কৃষিজাগরন ডেস্কঃ জল শুকিয়ে যদি মাছ থাকে সেগুলোকে ধরে ফেলতে হবে।তার কিছুদিন পর উপরে নরমপাঁকটিকে পাড় বাঁধানোর কাজে লাগিয়ে দিতে হবে।
৫) পুকুর পাড়ে অবস্থিত গাছের ডালগুলোকে এবং ঝোপগুলোকে পরিষ্কার করে রাখতে হবে যাতে সূর্যের আলো সহজেই পুকুরের জলে পড়তে পারে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে "জলেতে ভোরের রোদের কিরণ না লাগালে মাছের মরণ। রোদের কিরণ যেমন যায় মাছের খাবার তেমন পায়"
৬) এরপর পনেরো থেকে কুড়ি দিন টানা রোদ লাগিয়ে পুকুরের তলাটিকে একটু শক্ত করে নিতে হবে । তবে শক্ত করার আগে যদি সম্ভব হয় মৌহাখোর বিঘা প্রতি ৪০ কেজি হিসাবে প্রয়োগ করতে পারলে খুবই ভালো হয়। এতে মাছ চাষের ক্ষতিকর জীবাণুগুলো দূরীভূত হয়। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে "মহুয়া খইল এ দই এর উপকার আদিতে বিষ, অন্তে সার"
৭) এরপর বিঘাপ্রতি ২০ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে পারলে জল ক্ষারীয় থাকবে যা মাছ চাষের পক্ষে সহায়ক। তবে মনে রাখতে হবে চুন প্রয়োগের সময় পাঁকটি যেন হালকা নরম থাকে।
আরও পড়ুনঃ মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভরসা পুরনো পুকুরই -প্রথম পর্ব
৮) আমরা যদি এই কাজটি ফাল্গুন মাসের আগে শুরু করে দিতে পারি তাহলে মাছ চাষের জন্য ফাল্গুন থেকে আশ্বীন/কার্তিক মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় পাবো, ঠিক তেমনি শীতকালকেও এড়ানো যাবে।
৯) এরপর মাটি পুরোপুরি ভাবে শুকিয়ে গেলে ওই পুকুরে পরিষ্কার জল ঢোকাতে হবে। তার দুদিন পর পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ৫ পিপিএম হারে ওই পুকুরের জলে প্রয়োগ করতে হবে। তবে এটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি ১০ লিটারের বালতি নিয়ে তাতে দুটি আঙ্গুলের চিমটিতে যতটা ওঠে ঠিক ততটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট নিয়ে জলে গুলিয়ে পুকুরের চারিদিকে প্রয়োগ করতে হবে।
১০) জল প্রস্তুতির তিনদিন পর যাদের ছোট পুকুর তারা ডিমপোনা থেকে ধানীপোনা এবং যাদের মাঝারিপুকুর তারা ধানীপোনা থেকে চারাপোনা এবং যাদের বড় পুকুর তারা চারাপোনা থেকে বড়মাছ এবং যাদের সব রকম পুকুরই বিদ্যমান তারা সব রকম মাছ চাষ করতে পারে।
কী কী চারামাছ মজুত করা যেতে পারে ?
১) পুকুরে এক জাতীয় মাছ না ছেড়ে যদি সমস্ত স্তরের মাছ ছাড়া হয় তাহলে খুবই ভালো হয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মাছগুলো যেন সুস্থ ও সবল হয় এবং উপযুক্ত সংখ্যায় ও অনুপাতে যেন ছাড়া হয়।
২) বিঘাপতি কুড়ি হাজার করে চারা মাছ মজুদ করা যেতে পারে তবে তার মধ্যে ১০,০০০ কার্পজাতীয় ও ৫০০০ দেশীয় মাছ ও ৫০০০ চিংড়ি বা অন্যান্য জাতীয় মাছ মজুদ করা যেতে পারে।
৩) তবে এক্ষেত্রে যদি পুকুরটি বেশ পুরনো হয় তাহলে সেই সমস্ত মাছ ছাড়া যেতে পারে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু বেশি ও বিষাক্ত পদার্থ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষমতা ও যেন বেশি হয়।
৪) কার্পজাতীয় মাছের মধ্যে কাতলা, রুই ,মৃগেল, বাটা প্রভৃতি মাছ মজুদ করাতে পারে।
৫) দেশীয় মাছ হিসাবে কই ,মাগুর , শিঙ্গি,লাটা, ট্যাংরা,ফলুই ,পাঙ্কাল প্রভৃতি মজুদ করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খাঁচা বানিয়ে এসব মাছগুলোকে চাষ করলে ভালো হয় কারণ এদেরকে হারভেস্টের সময় সহজেখুঁজেপাওয়া যায় না।
৬) চিংড়ি হিসেবে গলদা চিংড়ি এবং অন্যান্য মাছ হিসাবে ব্ল্যাককার্প, গিফট তেলাপিয়া ,পাঙ্গাস ,গ্যাসকার্প ,কালবোস ,জাপা-পুঁটি, মৌরলা, চেলা ইত্যাদি মজুদ করা যেতে পারে।
পরিচর্যা:
শুধুমাত্র পুকুরে মাছ মজুদ করলে হবে না, সেই মাছকে খাদ্যপোযোগী করে তোলার জন্য কিছু পরিচর্যার প্রয়োজন সেগুলি হল -
১) চেষ্টা করতে হবে পুকুরের জলকে যত বেশি আন্দোলিত করা যায় ততই ভালো এক্ষেত্রে বাড়ির থালা-বাসন ধোয়া, স্নান করা প্রভৃতি কাজগুলি পুকুরে করা যেতে পারে।
২) সারাদিনে একবার করে হাতে তৈরি খাবার পুকুরে দিতে হবে।এক্ষেত্রে খাবারটি যদি মন্ড আকারের হয় তাহলে সকালের দিকে পুকুরের একটি স্থানে একটি পাত্রে খাবার দিলে ভালো হয় , তাছাড়া দানা আকারের খাবার হলে পুকুরের চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে ।কারণ সকালের দিকে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন এর মাত্রা বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুনঃ মাছে এসব রোগ হয়, ক্ষতি এড়াতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন
৩) মাসে একবার করে ফাইভ পি পি এম হারে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করা যেতে পারে তবে এক্ষেত্রে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট-এর দ্রবণটি বাতিল হওয়া স্যালাইন বোতলের মধ্যে ঢুকিয়ে পুকুরের দুই থেকে তিনটি জায়গায় ঝুলিয়ে দিলে খুব ভালো হয়। যাতে এক জায়গায় না ডেলে, ধীরে ধীরে দ্রবণটি জলে মিশে যেতে পারে ।
৪) মাসে একবার করে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে (চুন দেওয়ার পদ্ধতিটি পাশের চিত্রে দেখানো হলো)।" চুন দেওয়ার অশেষ গুন সব তরকারিতে যেমন নুন, মাসে মাসে দিলে চুল তরোগের মুখে পড়ে আগুন"।
৫) মাসে একবার বা যদি সম্ভব হয় ১৫ দিনে একবার করে নেটিং করতে হবে, এক্ষেত্রে বাড়ির ক্ষেপলা জাল(কাষ্টনেট )বা মশারি নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) মাসে একবার করে চেনিং করতে হবে এক্ষেত্রে শুকনো ডাল নিয়ে অথবা যে কোন উপায়ে পুকুরের তলার পাঁকটিকে ঘেঁটে দিতে হবে।
৭) যদি সম্ভব হয় ১৫ দিনে একবার করে পাম্পের মাধ্যমে পুকুরের জলকে এরিয়েশান করা যেতে পারে এতে মাছের অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হয় তবে এক্ষেত্রে ভোরের দিকে করলে খুবই ভালো হয় কারণ ওই সময় জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে।
ডঃ প্রতাপ মুখ্যোপাধ্যায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিজ্ঞানী, আই.সি.এ.আর., সি.আই.এফ.এ., ভুবনেশ্বর।
সুমন মাইতি, স্নাতকোত্তর, মৎস্য বিজ্ঞান ,মেদনাপুর সিটি কলেজ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
Share your comments