কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। এই উৎপাদনের মধ্যে সমুদ্র থেকে আহরন করা হয় ৪৫% এবং অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে চাষ করে উৎপাদন করা হয় ৫৫%। এই অভ্যন্তরীণ মাছের উৎপাদনকে কীভাবে বাড়ানো সম্ভব তা নিয়ে আমরা আরো একটি পদ্ধতির সম্পর্কে আলোচনা করব।
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় বহু পুকুর অব্যবহৃত ও অবহেলিত অবস্থায় কচুরিপানা বা ডোবাপানা হিসেবে পতিত পড়ে আছে।এই সমস্ত পুকুরগুলো যদি আমরা মাছ চাষের উপযোগী করে তুলতে পারি তাহলে গ্রামের মানুষদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করা আরো সহজ হয়ে যাবে। আমাদেরই দেখা পুরনো পুকুরগুলোতে একসময় মাছের ফলন বেশ ভালোই হতো। বতর্মানে সেগুলো মালিকানার জটিলতা,জলনিকাশীর সমস্যা বা মাছ চাষের প্রতি অবহেলা এবং কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব প্রভৃতি কারণে আমাদের ওই পুকুরগুলো ক্রমশ মাছ চাষের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে।, বরং গৃহস্থ বর্জ্য ফেলার জায়গায় পরিনত হয়ে উঠেছে।এই কাজে বহু মানুষ পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে বিশেষ করে একশ্রেনীর মানুষ যারা প্রোমোটারী ব্যাবসা করে,তারা চায় ওই পুকুরগুলোকে বন্ধ করে অট্টালিকা বানাতে।
আরও পড়ুনঃ মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভরসা পুরনো পুকুরই -প্রথম পর্ব
কেন করব?
আমরা সকলে সহজলভ্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের উৎস হিসেবে মূলত মাছকেই প্রানীজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। আর সেই দিকটা চিন্তা করে আমারা যদি প্রতিটি পুকুর যেখানে প্রায় সারাবছরই জল থাকে সেখান থেকে বছরে গড়ে বিঘাপ্রতি ১০০০ কেজি মাছ উৎপাদন করতে পারি তাহলে আমাদের বাড়তি আয়ের সম্ভাবনা থাকে । এবং বাজার থেকে আমরা যে মাছ কিনে খাই তার কিছু পরিমাণ মাছের চাহিদা বাড়ির পুকুর থেকে মেটানো সম্ভব হবে। তাছাড়া এই পুরনো পুকুরগুলোতে আমাদের অসংখ্য দেশীয় মাছ আছে যেমন - শিঙ্গি,মাগুর কি,পাঙ্কাল,ট্যাংরা প্রভৃতি মাছের চাষ ভালোই হয়।
আরও পড়ুনঃ মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভরসা পুরনো পুকুরই - দ্বিতীয় পর্ব
না করলে আমাদের কী ক্ষতি?
খুব সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, পুকুরগুলোতে যদি আমরা মাছ চাষ না করি তাহলে ওইখান থেকে আমাদের কোন আয় বা অর্থ উপার্জন হবে না। তবে আমারা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করি তাহলে দেখা যাবে, সূর্যালোককে কাজে লাগিয়ে পুকুরে উপস্থিত উদ্ভিদকনা গুলো সালোকসংশ্লেষ করে থাকে।এই উদ্ভিদকনা গুলোকে মাছ তার খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে তারপর সেই মাছকে আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে সূর্যালোকে উপস্থিত শক্তি ও ভিটামিন আমাদের দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। যদি আমরা মাছ চাষ না করি তাহলে এই,সূর্যালোক থেকে প্রাপ্ত বিশাল পরিমাণ শক্তি ও ভিটামিন আমাদের খাদ্যশৃঙ্খল থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে,তাই পুকুরগুলোকে সংস্কার করে মাছ চাষ করা একান্তই প্রয়োজন।
ডঃ প্রতাপ মুখ্যোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী, আই.সি.এ.আর., সি.আই.এফ.এ., ভুবনেশ্বর।
সুমন মাইতি, স্নাতকোত্তর, মৎস্য বিজ্ঞান ,মেদনাপুর সিটি কলেজ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
Share your comments