কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের ভারতবর্ষ হল এমন একটি উন্নয়নশীল দেশ যেখানে প্রায় ৩০ শতাংশ নাগরিক বিপিএল-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে অন্যতম হল এই গ্রামীণ বা উপকূলীয় সম্প্রদায় । অভাবের তারনাই তাদের বাধ্য করেছে গৃহস্থের মা ও বোনদের জীবিকা নির্বাহে তাদের পুরুষদের সাথে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতে। যেমন পাল্লা দিয়ে তারা দক্ষতার সাথে কৃষিজমিতে বীজ রোপণ করে ঠিক তেমনিই মোহনা থেকে মীন সংগ্রহ থেকে শুরু করে সেগুলিকে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়, মাছ চাষে, ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাছেদের খাবার তৈরি , সঠিকভাবে পুকুর পরিচর্যা, পুকুর থেকে সংগৃহীত মাছেদের রক্ষ্যনাবেক্ষ্য়ন করা – এইসব প্রধানত মহিলাদের দায়িত্বেই আরোপিত। এমনকি এটিও দেখা গিয়েছে, চিংড়ি চাষে বা চিংড়ি সম্পর্কিত শিল্পক্ষেত্রগুলিতে কর্মরত মহিলাদের মাত্র ছুয়েছে ৪০ শতাংশ।
মোহনায় মাছ চাষের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক আঙ্গিক
ভারতীয় লোনা জলের মাছের জলজ চাষ প্রায় এক চেটিয়াভাবে চিংড়ির দ্বারা প্রাভাবিত, এটি সবসময় গতিশীল এবং সামাজিক ভাবে আবেগপ্রবন খাদ্য উত্পাদনের ব্যবস্থা। ভারতে ১৯৯০ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত চিংড়ি চাষ একটি বহু বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হয়েছে যার একটাই কারণ – চিংড়ি বা মাছ চাষের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণীটিকে প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতেও বৃহত্তর রূপে ব্যবহার করা হয় বিদেশে রপ্তানির প্রয়োজনে, যা পূর্বেই আলোচিত।
আরও পড়ুনঃ মোহনায় মাছ চাষের সংক্ষিপ্ত প্রণালী
২০১৪ সালে, চিংড়ি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে যা দেশের মোট সী-ফুড রপ্তানী আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ। ভারত চাষকৃত চিংড়ির উত্পাদনের জন্য প্রথম রেকর্ড করে যা ১৯৭০ সালে ২০ মিলিয়ন টন ছিল এবং ১৯৯১ সালে প্রথম বড় পরিবর্তনটি সুস্পষ্ট হয়েছিল যখন সেটি ৪০০০ মিটার টন পৌঁছায়। ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চাষকৃত চিংড়ির উত্পাদন একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখায় যা সেই দশকের শেষের দিকে ০.১৬ মিলিয়ন টন আবির্ভূত হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণের ফলে, ২০১৪ সালে এই অঞ্চলটি ০.১২ মিলিয়ন হেক্টরে হ্রাস পেলেও, ২০১৭ সালে আবার ৮৫০০ হেক্টরে বৃদ্ধি পায় যেখানে পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাট একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখায়। তবে, এর পরেও আমরা গর্বের সাথে বলতে পরী, এত কিছুর সত্তেও আমাদের ভারত মাতা, চিংড়ি উত্পাদনে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকারে সফলতা পেয়েছে।
এই আলোচনার মধ্যমে, যে রূপরেখা আমাদের মনের মধ্যে ফুটে উঠেছে, তা হল মোহনা যেমন আমাদের বৈচিত্রকে রক্ষা করছে তেমনই আমাদের আগামী প্রজন্মের সুস্থ সবল বেড়ে ওঠা এবং তাদের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প হিসাবেও দিশা দেখাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত এই মোহনার সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমে যাওয়া বা মোহনায় ম্যানগ্রোভ গাছ গুলিকে নির্মম ভাবে কেটে ফেলা – এইসবই মীনের উপরেও এর এক বিকৃতিকর প্রভাব ফেলছে।
আরও পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের বর্তমান অবস্থা
কখনো আবার মীন সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময়ই বেশ কিছু অ-বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের বা মাধ্যমের ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে মীনের পাশাপাশি স্বল্পপরিমানে হলেও অন্যান্য প্রাণীজপদার্থও উঠে আসছে – যা ধীরে ধীরে মোহনার প্রাকৃতিক বৈষম্যকে নষ্ট করে ফেলছে; যা আবার পরোক্ষভাবে মাছেদের খাদ্য সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবেও বলা যেতে পারে। এতে হয়ত মোহনাকে এবং সেখানকার মাছ, অন্যান্য জলজীবন এবং সর্বোপরি সেখানকার পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের একজন সতর্ক ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসাবে আমাদের অতি অবশ্যই উচিত সেই সমস্ত উপকূলীয় মানুষগুলিকে লোনা জলের মাছের জলজ চাষ বা মোহনায় মাছ চাষের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভাবে সচেতন করে।
ঊর্ণা ব্যানার্জী ও প্রতাপ মুখোপাধ্যায়
Share your comments