চাষবাসের পাশাপাশি পশুপালন (Animal rearing) আমাদের দেশের কৃষকদের আয়ের অন্যতম মাধ্যম। পশুপালন করেন তো অনেকেই, কিন্তু কীভাবে তা থেকে বেশী অর্থ উপার্জন করা যায়, সে সম্পর্কেই আজ আমরা আপনাদের তথ্য প্রদান করব।
কৃষকদের পশুপালনের ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য কয়েকটি সেরা পন্থা আমরা তালিকাবদ্ধ করেছি, যা আপনার পশুপালন পরিচালনাকে সহজ করে তোলে, যাতে আপনি আপনার গবাদি পশুর থেকে আরও ভাল লাভ পেতে পারেন -
১) সঠিক খাদ্য সরবরাহ (Proper feed supply) -
বিভিন্ন পরিপূরক উপকারী মাইক্রোবের বৃদ্ধি ঘটিয়ে প্রাণী স্বাস্থ্যের পাশাপাশি রুমেনের দুগ্ধ উত্পাদনক্ষমতারও উন্নতি সাধন করে। ট্রাইফোলিয়াম প্র্যাটেনস নামে একটি এনজাইমের জন্য রেড ক্লোভার বিখ্যাত, এটি আপনার প্রাণীসম্পদের খাদ্যতালিকায় প্রোটিন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। খাদ্যে ক্লোভারের উপস্থিতি দুধের উত্পাদন উন্নত করতে সহায়তা করে এবং পশুপাখির ক্ষুধাও বৃদ্ধি করে। টার ব্রাশ সাপ্লিমেন্ট প্রাণীসম্পদে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অ্যাসিডোসিস-এর মাত্রা এবং গ্রিনহাউস গ্যাসের মুক্তি হ্রাস করে। আজোলা ক্যারোলিনিয়ানা (পুকুর/জলাশয়ে উত্থিত একপ্রকার জলের ফার্ন) প্রাণীদের প্রোটিনের অভাবজনিত সমস্যা দূর করে প্রোটিন সরবরাহ করে। আপনার প্রাণীর উত্পাদন ক্ষমতা বাড়ানোর সেরা উপায় হল খাদ্যে পরিপূরক অন্তর্ভুক্ত করে তা রোজ খাওয়ানো।
২. পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ (Supply of nutritious food) -
সর্বদা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ খাদ্য নির্বাচন করুন, যাতে আপনার গবাদি পশুগুলি তাদের সর্বোত্তম উত্পাদন ক্ষমতা ধারণে সক্ষম হয়। স্বল্প পরিমাণে রেড মিট এবং খাদ্যের পরিবর্তনশীলতা - দুধ এবং মাংস উভয়েরই উত্পাদন সর্বাধিক করে তুলবে। প্রাণীদের মানব খাদ্য কম দিন এবং তাদের প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত খাদ্য খাওয়ানো উচিৎ, এতে তাদের সামগ্রিক পুষ্টি-সংশ্লেষ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটবে।
৩. প্রাণীসম্পদ প্রযুক্তি ব্যবহার (Use of livestock technology) -
প্রাণী স্বাস্থ্যের নির্ভুল পরীক্ষা করার সুবিধার্থে কয়েকটি প্রযুক্তি রয়েছে। ইমেজিং টুলস এবং লাইভস্টক স্কেলস পশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে তাদের লালনপালন এবং খাদ্যের ধরণ সম্পর্কে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নিতে কৃষকদের সহায়তা করে। এই স্বয়ংক্রিয় লাইভস্টক স্কেল দীর্ঘস্থায়ী, এর মূল্য সাধ্যের মধ্যে এবং এগুলি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কৃষককে সহায়তা করে। যেমন -
-
পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে
-
প্রজননের আগে তাদের সঠিক ওজন জানতে
-
খাদ্য সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে
-
তাদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে
৫. আবহাওয়া -
পশুর বসবাসের জন্য নির্মিত ঘরের ছাদে খড় রাখুন, যাতে ছাদ বেশি উত্তপ্ত না হতে পারে। পশুকে বেঁধে রাখলে ছায়াময় গাছের নীচে রাখুন। পশুর বসবাসকারী স্থানে গরম বাতাসের প্রবাহ সরাসরি এড়াতে কাঠের বস্তা বা ভেজা বস্তা রাখুন, যাতে পশুর বাসস্থান শীতল থাকে। একটি ঘরে বেশি প্রাণী বেঁধে রাখবেন না এবং রাতে খোলা জায়গায় প্রাণীদের রাখলে তা ভালো হয়। প্রাণীদের সরাসরি রৌদ্রক্ষেত্র থেকে রক্ষা করার জন্য প্রধান দরজায় পাটের বস্তার একটি পর্দা লাগানো উচিত। পশুর আবাসস্থলের আশেপাশে ছায়াময় গাছের উপস্থিতি গবাদি পশুর তাপমাত্রা কম রাখতে সহায়তা করে। গরুর ঘরের ছাদ যদি অ্যাসবেস্টর্স বা কংক্রিটের হয় তবে তার উপরে ৪-৬ ইঞ্চি পুরু ঘাসের প্যালেট লাগিয়ে রাখলে প্রাণীগুলি উত্তাপ থেকে অনেকটাই আরাম পাবে।
এই পদ্ধতিতে গৃহপালিত পশুর সঠিকভাবে যত্ন করা যায় এবং দুগ্ধ উত্পাদন বাড়ানো যায়। এতে কৃষকের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
আরও পড়ুন - আয় বৃদ্ধির জন্য কোন জাতের গো - পালন করবেন কৃষকবন্ধুরা?
৬) উপযুক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন -
বেশিরভাগ মানুষ জীবিকার জন্য প্রাণীসম্পদের উপর নির্ভরশীল। লাভের জন্য আপনার পালিত প্রাণীটির সঠিকভাবে পরিচর্যা করুন। তাদের সুষম খাদ্য ও পরিষ্কার জল দিন। সুষম খাদ্য দুগ্ধ উৎপাদন অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। তাদের বিশ্রাম নিতে দিন। কোন রোগ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো টীকা প্রদান করুন।
আরও পড়ুন - Sapota or Chiku Farming: আপনিও কি সবেদা চাষে ইচ্ছুক? জেনে নিন চাষের নিয়ম