কৃষিজাগরন ডেস্কঃ একথা সকলের জানা যে আমাদের দেশে আমিষের অভাব অত্যন্ত প্রকট। মাছ,মাংস ,দুধ ও ডিম কোনটাই আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে পাই না। অতচ আমিষের প্রয়োজন সকলেরই। বিশেষ করে শিশুদের বুদ্ধি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমিষ অনিবার্য। হাঁস-মুরগীর ডিম থেকেই পর্যপ্ত পরিমানে পুষ্টি পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের মাটি,আবহাওয়া মুরগী পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।অল্প পরিশ্রমে অনায়াসে হাস-মুরগী পালন করা যায়।একটু যত্ন করলেই ছোটো আকারে খামার গড়ে তুলতে পারলে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে খুব সহজেই বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।ব্যবসায়িক ভাবে সফল হতে গেলে প্রথমেই বেছে নিতে হবে সঠিক জাতের মুরগি।
উন্নত জাতের মুরগী
আমাদের দেশি জাতের হাঁস-মুরগীর উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম।বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের হাঁস-মুরগীর উদ্ভব ঘটিয়েছে। এগুলো থেকে অধিক মাংস এবং ডিম পাওয়া যায়।এই মুরগীর পালন অধীক লাভজনক।আসুন কয়েকটি উন্নত জাতে মুরগী সম্পর্কে জেনে নিই।
আরও পড়ুনঃ Cattle hoof disease: জেনে নিন গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা
রেড আইল্যান্ড রেড
এই মুরগী বাংলাদেশে এবং পশ্চিম ভারতে বহুল পরিচিত। মাংস এবং ডিমের জন্য খুব বিখ্যাত। এটি একটি সংকর জাতের মুরগী।লাল পালক,মাথার দিকটা ঈষৎ কাল,লেজের পালক নীলাভ,চক্ষু লালচে ধরনের হয়।এই জাতের মুরগী ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এবং মোরগ ৩-৪ কেজি হয়ে থাকে। এরা বছরে কম বেশি ২০০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। ব্যবসার জন্য এই জাতের মুরগী খুবই ভাল পছন্দ।
হোয়াইট লেগ হর্ন
পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্রই বাণিজ্যিক ফার্মগুলিতে আমরা যে সাদা মুরগী দেখতে পাই সেগুলিই হল হোয়াইট লেগ হর্ণ।এছাড়া কালো,নীলাভ ও পীত বর্নের লেগহর্ন ও পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়ে থাকে। হোয়াইট লেগ হর্ন মুরগীর পা ছোট ও হলুদ বর্নের হয়। এরা খুব কম বয়সেই ডিম দিতে শুরু করে। এই জাতের মুরগীর ওজন ২.৫ থেকে সারে তিন কেজি পর্যন্ত হয়।বছরে বছরে ৩০০ টি ডিম এই জাতের মুরগী দিয়ে থাকে।আমাদের দেশে এই জাতের ব্রয়লারের চাষের প্রসার ঘটছে।
কিছু দেশীয় উন্নত জাতের মুরগী
চাটাগাঁ আচিল
অত্যন্ত রোগ প্রতিরোধকারী জাতের মুরগী চাটগাঁ আচিল। কালচে সাদা ও ফিকে এদের গায়ের রং।ঠোঁট ও পা হলুদ বর্ণের। আকারে বেশ বড় হয়।গলা লম্বা,কানের লতি ছোট হয়।এই মুরগী বছরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম দিয়ে থাকে।এদের শরীর মোটা ও মাংসল।
মুরগী পালন পদ্ধতি
বাসস্থান
সুস্থ মোরগ-মুরগী, আলো বাতাসযুক্ত সুন্দর পরিবেশ থেকে পাওয়াই সম্ভব। তাই মুরগীর সুন্দর বাসস্থান নির্বাচন আবশ্যক।মুরগীর ঘর উঁচু জায়গায় হওয়া বাঞ্ছনীয় যেন বৃষ্টির পর পানি জমে না থাকে অথবা বন্যার পানি না ঢুকে। স্যাতসেঁতে জায়গায় মুরগীর স্বাস্থ্য ভাল থাকে না।
মুরগীর ঘর
বিভিন্ন বয়সের মুরগীর জন্য বিভিন্ন আয়তনের জায়গার প্রয়োজন। মুক্ত অবস্থায় মুরগী পালন করলে রাতে থাকার জন্য মুরগী প্রতি ৩০-৪০ সে.মি. জায়গার প্রয়োজন। আবার বদ্ধ অবস্থায় মুরগী পালনের জন্য ১.২ থেকে ১.৫ বর্গ মিটার জায়গা প্রয়োজন। মুরগীর ঘরে প্রয়োজনীয় জানালা থাকা প্রয়োজন। ১৫০-২৫° সে. তাপমাত্রা উত্তম।
অবশ্য আমাদের দেশে এ তাপমাত্রা বছরের একটি বিশেষ সময়ে পাওয়া সম্ভব। ঘরের উপরে অধিক পাতাওয়ালা গাছ থাকলে ঘরে ঠাণ্ডা থাকে। তা না হলে অতিরিক্ত গরমের সময় মুরগীর ঘরের চালে জল ঢালতে হবে। মুরগীর ঘর সব সময় শুকনো রাখা প্রয়োজন। ঘরের মেঝেতে কাঠের গুড়া বা শুকনা খড়কুটা বিছিয়ে রাখতে হয়। এর ফলে মলমূত্র ত্যাগের পরও মুরগীর ঘর স্যাতসেঁতে হয় না। পাঁচ থেকে ছয় মাস পর পর মেঝের খড়কুটা পরিবর্তন করা আবশ্যক। ঘরের মেঝেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাই ছিটিয়ে দিলে ঘরে শুকনো থাকে। আবার সহজে পোকা ও রোগের আক্রমণ হয় না। মুরগীর ঘরে মধ্যে মধ্যে জীবণু নাশক স্প্রে করা প্রয়োজন।
Share your comments