দুগ্ধ খামারের সাফল্য মূলত দুগ্ধ প্রাণীর যত্ন এবং পরিচালনার উপর নির্ভর করে। খামারের সমস্ত কাজকর্ম পরিকল্পনা এবং খুব সতর্কতার সাথে সম্পাদন করা উচিত। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে সঠিক মাত্রায় দুধ উৎপাদনে এবং প্রাণীর শারীরিক ক্ষমতা বজায় রাখতে প্রাণী খাদ্যও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। গ্রীষ্মের মরসুমে গৃহপালিত প্রাণীদের সবুজ ও সতেজ গোখাদ্য খাওয়ানো আবশ্যক, প্রাণীদেহে জল সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে প্রাণী কম ক্ষুধার্ত এবং অধিক তৃষ্ণার্ত বোধ করে। এর জন্য, গ্রীষ্মকালে দিনে অন্তত তিনবার পরিষ্কার জল দিতে হবে, এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া জলে স্বল্প পরিমাণে লবণ ও ময়দা দিলে তা আরও উপযুক্ত হবে, কারণ তা শুষ্ক আবহাওয়ায় পশুর শরীরে দীর্ঘ সময়ের জন্য জলের মাত্রা বজায় রাখে, যা তাদের জন্য উপকারী।
তাই পশুপালকদের গ্রীষ্মের মরসুমে সবুজ সতেজ খাদ্যের জন্য মার্চ- এপ্রিল মাসে মুগ, ভুট্টা, বরবটি ইত্যাদি বপন করতে হবে, যাতে গ্রীষ্মের মরসুমে পশুর জন্য সতেজ গো-খাদ্য পাওয়া যায়। যে সকল পশুপালকের নিজস্ব জমি নেই, তারা এই সময়ের আগে সবুজ ঘাস কেটে সংগ্রহ করা রাখতে পারেন। ঘাস প্রোটিন সমৃদ্ধ, হালকা এবং পুষ্টিকর। এছাড়া এই সময়ে অ্যামিনো পাওয়ার এবং গ্রো বি-প্লেক্স পশুর খাদ্যে মিশ্রিত করে দিলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট উপকারী। গ্রীষ্মকালে অধিক তাপমাত্রায় পশুরা অনেক সময় দুর্বল হয়ে পরে, তাদের হজম শক্তি এবং ক্ষুধা হ্রাস পায়। এই ক্ষেত্রে গ্রোলাইভ ফোর্ট খাওয়ালে তাদের খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ সঠিক থাকবে। কাঁচা এবং বাসি খাবার মোটেও প্রাণীদের খাওয়ানো উচিত নয়। পশুর খাওয়ার পর নিয়মিত তাদের খাদ্যের জায়গাটি ভিরাক্লিন দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।
মনে রাখা আবশ্যক যে, পানীয় জল ছায়ায় রাখতে হবে। প্রাণীদের দুগ্ধ দোহনের পরে, সম্ভব হলে তাদের ঠান্ডা জল খাওয়ানো উচিত। গরমে ৩-৪ বার পশুকে তাজা শীতল জল খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন ঠান্ডা জলে তাদের স্নান করানো বাঞ্ছনীয়। মহিষকে গরমে ৩-৪ বার এবং গরুকে কমপক্ষে ২ স্নান করানো উচিত।
খাদ্যের ক্ষেত্রে সতর্কতা –
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার যেমন: আটা, রুটি, ভাত ইত্যাদি প্রাণীদের খাওয়ানো উচিত নয়। প্রাণীদের সুষম ডায়েটে শস্য ও চারার অনুপাত ৪০:৬০ রাখা উচিত। এছাড়াও, এই সময়ে প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীদের দৈনিক ৫০-৬০ গ্রাম এবং ছোট বাচ্চাদের ১০-১৫ গ্রাম ইলেকট্রল দিলে খুবই ভালো হয়। গ্রীষ্মের মরসুমে জমিতে উত্পাদিত চারায় (পশুর খাদ্যে) অনেক সময় বিষাক্ত পদার্থ থাকতে পারে, যা প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকারক। সুতরাং, এই মরসুমে যদি বৃষ্টি না হয়, তবে আগে জমি ২-৩ বার জলে ভিজিয়ে নেওয়ার পরে তাদের চারা খাওয়ানো উচিৎ। এতে জমিতে কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকলে তা জলে ধুয়ে যাবে।
ম্যাস্টিটিস, ফুটরট, ব্ল্যাক কোয়ার্টার ইত্যাদির মতো রোগ থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য এই মরসুমে পশুদের অবশ্যই টিকা দিতে হবে, যাতে আগত বর্ষায় তাদের এই ধরণের সকল রোগ থেকে দূরে রাখা যায়।
গ্রীষ্মকালে পশুর আবাসস্থল পরিচালনা -
পশুর বসবাসের জন্য নির্মিত ঘরের ছাদে খড় রাখুন, যাতে ছাদ বেশি উত্তপ্ত না হতে পারে। পশুকে বেঁধে রাখলে ছায়াময় গাছের নীচে রাখুন। পশুর বসবাসকারী স্থানে গরম বাতাসের প্রবাহ সরাসরি এড়াতে কাঠের বস্তা বা ভেজা বস্তা রাখুন, যাতে পশুর বাসস্থান শীতল থাকে। একটি ঘরে বেশি প্রাণী বেঁধে রাখবেন না এবং রাতে খোলা জায়গায় প্রাণীদের রাখলে তা ভালো হয়। প্রাণীদের সরাসরি রৌদ্রক্ষেত্র থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধান দরজায় পাটের বস্তার একটি পর্দা লাগানো উচিত। পশুর আবাসস্থলের আশেপাশে ছায়াময় গাছের উপস্থিতি গবাদি পশুর তাপমাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে। গরুর ঘরের ছাদ যদি অ্যাসবেস্টর্স বা কংক্রিটের হয় তবে তার উপরে ৪-৬ ইঞ্চি পুরু ঘাসের প্যালেট লাগিয়ে রাখলে প্রাণীগুলি উত্তাপ থেকে অনেকটাই আরাম পাবে।
এই পদ্ধতিতে গৃহপালিত পশুর সঠিকভাবে যত্ন করা যায় এবং দুগ্ধ উত্পাদন বাড়ানো যায়। এতে কৃষকের অর্থনীতি অধিক শক্তিশালী হবে।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments