প্রথম পর্বের পর
কী ভাবে করব?
প্রথমত পুকুরগুলোর ব্যাহিক সমস্যা সমাধান করতে হবে। তারপর মাছ চাষের প্রস্তুতি নিতে হবে।
১) যেসব পুকুরগুলো একাধিক মালিকানা অবস্থায় আছে সে গুলোকে সঠিক মালিকানা অর্থাৎ এককভাবে বা সংঘ্যবদ্ধভাবে লীজ নির্ধারণ করতে হবে।
২) জলনিকাশীযুক্ত পুকুরগুলোকে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা। এই সমাধান নিজেদের দ্বারা সম্ভব না হলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাড়ায় সমাধান প্রকল্পের মাধ্যমে পঞ্চায়েত-এর সাহায্যে সমাধান করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পুরনো পুকুর ই পারে অভ্যন্তরীণ মাছের উৎপাদন বাড়াতে-পর্ব এক
৩) মাছ চাষের প্রস্তুতির জন্য প্রথমত পুকুরগুলোতে কচুরিপানা বা যাবতীয় ক্ষতিকর নোংরা বস্তুগুলোকে পরিষ্কার করে তুলে ফেলে জৈব সারে রূপান্তরিত করতে পারলে সেগুলোকেই আমরা চাষের জমিতে অথবা পরবর্তীকালে পুকুরের পাড়ে শাকসব্জি ফলানোর কাজে ব্যবহার করতে পারি।
৪) তারপর জল শুকিয়ে যদি মাছ থাকে সেগুলোকে ধরে ফেলতে হবে।তার কিছুদিন পর উপরে নরমপাঁকটিকে পাড় বাঁধানোর কাজে লাগিয়ে দিতে হবে।
৫) পুকুর পাড়ে অবস্থিত গাছের ডালগুলোকে এবং ঝোপগুলোকে পরিষ্কার করে রাখতে হবে যাতে সূর্যের আলো সহজেই পুকুরের জলে পড়তে পারে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে "জলেতে ভোরের রোদের কিরণ না লাগালে মাছের মরণ। রোদের কিরণ যেমন যায় মাছের খাবার তেমন পায়"
৬) এরপর পনেরো থেকে কুড়ি দিন টানা রোদ লাগিয়ে পুকুরের তলাটিকে একটু শক্ত করে নিতে হবে । তবে শক্ত করার আগে যদি সম্ভব হয় মৌহাখোর বিঘা প্রতি ৪০ কেজি হিসাবে প্রয়োগ করতে পারলে খুবই ভালো হয়। এতে মাছ চাষের ক্ষতিকর জীবাণুগুলো দূরীভূত হয়। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে "মহুয়া খইল এ দই এর উপকার আদিতে বিষ, অন্তে সার"।
আরও পড়ুনঃ এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আপেল, একটি আপেলের দাম ৫০০ টাকা
৭) এরপর বিঘাপ্রতি ২০ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে পারলে জল ক্ষারীয় থাকবে যা মাছ চাষের পক্ষে সহায়ক। তবে মনে রাখতে হবে চুন প্রয়োগের সময় পাঁকটি যেন হালকা নরম থাকে।
৮) আমরা যদি এই কাজটি ফাল্গুন মাসের আগে শুরু করে দিতে পারি তাহলে মাছ চাষের জন্য ফাল্গুন থেকে আশ্বীন/কার্তিক মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পাবো, ঠিক তেমনি শীতকালকেও এড়ানো যাবে।
৯) এরপর মাটি পুরোপুরি ভাবে শুকিয়ে গেলে ওই পুকুরে পরিষ্কার জল ঢোকাতে হবে। তার দুদিন পর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ৫ পিপিএম হারে ওই পুকুরের জলে প্রয়োগ করতে হবে। তবে এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি ১০ লিটারের বালতি নিয়ে তাতে দুটি আঙ্গুলের চিমটিতে যতটা ওঠে ঠিক ততটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট নিয়ে জলে গুলিয়ে পুকুরের চারিদিকে প্রয়োগ করতে হবে।
১০) জল প্রস্তুতির তিনদিন পর যাদের ছোট পুকুর তারা ডিমপোনা থেকে ধানীপোনা এবং যাদের মাঝারিপুকুর তারা ধানীপোনা থেকে চারাপোনা এবং যাদের বড় পুকুর তারা চারাপোনা থেকে বড়মাছ এবং যাদের সব রকম পুকুরই বিদ্যমান তারা সব রকম মাছ চাষ করতে পারে।
ডঃ প্রতাপ মুখ্যোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী, আই.সি.এ.আর., সি.আই.এফ.এ., ভুবনেশ্বর।
সুমন মাইতি, স্নাতকোত্তর, মৎস্য বিজ্ঞান ,মেদনাপুর সিটি কলেজ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
Share your comments