এবার থেকে একটি নয় বছরে দুটি করে বাচ্চা দেবে গাভি

ব্যতিক্রম ছাড়া গাভী সাধারণত বছরে একটি বাছুর জন্ম দেয়। কিন্তু এখন থেকে বছরে নিশ্চিত দুটি করে বাছুর জন্ম দেবে।

KJ Staff
KJ Staff
বাছুর

ব্যতিক্রম ছাড়া গাভী সাধারণত বছরে একটি বাছুর জন্ম দেয়কিন্তু এখন থেকে বছরে নিশ্চিত দুটি করে বাছুর জন্ম দেবেবাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকরাসাফল্য দেখিয়েছেন 

সম্প্রতি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেনগবেষকরাযার মাধ্যমে একটি গাভীর পেট থেকে প্রতি বছর দুটি বাছুর জন্মানো সম্ভব হবেইনভারট্রো অ্যামব্রায়ো প্রডাকশন বা আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকরাসাফল্য দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝেপ্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা 

গাভীর পেটে ভ্রূণ স্থাপন প্রযুক্তির মাধ্যমে দুটি বাছুর জন্ম দেয়া প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. গৌতম কুমার দেব জাগো নিউজকে জানান, চার বছরের টানা গবেষণার ফলে তারাসাফল্য অর্জন করেছেন 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে টেস্টটিউব বেবির আদলে বছরে একটি গাভী থেকেই পাওয়া যাবে ন্যূনতম ২০-২৫টি বাছুর, যা দেশের মাংস আর দুধের ঘাটতি পূরণে সক্ষম হবে। দেশের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মাংস ও দুধের চাহিদা। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকারি সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) নতুন নতুন গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

তিনি আরো বলেন, বিএলআরআই’র গবেষকরা প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সমস্যা চিহ্নিতকরণ, জাত উদ্ভাবন, খাদ্য ও পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে। পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা, প্রাণিজ উপকরণ ও পণ্যের মূল্যসংযোজন, খামারি ও উদ্যোক্তাদের পরামর্শ, সেবা ও শিল্পায়নে সহায়তার মাধ্যমে প্রাণিজ পুষ্টি সরবরাহ এবং মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। 

আরও পড়ুনঃ বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই লম্বা কানের ছাগল, ভাইরাল ছবি

বিএলআরআই’র মহাপরিচালক ড. তালুকদার নুরুন্নাহার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের লক্ষ্য লাগসই এ জীবপ্রযুক্তির উদ্ভাবন প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া, যা দেশের ক্রমবর্ধমান মাংস ও দুধের ঘাটতি মিটিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতকে সমৃদ্ধ করবে। 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এজন্য প্রয়োজন হবে কোনো দুধেল গাই বা উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গাভী। আমরা প্রথমে ওই গাভী থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করব। সেই ডিম্বাণু ল্যাবে পরিপক্ব, নিষিক্তকরণ এবং কালচার শেষে তা ভ্রূণে পরিণত করা হয়। 

সাতদিন ল্যাবে থাকার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা দুধ কম দেয় এমন গাভীর জরায়ুতে তা স্থাপন করা হয়। এভাবে নির্ধারিত সময়ে ভ্রূণ বেড়ে ওঠে। ১০ মাসের কম-বেশি সময়ের মধ্যে সেই গরু থেকে বাছুর পাওয়া যায়। 

তিনি বলেন, এভাবে আমরা একটি সুস্থ সবল ও উচ্চ উৎপাদনশীল গাভী থেকে বছরে ন্যূনতম ২০-২৫টি সুস্থ ডিম্বাণু দিয়ে তা সমসংখ্যক গাভীর গর্ভে স্থাপনের মাধ্যমে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গবাদিপশুর সংখ্যা বাড়াতে পারি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতিতে বাছুর উৎপাদনের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও বহু আগে থেকে এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের প্রাণিসম্পদের বিস্তার ঘটিয়েছে। সরকার তো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমেও প্রাণিসম্পদের সম্প্রসারণ করছে। উচ্চ উৎপাদনশীল ষাঁড় থেকে ‘বীজ’ সংগ্রহ করে তা থেকেও কৃত্রিম প্রজনন করা হচ্ছে। 

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে মানুষ যেমন ছেলেসন্তান প্রত্যাশা করে, তেমনি খামারিরা প্রত্যাশা করেন বকনা (মেয়ে) বাছুর। 

বকনা বাছুর জন্ম নেবেই এটা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, অবশ্যই সম্ভব। উন্নত দেশগুলোতে এটা হচ্ছে। তবে এখনো আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। তবে গবেষণা অব্যাহত আছে। আশা করছি দেশেই একদিন এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। 

আরও পড়ুনঃ কর্ণাটক গাধার খামার, ভারতে দ্বিতীয় স্থানে! আয় ১৭ লাখ

ড. গৌতম কুমার দেব জাগো নিউজকে আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষণাগারে ভ্রূণ উৎপাদন-পূর্বক গাভীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গত মার্চে দেশে প্রথমবারের মতো একটি গাভী থেকে দুটি বাছুর উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। 

তিনি বলেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য দাতা গাভী থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ এবং ভ্রুণ ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। বিএলআরআই ইতোমধ্যে উল্লেখিত প্রযুক্তির ওপর গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী বছরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিটি ব্যবহারের উপযোগী করার কার্যক্রম চলমান। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএলআরআই, প্রাণিসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন সমস্যা চিহ্নিত করে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী এ পর্যন্ত মোট ৫৬টি প্রযুক্তি ও ১৯টি প্যাকেজ উদ্ভাবন করেছে। এগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের কাছে সস্প্রসারণ করা হচ্ছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। 

Published On: 24 June 2022, 12:12 PM English Summary: From now on, cows will give birth to two calves in one or nine years

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters