
৬. বিকল্প হিসেবে ভিন্ন ধরনের দুধ দোহন পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যা গরম পানি দিয়ে সহজে পরিষ্কার করা যায়।
৭. দুধ দোহনের স্থান সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৮. গাভী দোহনের সময় গাভীকে যেন কুকুর বা অন্য কোন প্রাণী বা মানুষ উত্যক্ত করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট লোক দিয়ে নির্দিষ্ট পাত্রে দুধ দোহন করতে হবে। এ ব্যবস্থায় গাভী খুব সহজে তাড়াতাড়ি দুধ ছেড়ে দেবে; সময়, পাত্র, স্থান ও লোকের আগমন সম্বন্ধে পরিচিত থাকবে তার ফলে দুধ দোহন সহজ ও পরিপূর্ণ হবে।
১০. দোহনকারী দুধ দোহনের সময় যেন হাঁচি, কাশি না দেয় সে ব্যাপারে পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে অর্থাৎ রোগাক্রান্ত কোন লোক দিয়ে দুধ দোহন না করানো উচিত।
১১. দুধ দোহন শুরু হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে বাছুর গাড়ীর প্রতিটা বাঁটে মুখ দিয়ে সামান্য কিছু দুধ যেন চেটে নেয়। এর ফলে বাঁটে যদি কোন জীবাণু থেকে থাকে তা অপসারিত হবে।
আরও পড়ুনঃ থাকার জন্য এসি রুম, ডায়েটে ড্রাই ফ্রুটস, ১০ কোটি টাকার এই মহিষ এসেছে পাটনার কৃষক মেলায়
১২. যখন বাছুর থাকবে না তখন বাঁট হতে সামান্য পরিমাণ দুধ অন্য একটা পাত্রে বা কাপে সরিয়ে রাখা ভাল। এতে দুধ জীবাণুমুক্ত হতে পারে।
১৩. অনেকেই দুধ দিয়ে হাত ভিজিয়ে বাঁট পিচ্ছিল করার অভ্যাস আছে। এর ফলে প্রচুর জীবাণু দুধে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এ অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত।।
১৪. বাঁটকে মৃদুভাবে আঙ্গুল দিয়ে মর্দন করে নরম করে নিলে বাঁট শুকনো থাকলেও দুধ দোহন করা যায়। এর ফলে দুধে জীবাণু প্রবেশের সম্ভাবনা কম থাকে।
১৫. যদি বাঁট বড় হয় তবে বাঁটকে মুঠে করে বার বার সংকোচন করলেও দুধ দোহন সহজ হয়।
Share your comments