অনেক সময় পশুপালকরা বেশি লাভের আশায় ব্যয়বহুল পশু ক্রয় করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণবশত দাম দিয়ে পশু কেনার পরেও তারা যদি বন্ধ্যা হয়ে যায়, তবে কৃষকদের উপর অর্থনৈতিক বোঝা বাড়ে বৈকি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের এখানে দুধের উত্পাদন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পায় বন্ধ্যাত্ব এবং প্রজননজনিত অসুস্থতার কারণে। সুতরাং, ভাল প্রজাতির বাছুর (Calf Care) পেতে হলে সঠিক সময়ে প্রজনন করাতে হবে এবং অবশ্যই তার আগে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
কেন বন্ধ্যাত্ব পশুর মধ্যে হয় -
মানুষের মতো প্রাণীদের বন্ধ্যাত্বের অনেক কারণ রয়েছে। কিছু কারণ সহজেই বোঝা যায়, কিন্তু কিছু কারণ খুবই জটিল হয়। চিকিৎসকদের মতে অনেক কারণেই পশুর বন্ধ্যাত্ব আসতে পারে। তবে অপুষ্টি, সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি, পরিচালনাগত ত্রুটি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মূলত প্রাণীদের বন্ধ্যাত্বের কারণ।
যৌন চক্র এবং বন্ধ্যাত্ব -
গরু এবং মহিষ –এর ১৮-২১ দিনের মধ্যে একবারে ১৮-২৪ ঘন্টা ধরে যৌনচক্র (অস্ট্রেস) থাকে। তবে মহিষের চক্রটি নীরব হওয়ায় কৃষকদের কাছে একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় পরিস্থিতিতে কৃষকদের সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ৪-৫ বার পশুগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কারণ উদ্দীপনা সম্পর্কে ভুল ধারণা, বন্ধ্যাত্বের মাত্রা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় কারণ। তবে এই সময়ে, আপনি যদি প্রাণীদের মধ্যে উদ্দীপনা না দেখেন, তবে তাদের পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রতিরোধ –
পশুর বন্ধ্যাত্বের সমস্যার একটি বড় কারণ হল সুষম আহারের অভাব। সুতরাং, প্রাণীদের বন্ধ্যাত্ব রোধ করতে হলে এ জাতীয় পরিস্থিতিতে তাদের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। খাবারে খনিজ ও ভিটামিনের পরিমাণও উন্নত হওয়া উচিত। সুষম খাদ্য গর্ভধারণের হার বাড়াতে সহায়তা করে, বন্ধ্যাত্বের সম্ভবনা হ্রাস করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর বাছুর পেতে সহায়তা করে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা (Feed) -
খাদ্য ব্যবস্থাপনার দিক থেকে এদের ভুট্টা, যব, জোয়ার, বাজরা, গম, ওটস, চিনাবাদাম, সরিষা, তিল, ফ্লেক্সসিড থেকে তৈরি করা সবুজ চারা, খড় থেকে তৈরি উপচার খাদ্য হিদাবে দেওয়া যেতে পারে। প্রাণীটিকে তার দেহের ওজন অনুযায়ী খাবার দেওয়া উচিৎ, তবে অবশ্যই ভারসাম্যযুক্ত খাবার দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Sole Fish Farming – এই পদ্ধতিতে শোল মাছের চাষ করে মৎস্য চাষীরা নিজেদের উপার্জন বৃদ্ধি করুন
সময়মতো ভ্যাকসিন –
বাছুরদের ৬ মাস বয়সে ব্রুসেলোসিস সহ প্রথম টিকা দেওয়া উচিত। তারপরে এক মাস পর ক্ষুরারোগ, গলার রোগ এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদান আবশ্যক। বাছুরের এক মাসের আগে শিং রোধন করবেন না। আরও একটি বিষয় মনে রাখবেন যে, প্রাণীটিকে অজ্ঞান না করে ইলেকট্রিক হিটার দিয়ে শিং রোধন করলে তা প্রাণীটির পক্ষে ভালো।
মনে রাখবেন -
উন্নত মানের পুষ্টির পাশাপাশি বাছুরের যত্নও গুরুত্বপূর্ণ।
পশুর বয়ঃসন্ধিতে ২৩০-২৫০ কেজি ওজন ও উন্নত স্বাস্থ্য প্রজনন এবং গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত।
আরও পড়ুন - Aquaponics - মাছ ও শাকসব্জি চাষ এখন গৃহকর্মেরই অঙ্গ
Share your comments