গৃহপালিত প্রাণীর পরজীবি ঘটিত রোগ এবং তার প্রতিকার

গৃহপালিত প্রাণীর সিংহ ভাগই পালিত হয় অর্থনৈতিক প্রয়োজনে।পশুপালনের অর্থনৈতিক সাফল্য প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল

KJ Staff
KJ Staff
Photo: Vanischenu

কৃষিজাগরন ডেস্কঃ গৃহপালিত প্রাণীর সিংহ ভাগই পালিত হয় অর্থনৈতিক প্রয়োজনে।পশুপালনের অর্থনৈতিক সাফল্য প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল প্রথমত প্রজাতিগত গুণমানের উৎকর্ষতা, দ্বিতীয়ত পর্যাপ্ত পুষ্টির উপলব্ধতা এবং তৃতীয়ত রোগ ব্যাধি থেকে সুরক্ষা। নানাবিধ রোগ ব্যাধির মধ্যে গৃহপালিত পশুতে পরজীবী ঘটিত রোগের কারণে ক্ষতির মাত্রা সর্বাধিক। পরজীবী সংক্রমণের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি বহুমাত্রিক। পরজীবী প্রাণীর পুষ্টিতে ভাগ বসিয়ে মূল্যবান পুষ্টি উপাদানের অপচয় ঘটায়, শারীর বৃত্তিয় নানা ক্রিয়ায় বিপর্যয় ঘটিয়ে উৎপাদনে ব্যপক হ্রাস ঘটায়, এবং পরজীবী সংক্রমণের পরিণাম স্বরূপ উদ্ভুত সামগ্রিক অপুষ্টির করণে বিলম্বিত যৌবন প্রাপ্তি বা দুর্বল প্রজনন ক্ষমতা খামারের অনুৎপাদক বোঝার পরিমান বাড়ায়।

ভারতে সংগঠিত বড় পশু খামারের সংখ্যা অতি  সীমিত। দেশের বিপুল পশু সম্পদের বেশীর ভাগই আছে ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষক অথবা কৃষি শ্রমিকদের হাতে। পরজীবী ঘটিত রোগ, এর সংক্রমণ পদ্ধতি, এবং রোগের পরিণামে অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাবে ভারতে প্রতি বৎসর বিপুল পরিমান সম্পদের অপচয় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে চলেছে। ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট যেমন নিম্ন ভূমিরূপ, উচ্চ আর্দ্রতা ও উষ্ণতার কারণে পরজীবী ঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশী।

আরও পড়ুনঃ মোহনায় মাছ চাষে গ্রামীণ বা উপকূলবর্তী মহিলাদের ভূমিকা

গবাদি পশুর পরজীবী গুলি সাধারণত দুই ধরণের। কিছু পরজীবী শরীরের বহির্ভাগে লোম এবং ত্বককে আশ্রয় করে, এগুলি ইনসেক্ট বা আর্থ্রোপড বর্গের। এগুলিকে বহিঃ পরজীবী বা এক্টোপ্যারাসাইট (Ectoparasite) বলা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় শ্রেণীর পরজীবী গুলি প্লাটিহেলমিন্থস বা (Platihelminths) ও নেমাটোডা (Nematoda) বর্গের চাম এবং শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গ আশ্রয় করে। এগুলিকে বলা হয় এণ্ডোপ্যারাসাইট বা হেলমিন্থস (Helminths)।

বহিঃপরজীবী

বহিঃপরজীবী গুলি ইনসেক্ট বা আর্থোপড় পর্বের অমেরুদণ্ডি। এ গুলির মধ্যে বিভিন্ন প্রকার মাছি যেমন বট ফ্লাই (Bot fly), ওয়ার্বল ফ্লাই, ব্লো ফ্লাই, স্ক্র ওয়ার্ম ফ্লাই ফেস ফ্লাই অন্তর্ভুক্ত । এই সব মাছির লার্ভা শরীরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিভিন্ন কোষকলার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। লার্ভার উৎপাদিত টক্সিন পশুদেহে টক্সিমিয়া ঘটায়। লার্ভা থেকে উৎপন্ন ক্ষতে অন্য জীবানু সংক্রমণ ঘটলে বিষাক্ত ক্ষত উৎপন্ন হয় ।

লাইস - এ গুলি আশ্রয় প্রাণীর প্রজাতি নিদৃষ্ট বাইটিং, পরজীবী। এদের সম্পূর্ণ জীবন চক্র আশ্রয়কারী পশুদেহেই সম্পন্ন হয়। দুই ধরণের লাইস দেখা যায়। যেমন বোভিকোলা (Bovicola sp.) । এ গুলি ত্বকের উপরি ভাগে মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে। সাকিং লাইস, যেমন হিমাটোপিনাস ( Hematopinus sp. ) এ গুলি ত্বকের অভ্যন্তর থেকে রক্ত ও লিম্ফ রস শোষন করে। লাইস চুলকানির সৃষ্টি করে। অস্থির পশুর খাদ্য গ্রহন ও উৎপাদন হ্রাস পায়। নিজেই দেহের আক্রান্ত স্থান কামড়ায় বা ঘর্ষণের চেষ্টা করে। ক্রমাগত ঘর্ষণের ফলে পশম ও চামড়ার গুনগত মান নষ্ট হয়। মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামণে রক্তাল্পতা ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।

আরও পড়ুনঃ মোহনায় মাছ চাষের সংক্ষিপ্ত প্রণালী

মাইটস  - অতিক্ষুদ্র আর্থোপড় পর্বের কীট বিশেষ। স্ক্যাবিস (Scabis) বা মেঞ্জ (Mange) নামে চর্মরোগ সৃষ্টি করে । তিন প্রকারে মাইটস দেখা যায় -

  1. সার্কপটেস – বারোইং বা ছিদ্রকারী  মাইটস। পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ মাইটস ত্বকের উপরি ভাগে করনুয়ামের (Corneum) কোষ খেয়ে থাকে। স্ত্রী মাইট ত্বকের মধ্যে গভীর ট্যানেল তৈরী করে এপিডারমিসে C পৌঁছে ডিম পাড়ে। লার্ভা বেরিয়ে এসে অন্য পশুতে ( সংক্রমণ ছড়ায় বা নুতন ট্যানেল তৈরী করে পূর্ণতা প্রাপ্ত থা হয়। অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে ত্বকের হাইপার কেরাটোসিস বা প্যারাকেরাটোসিস দেখা যায়। ত্বক পুরু, খসখসে, ভাঁজ যুক্ত ও লোম শূণ্য হয়ে পড়ে।

  2.  সরপটিক মেঞ্জ – এরা টিসু ফ্লুইড শোষণ করে বেঁচে থাকে। ত্বকের উপরিভাগে সেরাম ও লিফ জমে হলুদ পোঁপড়া বা মাড়ি সৃষ্টি করে। ভেড়াতে পশমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। চাড়া পুরু ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়। অতিরিক্ত সংক্রমণে মৃত্যুও হতে পারে।

  3.  কোরিওপটেস - পোঁপড়া ভোজি মাইট। ত্বকের উপরিভাগে স্ক্যাব বা পোঁপড়ার মধ্যে থাকে। ত্বকে প্রবেশ করে না। কিন্তু চুলকানোর জন্য ধর্ষণের ফলে ডার্মাটাইটিস হয়।

ডেমোডেকটিক মেঞ্জ (Demodex sp) – ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে লোম কুপে বাসা বাঁধে। এক একটা লোম কুপে কুড়িটা পর্যন্ত পরজীবী পাওয়া যেতে পারে। সেবেসিয়াস গ্ল্যাণ্ড আক্রান্ত হলে সেবেসিয়াস সিস্ট তৈরী হয় যা পরে পুঁজ ভরা ফুসকুড়িতে পরিণত হয় ।

বর্তমানে বাজারে নানা রকম এক্টোপ্যারাসাইটিসাইড ঔষধ উপলব্ধ । প্রচলিত বিভিন্ন এক্টোপ্যারাসাইটিসাইড গুলি হল অরগানোক্লোরিণ , অরগানো ফস্কেট , ফর্মামিডিন , প্রাকৃতিক পাইরোথ্রিন সিনথেটিক পাইরিথ্রয়েড ,ম্যাক্রোসাইক্লিক ল্যাকটোন (Macrocyclic Lactones) ইত্যাদি। পরজীবীর ধরণ , ৯ সংক্রমণের মাত্রা এবং খামারে রোগের বিস্তার ও ঔষধের ধরণের উপর নির্ভর করে ঔষধ গুলি ডিপ (Dip), স্প্রে , ডাস্টিং পাউডার , পোর অন (Pour on),স্পট অন (Spot on) অথবা প্যারেন্টেরাল রুটে অর্থাৎ ইঞ্জেকশন রূপে প্রয়োগ করা হয়। ঔষধ গুলির মধ্যে অরগানোক্লোরিণ (Organochlorine) এবং অরগানোফসফেট (Organophosphate) পশু ও ব্যবহারকারী উভয়ের পক্ষেই বিষাক্ত। ব্যবহার কালে বিশেষ সাবধানতার প্রয়োজন। ফরমামিডিন (Formamidin) কম্পাউণ্ড যেমন অ্যামিত্রাজ (Amitraz) তুলনামূলক নিরাপদ ও অধিক কার্যকর সাধারণত ডিপ রূপে ব্যবহৃত হয় । প্রাকৃতিক এক্টোপ্যারাসাইটিসাইড পাইরেথ্রিন (Pyrethrin)কিছু অ্যালকালয়েডের মিশ্রন পাইরেথ্রাম (Pyrethrum) থেকে উৎপন্ন যা চন্দ্রমল্লিকা ফুল থেকে পাওয়া যায়।

Published On: 26 May 2023, 04:39 PM English Summary: Parasitic diseases of domestic animals and their treatment

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters