প্রসবকালীন অবহেলা কিংবা অসাবধানতা কখনো কখনো বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি করতে পারে । এতে বাছুর, এমকি গাভীর মৃত্যুও হতে পারে। তাই গাভী ও বাছুরের নিরাপদের কথা বিবেচনা করে ওই মুহূর্তে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। গাভীর বাচ্চা প্রসব হবে তখনই যখন ওলান বড় হবে, যোনিমুখ বেশ প্রশস্ত হয়ে ঝুলে পড়বে। সে সাথে নরম ও ফোলাভাব দেখাবে। এক ধরনের আঠালো পদার্থ বের হবে। গাভী বারবার ওঠাবসা করবে। এমন সময় গাভীর যোনিমুখে বাছুরের সামনের দু’পা দেখা যাবে। এ অবস্থায় খুবই সতর্কতার সাথে বাছুরকে আস্তে আস্তে বের করে আনতে হয়। আসুন জেনে নেয়া যাক- কীভাবে গাভী এবং বাছুরের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে, সেসব কথা।
যে স্থানে বাচ্চা প্রসব করানো হবে সেটি খোলামেলা এবং নিরিবিলি এমন জায়গায় হওয়া চাই । স্থানটিতে শুকনো খড়ের নরম বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তা হতে হবে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত। প্রসবের সময় শব্দ দ্বারা পরিবেশকে অশান্ত করা যাবে না। জরায়ুতে বাছুরের সামনের দু’পা এবং মাথার অবস্থান যদি সম্মুখভাগে না হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি অস্বাভাবিক প্রসব। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ভেটেরিনারি সার্জনের সাহায্য নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষ কারার আগে জেনে নিন কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয়
প্রসবের পরপরই একটি বালতিতে কুসুমগরম জলের সাথে দেড় কেজি পরিমাণ গমের ভুসি, আধা কেজি চিটাগুড়, আধা কেজি ভাতের মাড় এবং ৫০ গ্রাম লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে গাভীকে খেতে দিতে হবে। এ জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে গাভীর গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে সহায়তা করবে। এছাড়া কুসুমগরম জলে ঝোলাগুড় মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। প্রসবের পর জীবাণুনাশক ওষুধ পানিতে মিশিয়ে গাভীর পেছনের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গাভীর ফুলপড়া নিয়ে অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুল না পড়ে তাহলে অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। কারণ, যথাসময়ে না পড়লে তা পচে জরায়ুতে পুঁজ জমতে পারে। ফুল পড়ে গেলে মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। গাভীর ওলানে বেশি পরিমাণে দুধ থাকলে বার বার দোহন করতে হয়। তা না হলে ওলানপাকা রোগ হওয়ার আশংকা থাকবে।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাছুরকে প্রথমেই গাভীর গাঢ় লালচে বর্ণের শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এ ধরনের দুধকে কাঁচলা দুধও বলে। এ দুধ না খাওয়ালে ওলান শক্ত হয়ে প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই দুধের বাঁটসহ ওলান এবং গাভীর তলপেট কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা বাঞ্ছনীয়। লালচে রঙের এ দুধ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং রোগপ্রতিরোধক। সাধারণ দুধের চেয়ে ৩-৫ গুণ আমিষ থাকে। ক্যারোটিন আছে ৫-১০ গুণ। সে সাথে অন্যান্য ভিটামিনের পরিমাণও বেশি। বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যেমন: আয়রন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। শাল দুধ বাছুরের পরিপাকতন্ত্র ভালো রাখে। ফলে স্বাভাবিক মলত্যাগে সুবিধা হয়।
Share your comments