টেকসই হাঁস-মুরগির খামার পাখিদের খামার ও জমির সাথে এমনভাবে সংহত করে যাতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পাখি, জমি, খামার এবং কৃষকের উন্নতি হয় | চারণভূমিতে হাঁস, মুরগি পালনের বহুল সুবিধা দেখা যায় | সাথে কৃষকদের লাভও হয় ভালো | এই পদ্ধতিতে পোল্ট্রী চাষে মাটির উর্বরতা বাড়ে এবং আগাছা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে হাঁস, মুরগি |
তৃণক্ষেত্রে হাঁস, মুরগি পালনের সুবিধা(Benefits of pastured poultry):
মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ করে:
হাঁস-মুরগি মাটিতে তাদের সার প্রয়োগ করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং তারা আগাছা এবং পোকামাকড়কে খেয়ে নিয়ে ফসলের কীটপতঙ্গ পরিচালনায় সহায়তা করে। এছাড়াও, পাখিগুলি পরজীবী সমস্যা নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য প্রাণিসম্পদ (যেমন গবাদি পশু) কে সাহায্য করে থাকে |
স্বল্প পুঁজিতে বহুল লাভ:
এই পদ্ধতিতে মূলধন কম লাগে এবং খুব সহজেই লাভ করা যায় | হাঁস, মুরগি খামারের খরচ, নানাবিধ সরঞ্জাম-র খরচ বেঁচে যায় | সর্বোপরি, একই জমিতে ফসলের সাথে হাঁস, মুরগি পালন করে উভয়ভাবে আয় বৃদ্ধি সম্ভব |
আরও পড়ুন -Khaki Campbell Duck Farming: অধিক অর্থ উপার্জনে পালন করা খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস
হাঁস, মুরগির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়:
এই ধরণের হাঁস, মুরগির ঘাস খায় যার মধ্যে ভিটামিন এ এবং ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যার পুষ্টিগুণ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এরা সাধারণত বদ্ধ খামারে না থেকে পর্যাপ্ত জায়গা, তাজা বাতাস, রোদ পায় এবং এদের খামারের পাখির চেয়ে ভাল শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে | তীব্র অসুস্থতার মুখোমুখি না হলে চারণভূমি পাখিদের কোনও হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। এই ধরণের হাঁস, মুরগিদের সুস্বাস্থ্যের সাথে সাথে, এদের ভক্ষণকারীদেরও স্বাস্থ্য ভালো থাকে |
কিভাবে চারণভূমিতে হাঁস, মুরগি পালন শুরু করা যায়(How to start)?
জাত:
আপনার চাহিদা অনুযায়ী প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে, কোন ধরণের হাঁস মুরগি পালন করা হয় লেয়ার না ব্রয়লার | মাংস ও ডিম্ উৎপাদনের দিক থেকে লক্ষ্য রেখে জাত নির্বাচন করতে হবে | প্রত্যেক জাতের ভিন্ন বৈশিষ্ট থাকে | আপনার মূলধনের ওপর ভিত্তি করে আপনাকে জাত নির্বাচন করতে হবে |
থাকার জায়গা:
কোনও সাধারণ অঞ্চল বাছাই করে শুরু করুন যেখানে বাড়ি এবং মুরগী স্থায়ীভাবে বাস করবে বা যার মধ্যে সে স্থানান্তরিত হবে। কোনও জায়গা বেছে নেওয়ার সময় বিবেচনা করুন:
শীতকাল হলে বাড়িটি দক্ষিণদিকে করুন |
উঁচু জমি বাছাই করতে হবে যেখানে জল না দাঁড়ায় |
ঘরের ভিতর প্রত্যেক পাখির জন্য ২.০-২.৫ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে |
খাদ্য(Food):
সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর মতো মুরগির জন্যও প্রোটিন, শর্করা, খনিজ এবং ভিটামিনগুলির সুষম খাদ্য প্রয়োজন। মুরগির বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা মোট খাবারের ১৬-২০% প্রয়োজন হয়। বেশিরভাগ খাবারে ভুট্টা, সয়াবিন এবং গম পাশাপাশি ভিটামিন এবং খনিজ পরিপূরক থাকে। মুরগির দাঁত না থাকায় হজমে গিজার্ড (ছোট্ট অন্ত্রের আগে অবস্থিত একটি অঙ্গ) সহায়তা করার জন্য তাদের কিছু প্রকার গ্রিট (ক্ষুদ্র পাথর বা ঝিনুকের গোলা) দরকার হয়।
চারণভূমির হাঁস, মুরগি আগাছা, শিম, ঘাস এবং কীটপতঙ্গ থেকে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি গ্রহণ করে। পাখিরা আসলে কতগুলি চারণভূমিভিত্তিক পুষ্টি পাচকে হজম করতে এবং একীভূত করতে পারে তা নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে। তারা উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বেশি ভিটামিন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির পাশাপাশি কম ফ্যাটযুক্ত উপাদান খুঁজে নেয় |
পরিচর্যা:
চারণ পোল্ট্রি সাধারণত রোগ এবং সংক্রমণের প্রতিরোধী হয়। স্বাস্থ্য এবং পরিচালনার সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হলো আবহাওয়া | পাখিদের ঠান্ডা, বৃষ্টি, তীব্র বাতাস এবং উত্তাপ থেকে রক্ষা করার জন্য চারণভূমির কাছাকাছি একটি ঘর থাকা অত্যন্ত জরুরি | কারণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে তাদের সাময়িক অসুবিধা হতে দেখা যায় | প্রতিদিন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে জল ও খাবারের পাত্র পরিষ্কার করতে হবে | তাদের থাকার জায়গারও প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে | তাদের বয়স অনুযায়ী ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে |
আরও পড়ুন -Hilsa Fish Farming: ইলিশ মাছ চাষ পদ্ধতির কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
Share your comments