মাছ উচ্চ প্রোটিন এবং কম ফ্যাট বিশিষ্ট জলজ প্রাণী, যার খাদ্যগুণ অসামান্য। এতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ডের রক্ত সংবহন ও হৃৎস্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণ করে এর স্বাস্থ্য রক্ষা করে, টিস্যুর প্রদাহ কমায় এবং রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস-এর উপশম করে। রক্তে কলেস্টোরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এর বিশেষ ভূমিকা আছে। মাছ বাঙালী জীবনের সাথেওতপ্রোতভাবে জড়িত।কিন্তু এই মাছ কিভাবে, কত বাজার ঘুরে আমাদের কাছে এসে পৌঁছয়, কিভাবেই বা সারা বছর বিভিন্ন প্রকার মাছ আমরা বাজারে পেয়ে থাকি, তা অনেকেরই অজানা। জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে কিছু অজানা তথ্য -
মাছের বিপণন ব্যবস্থা –
বর্তমানে আধুনিক ব্যবস্থায় বাজারের প্রসার ঘটেছে, মূলধনের জোগান বেড়েছে। দূরে দূরে বাজারে সরবরাহ করা হয় মাছ এবং এসব সম্ভব হয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি উন্নত হওয়ার কারণে। বাজারের প্রসারের কারণে মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। চাহিদা পূরণের জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে মাছ চাষের জন্য। সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন মৌসুমি মাছও বাজারে পাওয়া যায়।
মাছের বাজারের গঠন –
জেলেরা মাছ ধরে সাধারণত তা নিজেরা বেচে না। এরা সারা রাত ধরে ধরা মাছ বয়ে নিয়ে যায় ব্যাপারীর কাছে। ব্যাপারীরা এই মাছ কিনে আড়তদারকে বিক্রি করে। আড়তদারদের থেকে মাছ পাইকারী বাজারে যায় এবং শেষে যায় খুচরো মাছের বাজারে।
পাইকারী বাজার –
পাইকারী বাজারে খুবই অস্বাস্থ্যকর, ঘিঞ্জি পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়, যেখানে ভোর হতেই খুচরো বাজারের মাছ বিক্রেতারা ভিড় জমায় মাছ কেনার জন্য। বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ এনে পাইকারী বাজারেই জমায়েত করা হয়।
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল যেমন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কিছু বাজার ঘুরে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা গেছে, যেমন এই সকল এলাকার পাইকারী বাজারে (জয়েনপুর পাইকারী বাজার কিংবা বাঘাযতীন পাইকারী বাজার) রুই, তেলাপিয়া, কাতলা, কই এই সকল মাছ আসে মূলত রাইদীঘি, গোসাবা, নাকালি, চম্পাহাটি, মালঞ্চ বা লক্ষীকান্তপুর এই সকল অঞ্চল থেকে। আবার সামুদ্রিক মাছ যেমন চেলা, ইন্ডিয়ান ম্যাকেরেল, ভোলা, ভেটকি, খয়রা ও বিভিন্ন প্রকার চিংড়ি মাছ , এসব আসে দীঘা, ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ এসব অঞ্চল থেকে।
খুচরো বাজার –
পাইকারী বাজার থেকে এনে মাছ খুচরো বাজারে বিক্রি করা হয়। সকাল সকাল ক্রেতাদের ভিড় জমে ঠিকই, কিন্তু খুচরো বাজার অনেকটা বেশি সময় ধরেই জমজমাট থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে। কিন্তু পাইকারী বাজার ভোরবেলায় বসে এবং যা সকাল সকাল বন্ধও হয়ে যায়।
বাজারের মধ্যস্থতাকারীরা –
নিলামকারী – বিভিন্ন কমিশনের এজেন্ট থাকে, যাদের হয়ে কাজ করে নিলকামকারীরা। কমিশন এজেন্টদের কেনা মাছ নিলামে বিক্রি করে এই নিলামকারীরা।
পাইকারী বিক্রেতা – পাইকারী বিক্রেতারা নিলামকারীদের থেকে মাছ কিনে সেই মাছ বিক্রি করে খুচরো বিক্রেতাদের কাছে।
খুচরো বিক্রেতা -খুচরো বিক্রেতারা বাজারে এনে সেই মাছ বিক্রি করে উপভোক্তাদের কাছে। কেউ কেউ আছেন, যারা কোন বাজারে পসরা সাজিয়ে না বসে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মাছ বিক্রি করে থাকেন।
মাছ বিপণনের চ্যানেলসমূহ –
মাছ বিপণন পর্ব মূলত চারটি স্তরে পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়, যেমন –
প্রাইমারী মার্কেট – গ্রাম এলাকায় এ সকল বাজারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, সেখানে মাছ চাষীরা স্থানীয় বাজারে মাছ নিয়ে যায়, তাকেই প্রাইমারী মার্কেট বা প্রাথমিক বাজার বলা হয়।
সেকেন্ডারী মার্কেট – এ সকল বাজারে ব্যাপারীরা মাছ কিনে থাকে মাছচাষী, প্রাথমিক বাজার, কিংবা নিকারীদের কাছ থেকে। এই সেকেন্ডারী মার্কেট থেকে ব্যাপারীরা বিভিন্ন উপায়ে সেই মাছ বিক্রি করে কমিশন এজেন্টের কাছে।
হায়ার সেকেন্ডারী মার্কেট – কমিশন এজেন্টরা কিনে আনা মাছ নিলামকারীদের দিয়ে নিলামে লাগায় এই বাজারে। পাইকারী বাজারের বিক্রেতারা নিলামের মাধ্যমে এই মাছ কেনে।
সিটি মার্কেট – পাইকারী বাজার থেকে মাছ যায় খুচরো বিক্রেতাদের কাছে। খুচরো বাজারের বিক্রেতারা সেই মাছ বিক্রি করে সাধারণ উপভোক্তাদের কাছে।
এইভাবে একটি শৃঙ্খল পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে খুচরো বিক্রেতারাও দল বেঁধে নিলামকারীদের থেকে মাছ কেনে বেশি লাভের আশায়।
তথ্যসূত্র - ডঃ প্রতাপ কুমার মুখোপাধ্যায়
অনুবাদ - স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments