কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রপুর্ণ জলাশয় আছে অনেক এবং এগুলি আমাদের সম্পদ। কেন্দ্রীয় জল মন্ত্রকের সমীক্ষায় জানা যায় সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যেই আছে সব চেয়ে বেশি পুকুর, খাল, বিল, নদ-নদী ইত্যাদি। ব্যক্তিগত মালিকানায় যে সমস্ত জলাশয় এখানে আছে তাদের বেশীরভাগেই দীর্ঘ দিন ধরে মাছ চাষ হয়ে আসছে হয়ত বা অনেকগুলিতেই চিরাচরিত প্রথায় চলে আসছে: সে যাই হোক না কেনো এই চাষের সব কাজ সাধারন ভাবে পুরুষেরাই করে আসছেন যদিও ধান চাষ বা অন্যান্য শস্য চাষে অনেক মহিলা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত আছেন বহু দিন ধরেই।
মাছ চাষ এদিক থেকে এতদিন কিছুটা ব্যতিক্রমী ছিল। মাছ চাষ তার প্রতিপালন ও সংক্রান্ত সহযোগী কাজে মহিলাদের তেমন দেখা যেত না। গত কয়েক বছর ধরে কিছুটা পট পরিবর্তণ হয়েছে তার একটি কারণ আমাদের রাজ্যের বহু গ্রাম থেকে অনেক পুরুষই বিভিন্ন জীবিকার খোঁজে এমনকি দূরের শহরেও চলে যাচ্ছেন। ফলে গ্রাম গুলিতে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকার সত্তেও চাষের বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্যে তরুণদের পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গ্রামীণ বিকাশে দ্রুততার ঘাটতি হচ্ছে আর আয় বৃদ্ধিতে তো বটেই।
আরও পড়ুনঃ সামাজিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণের অভিনব উদ্যোগ
এর মধ্যে আশার কথা রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণের সব জেলাগুলিতেই গত কয়েক বছরে প্রচুর মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে মূলত রাজ্যের সমবায়, পঞ্চয়েত ও গ্রামীণ উন্নয়নের তত্বাবধানে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য মত্স দপ্তর, ভারত সরকারের জাতীয় মত্স উন্নয়ন বোর্ড, সমস্ত জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান যেমন রামকৃষ্ণ মিশন লোক শিক্ষা পরিষদ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও বিভিন্ন অসরকারী / বেসরকারি সংগঠন যারা এই সব মহিলা স্বনির্ভর দলগুলিকে নিয়মিত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা, দির্ঘস্থায়ী মত্স পালনে ব্যবস্থাপনা, পরিকাঠামোগত প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা, উন্নত জাতের মত্স বীজের সংস্থান করে দেওয়া, ডিমপোনা উত্পাদন ও ক্রমে ধানীপোনার চাষ, চারাপোনার চাষ এবং সেই থেকে বিভন্ন বড় মাছ উত্পাদনে সদর্থক ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
আরও পড়ুনঃ কম খরচে ভাসমান বাক্সে কাঁকড়া পালন “বক্স ক্রাব টেকনোলজি”
আর এর ফলে এখন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে গ্রামের মহিলারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে হ্যাচারির যাবতীয় কাজ ডিম প্রস্ফুটন মাছের বিভিন্ন পর্যায়ের খাবার তৈরি করা ও নিষ্ঠাভরে পুকুরে তার নিয়মিত প্রয়োগ, মাছের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যা, চুন প্রয়োগ, দ্রবীভুত অক্সিজেন ও পিএইচ দেখে নেওয়া, আজোলা ও স্পিরুলিনা চাষ পদ্ধতি আত্মীকরণ ও এমনকি ডিজিটাল জ্ঞান ও স্মার্ট ফোনের সাবলীল ব্যবহার – এই সব কিছুতেই বেশ দক্ষতা অর্জন করে নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক মাছ চাষকে বিস্তৃত করে নিয়ে যেতে পেরেছেন। ফলে, গ্রামীণ স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের দিকটি প্রাধান্য পাচ্ছে যা স্বনির্ভরতার লক্ষে স্ব-সহায়ক সংগঠন পরিচালিত মত্স প্রকল্প গুলি অন্য যেকোনো রাজ্যের কাছে উদাহরণস্বরূপ হতে পারে কারণ এর মধ্যে আমাদের সমাজের সব সম্পদের নারী পুরুষের সমান অংশ গ্রহনের বিষয়টি এর সাথে জুড়ে আছে।
ঊর্ণা ব্যানার্জী* ও প্রতাপ মুখোপাধ্যায় **
* প্রাক্তনী আলাগাপ্পা বিশ্ববিদ্যালয়, তামিল নাডু
** অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী, আইসিএআর – সিআইএফএ (ICAR-CIFA), ভুবনেশ্বর
Share your comments