সাধারণত, গলদা চিংড়ি স্বাদু জল ও হালকা লবণযুক্ত জলে ভালোভাবে চাষ করা যায়।গলদা চিংড়ি অত্যন্ত লোভনীয় এক খাবার। মাছ-বাজারে এই মাছের চাহিদা অন্যান্য মাছের তুলনায় অনেক বেশি| ক্রেতাদের লাইন পরে যায় চিংড়ি কিনতে| তাই, কৃষকদের চিংড়ি চাষে আর্থিক উন্নতিও ঘটে | প্রাকৃতিক পরিবেশে গলদা চিংড়ি স্বাদু জল এবং ঈষৎ লবণাক্ত জলে পাওয়া যায়। তবে নদীর উঁচু অংশে যেখানে জোয়ার-ভাটার তারতম্য বেশি সেখানে এরা অবস্থান করতে বেশি পছন্দ করে।
গলদা চিংড়ি পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য সম্পদ। দেশের প্রায় সকল এলাকার স্বাদুপানির জলাশয় গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে গলদা চিংড়ির। তাই এর চাষ যথেষ্ট লাভজনক।
গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুর কিভাবে তৈরি করব?
অন্যান্য মাছের মতো গলদা চিংড়ি চাষের পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। কোন অবস্থাতেই পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা জমতে দেওয়া যাবেনা। পুকুর প্রস্তুতির সময়ে শতকে ১-২ কেজি চুন দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের জন্য পুকুরের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পুকুর প্রস্তুতির শুরুতে অল্প জল থাকা অবস্থায় রেটেনন দিয়ে রাক্ষুসে মাছ সহ যাবতীয় মাছ নিধন করতে হবে। মজুদ পুকুরে ৪-৫ ফিট জল রাখা প্রয়োজনীয়। জলের গভীরতা বেশি হলে অক্সিজেন স্বল্পতায় দেখা দেবে। অন্যদিকে জলের গভীরতা কম হলে জল গরম হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বোয়াল মাছ চাষ কি লাভজনক? শিখবেন নাকি বোয়াল মাছের চাষ পদ্ধতি
গলদা চিংড়ির পোনা তৈরির কৌশল এবং খাদ্য
প্রাকৃতিক উৎস হিসাবে নদী এবং সাগরের মোহনা থেকে গলদার পোনা সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া, হ্যাচারিতে উৎপাদিত গলদার রেনু ও পাওয়া যায়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মার্চ-এপ্রিল মাসে প্রথম রেনু পাওয়া যায় এবং বছরের শেষ দিক সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত গলদা রেনু পাওয়া যায়। সপ্তাহে প্রতিদিন ভোরে রেডি ফিড এবং সন্ধ্যায় ২ দিন সয়াবিন, ৩ দিন ডাবরি ডাল,ও ২ দিন ভুট্টা/গম সকালে ভিজিয়ে সন্ধ্যায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে রেডি ফিড ভিন্ন অন্য খাবার ব্যবহার না করাই ভালো। বাণিজ্যিকভাবে ও বড় আয়তনের গলদা চাষের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ভালো কোম্পানির রেডি চিংড়ির ফিড ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
আরও পড়ুনঃ কোন জাতের ছাগল পালনে লাভ বেশি? কৃষি জাগরনের মতে তিনটি সেরা জাত
চিংড়ি পুকুরে মজুদ করার পর চিংড়ির ওজনের ৩-৫% খাদ্য সন্ধ্যায় ও ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। মোট খাবারকে ৪ ভাগ করে, এর ৩ ভাগ সন্ধ্যায় ও ১ ভাগ ভোর রাতে প্রয়োগ করতে হবে। শতকে ২০০ গ্রাম ডিএপি স্যার গুলে ছিটিয়ে দিলে খোলস বদলানোর জন্য সুবিধা হয়। খাবার খেলো কি-না তা পরীক্ষার জন্য সপ্তাহে ১ দিন ট্রেতে খাবার দিতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা পর ট্রে তুলে দেখতে হবে ট্রে-তে খাবার অবশিষ্ট আছে কিনা।
গলদা চিংড়ির পরিচর্যা
প্রতি ১৫ দিন পর চিংড়ির পুকুরে জাল টেনে চিংড়ি তুলে পা ভেঙে দিতে হয়। পা ভেঙে দেয়ার ফলে অন্য চিংড়ি আক্রমণ বা খাওয়া থেকে রক্ষা পায় এবং চিংড়ির বৃদ্ধি বেশি হয় | চিংড়ির পুকুরে দ্রবীভূত অক্সিজেন এর মাত্রা কমপক্ষে ৫ মি.গ্রা./লিটার রাখতে হবে। জলে অক্সিজেন এর মাত্রা কম হলে বা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে এবং পুকুর পাড় নিচু হলে চিংড়ি হেঁটে পুকুরের বাইরে চলে যেতে পারে।প্রতি ১৫ দিন পর পর চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খাবারের পরিমাণ পুন:নির্ধারণ করতে হবে। পুকুরে নেট দিয়ে ঘিরে রাখতে হবে যাতে সাপ, ব্যাঙ কিছু প্রবেশ করতে না পারে |
Share your comments