মাছ চাষে (Fish farming) অনেক কৃষকই লাভবান হয়ে থাকেন | কিন্তু, অনেককেই আবার পড়তে হয় সমস্যায়, তখন আর্থিক দিক থেকে লাভের বদলে হয় লোকসান | পুকুরে জল কমে যাওয়া, জল দূষিত হওয়া, অক্সিজেন কমে যাওয়া, গ্যাস সৃষ্টি হয়, রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এসব সমস্যার জন্য মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে। এতে মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই, সঠিক প্রতিকার জানা মাছ চাষীভাইদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় |
কার্বন ডাইঅক্সাইডজনিত জল দূষণ:
জলে কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। মাছ জলের ওপরে ভেসে ওঠে। এক্ষেত্রে পুকুরের জল নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়ালে কার্বন ডাইঅক্সাইড কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরিয়ে দিতে হবে |
পুকুরের জলের ওপর সবুজ স্তর:
পুকুরের জলের রঙ ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা জলের ওপর শ্যাওলা জন্মালে খাদ্য ও সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতি শতাংশে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট অনেক ভাগ করে ছোট ছোট কাপড়ে বেঁধে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার জলের নিচে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে। প্রতি শতাংশ পুকুরে ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন - Composting Cow Dung: কিভাবে গোবর থেকে জৈব সার বানাবেন? শিখে নিন পদ্ধতি
জলের ক্ষারজনিত সমস্যা:
জল ক্ষারীয় হলে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি কম হয়। মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মাছের দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়। পুকুর তৈরির সময় ওপরে শতাংশ প্রতি ১ থেকে ২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হয়। লেবু কেটে দিলেও ক্ষারত্ব কমে। ছাই প্রয়োগেও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়।
মাছের খাবি খাওয়া:
জলে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ জলের ওপর ভেসে ওঠে ও খাবি খায়। অর্থাৎ বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণের চেষ্টা করে। এতে মাছের ফলন কমে যায়। জল নাড়াচাড়া করে অক্সিজেন বাড়াতে হবে, পুকুরে পাম্প করতে হবে, পুকুরের তোলার গ্যাস বার করতে হবে | প্রয়োজনে নতুন জল ঢালতে হবে | প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন দিলে সমস্যা কম হয় |
জলের ঘোলাত্ব:
জল ঘোলা হলে মাছ খাদ্য কম খায়, চোখে দেখে না, প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় না | সর্বোপরি প্রজননে সমস্যা হয় ও রোগবালাই বেশি হয়। প্রতি শতাংশে ৮০ থেকে ১৬০ গ্রাম ফিটকিরি দিতে হবে। পুকুর তৈরির সময় জৈবসার বেশি দিলে স্থায়ীভাবে ঘোলা দূর হয়। জলে কলাপাতা ও কচুরিপানা রাখলেও ঘোলা কমে।
পিএইচজনিত সমস্যা:
জলে পিএইচ কমে গেলে মাছের দেহ থেকে প্রচুর পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। মাছ খাদ্য কম খায়। পিএইচ বেশি হলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়। দেহ খসখসে হয়। মাছ রোগাক্রান্ত হয়। পিএইচ কম হলে চুন, ডলোমাইড বা জিপসাম ১ থেকে ২ কেজি প্রতি শতাংশ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ বেশি হলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডালপালা ৩-৪ দিন ভিজিয়ে রেখে পরে তুলে ফেলতে হবে।
আরও পড়ুন - Palm Oil Farming: জেনে নিন সহজ পদ্ধতিতে পাম অয়েল চাষ
Share your comments