ভারতে অনেকেই হাঁস পালন (Poultry Farming) করেন। আমাদের দেশে হাঁস চাষকেন্দ্রিক ব্যবসার সুবিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্বে এটি বেশীরভাগ বাড়িতে ডিমের জন্য লালন করা হত, তবে এখন এটি কর্মসংস্থানেরও মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাঁসের অনেক প্রজাতি রয়েছে। কিছু হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয়, কিছু ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত, কিছু প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এমনকি উভয় উদ্দেশ্যর জন্য ভাল কিছু হাঁসের প্রজাতি পাওয়া যায়। এদেরকে দ্বৈত হাঁসের প্রজাতি রূপে চিহ্নিত করা হয়।
মুরগীর চেয়ে হাঁসের রোগ কম হওয়ায় এখন অনেকেই পোলট্রি ব্যবসায় (Poultry Business) হাঁস পালনের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। হাঁস পালন করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত ঘর তৈরি করতে হবে।
হাঁসের ঘর তৈরির পদ্ধতি –
হাঁসের ঘর বানানোর জন্য বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য আপনি ইট দিয়েও হাঁসের জন্য ঘর তৈরি করে দিতে পারেন।
সঠিক নিয়মে হাঁস পালনের পদ্ধতি/কৌশল -
হাঁসের বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে সর্বদা কিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন বাচ্চা যেখানে থাকবে সেখানে যেন তাপমাত্রা সঠিক অনুপাতে বজায় থাকে। বাচ্চা ছাড়ার কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আগে ব্রুডারের তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। হাঁসের সঠিক নিয়মে প্রজননের জন্য হাঁসকে সময়মতো জলে স্থানান্তরিত করতে হবে ।
হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
হাঁস পালনে আলাদা কোন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন পড়ে না। গ্রামবাংলায় অনেকেই বাড়িতে হাঁস পালন করলে তাকে ভাত, খুদ, কুঁড়ো –ও খাদ্য রূপে দিয়ে থাকে। তবে বাজারে সহজলভ্য পশুখাদ্যের মিক্সচারই হাঁসের সাধারণ খাবার। এছাড়াও শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কেঁচো, শাপলা, পানা, ছোট মাছ ও নানা ধরনের কীটপতঙ্গ জলাশয় থেকে হাঁস খেয়ে থাকে। এছাড়া হাঁসকে সকাল ও বিকালে পরিমিত পরিমাণে দানাদার খাদ্যও দেওয়া যেতে পারে। তবে যে খাদ্যই দেওয়া হোক না কেন, পরিষ্কার পানীয় জল যেন সর্বদা হাঁসের ঘরে থাকে।
রোগের লক্ষণ -
-
হাঁস কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মারা যেতে পারে।
-
খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
-
ঘন ঘন জল খাওয়া।
-
ঠোঁটের রঙের পরিবর্তন হতে পারে।
-
হাঁসের পালক অবিন্যস্ত হয়ে যায়।
-
পাখনা বেশী ঝুলে যেতে পারে।
-
প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে হাঁসের স্বাভাবিকের চেয়ে কম ডিম দেওয়া।
-
কিছু রোগ সংক্রামিত হাঁস আলোর মধ্যে তাদের চোখ খুলতে পারে না এবং তারা আলো দেখলে ভয় পায়।
-
তরল পদার্থ তাদের নাক এবং মুখ থেকে প্রবাহিত হতে পারে।
-
জল তাদের চোখ থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হতে পারে।
-
হাঁসের পেট খারাপ হতে পারে।
-
মাথা, ঘাড় এবং হাঁসের শরীরে ঝাঁকুনি দেখা যেতে পারে।
-
পা এবং পাখনা অবশ হয়ে উঠতে পারে।
-
বুকের উপরে ভর করে বসে থাকে।
-
তারা এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
-
সংক্রামিত শিশু হাঁস মারা যেতে পারে।
হাঁসের রোগ প্রতিরোধ -
-
খামারের ভিতরে অবাঞ্ছিত অতিথি এবং পশু প্রবেশ বন্ধ করুন।
-
হাঁসের ঘর সর্বদা শুষ্ক, পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখুন।
-
রোগ প্রতিরোধের জন্য সময়মত হাঁসকে টিকা দিন।
-
মরশুমি রোগ সম্পর্কে আরো সতর্ক থাকুন।
-
সর্বদা পুষ্টিকর এবং তাজা খাদ্য দিন আর পরিষ্কার জল দিন।
-
রোগ সংক্রামিত হাঁসকে সুস্থ হাঁসের থেকে পৃথক রাখুন।
-
মাটির নীচে হাঁসের মৃতদেহ রাখুন বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলুন।
যদি খামারের মধ্যে রোগ হয় তবে তাড়াতাড়ি নিকটতম পশুচিকিত্সককে নিয়ে আসুন এবং যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করুন। সর্বদা ঠিক সময় হাঁসের রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রয়োগ করুন।
Share your comments