ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালনও এ দেশে এক অন্যতম আয়ের উৎস এবং জনপ্রিয় ব্যবসা রূপে প্রচলিত। ভারতে দুধের ব্যবসা অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায়, গরু-মহিষ পালন (Cattle Farming) অত্যন্ত লাভের কারণ হিসাবে ধরা হয়। বাংলায় গরুর সঙ্গে সমান তালে মহিষও পালন করা হয়। দুধ দেওয়ার দিক থেকে, গরুর পরেই মহিষের অবস্থান।
ভারতে মুররা, গোদাবরী, এবং মেহসানা এই তিন প্রজাতিই দুধ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত হলেও আরও কয়েকটি প্রজাতির বেশ চাহিদা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন জাতের মহিষ দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য সেরা।
মহিষের জাত (Buffalo breed) -
ভারতে মুররা, গোদাবরী, এবং মেহসানা এই তিন প্রজাতি ছাড়াও, জাফরাবাদি, নীল রবি, টোডা, ভাদোয়ারি মহিষের জাতিগুলিও সমগ্র দেশ জুড়ে জনপ্রিয়।
১) মুররা প্রজাতির মহিষ দুধ প্রচুর পরিমাণে দেয়। গোটা বিশ্ব জুড়ে এই মহিষের চাহিদা রয়েছে।
২) গোদাবরী জাতের মহিষ উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পালন করা হয়। আগ্রা, মথুরায় প্রচুর পরিমাণে এই প্রজাতির মহিষের পালন করা হয়। এই মহিষের দুধ প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকায় শরীরের পক্ষে এই দুধ খুবই স্বাস্থ্যকর।
৩) গুজরাট রাজ্যে মেহসানা মহিষ প্রচুর পরিমাণে পালিত হয়। ১২০০-১৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন এই মহিষের পক্ষে কোনও ব্যাপারই নয়।
৪) জাফরাবাদি: এই মহিষ গুজরাটের, কুচ এবং জামনগর জেলায় অধিক পরিমাণে পালন করা হয়। এই জাতের মহিষ, দেশের মধ্যে সবথেকে ভারী ওজনের হওয়ায় এর খ্যাতি গোটা বিশ্ব জুড়ে। এই মহিষ গড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ লিটার দুধ দিতে পারে। দুধ উৎপাদন ছাড়াও এই মহিষ, হলকর্ষণ ও যানচলাচলের মাধ্যম হিসাবেও পরিচিত।
৫) নীল রবি: পাঞ্জাবে এই জাতের মহিষের প্রচুর পরিমাণে দেখা মেলে। কম করে এই মহিষ গড়ে ১৫০০ থেকে ১৮৫০ লিটার দুধ উৎপাদন করতে পারে। এই জাতের মহিষগুলি প্রচুর কাজ করতে পারে।
৬) টোডা: দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতমালায় এই মহিষগুলির দেখা মেলে। এদের দুধে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে। এই মহিষ গড়ে ৫০০ কেজি দুধ উৎপাদন করতে পারে। স্বভাবে শান্ত মহিষের এই জাতগুলির ধূসর বর্ণের হয়।
৭) ভাদোয়ারি- এই জাতের মহিষগুলিকে উত্তরপ্রদেশের আগ্রা ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে লক্ষ্য করা যায়। মোটামুটি আকারের এই মহিষ গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ লিটার দুধ দিতে পারে।
আরও পড়ুন - Bel Flower Farming – জেনে নিন বিশেষ পদ্ধতিতে বেল ফুলের চাষ ও পরিচর্যা পদ্ধতি
মহিষ পালনের উপযোগী স্থান :
সবসময় পরিষ্কার জায়গায় মহিষ পালন করা উচিত। মহিষ যেখানে থাকবে সেখানে যেন কড়া রোদ প্রবেশ না করতে পারে। মহিষের থাকার জায়গার মেঝে যেন পিচ্ছিল না হয়। পালন স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মহিষ পালনে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয় (Feed Management):
মহিষ ও গরু উভয়েরই জন্য পরিষ্কার পানীয় জল দেওয়া দরকার। মহিষ পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেলে এবং সঠিক পরিমাণে খাবার পেলে অতিরিক্ত দুধ দিতে পারবে। মহিষের খাবারে সরিষার খোল তো থাকবেই, সাথে তাতে যেন যথেষ্ট পরিমাণে শস্য থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। মহিষের খাবারে চিনাবাদামের খোল অথবা তুলোবীজের খোলও দেওয়া যেতে পারে।
Share your comments