ভেড়া পালন খুবই লাভজনক ব্যাবসা যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বহু বেকার যুবক-যুবতীর অন্যতম কর্মসংস্থান ছাগল, গরুর তুলনায় এর বৃদ্ধি যেমন বেশি তেমনি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি | কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায়, অন্যায় পশু পালনের তুলনায় ভেড়া পালন বেশি লাভজনক | স্বল্প পুঁজি, স্বল্প জায়গায় চাষ করা যায় বলে অনেকেই এ চাষে আগ্রহী | একটি ভেড়া বছরে ২ টি বাচ্চা দেয় এবং প্রতিটি ভেড়া বছরে ১৭ থেকে ২০ কেজি ওজনের হয় যা থেকে ৯-১০ কেজি মাংস পাওয়া যায় | ভেড়া পশম ও মাংসের জন্য পালন (Sheep Cultivation) করা হয়। ভেড়ার পশম দিয়ে কম্বল, শাল, স্যুয়েটার, জ্যাকেট তৈরি করা হয়। মোটা পশম কার্পেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
খামার তৈরী(House):
ভেড়া পালনে জন্য সঠিক বাসস্থান নির্মাণ খুবই জরুরি | উঁচু জলাবদ্ধযুক্ত জায়গা নির্বাচন করতে হবে |জায়গাটি ঘাস চাষের উপযোগী হতে হবে | ঘরে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো-বাতাসের উপস্থিতি থাকতে হবে | ঘরের মেঝেতে মাচা করা বেশি উপযোগী | ঘরের ভেতর বাঁশ বা কাঠের মাচা তৈরী করে ভেড়া রাখতে হবে | মাচার উচ্চতা ১ মিটার এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৮ ফুট হতে হবে | ঘর সবসময় খোলা-মেলা ও উঁচু হতে হবে | খামারে বিষ্ঠা ও মূত্র নিঃসাসনের জন্য পৃথক ব্যাবস্থা রাখতে হবে | সর্বোপরি, ঘনবসতি এলাকা থেকে দূরে হতে হবে খামার | প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক মেষের জন্য ১০ থেকে ১৪ বর্গ ফুট জায়গার প্রয়োজন | বাড়ন্ত ভেড়ার জন্য ০.৭ বর্গ মিটার ও প্রসূতির জন্য ৩ বর্গ মিটার জায়গার প্রয়োজন | ঘর পরিষ্কার করতে হয় এবং বৃষ্টির জল যাতে না ঢোকে দেখতে হবে |
আরও পড়ুন - Cow-food preserving method: জেনে নিন বর্ষায় গো-খাদ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি
খাবার(Food):
ভেড়া সাধারণত লতা-পাতা, শুকনো খড়, দানা জাতীয় শস্য খেয়ে থাকে | এরা মাটিতে চড়ে খেতে পছন্দ করে | দানাদার খাবার হিসাবে ভেড়াকে মাসকলাই, গমের ভুষি, ঝিনুকের গুঁড়ো, লবন, চালের ভুষি ইত্যাদি দেওয়া যায় | এছাড়া, চাল ভাঙা, ভুট্টা ভাঙা, খেসারির ডাল দেওয়া যেতে পারে | লবন, ঝিনুকের খোসা ইত্যাদি ভেড়াকে প্রায় ৩ শতাংশ দিতে হবে | চাল, গম , ভুট্টা ভাঙা ৩ শতাংশ বাচ্চা দের জন্য ও গর্ভবতীদের জন্য ১২ শতাংশ দিতে হবে | খাদ্য পরিষ্কার বস্তায় রাখতে হবে |
স্বাস্থ্য পরিচর্যা(Health):
প্রথমত, সুস্থ সবল, প্রজনন ক্ষমতা সম্পন্ন ভেড়া ভেড়ি আনতে হবে | সংগ্রহের পরে কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে | প্রথম ১৫ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে | জল ও খাবার সবসময় মজুদ রাখতে হবে | শরীরের উকুন ও উল পরিষ্কারের জন্য ০.৫ শতাংশ মেলাথিলিন দ্রবণে স্নান করাতে হয় |
ভাইরাস জনিত রোগে ভেড়া ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এমনকি নিউমোনিয়া দেখা দেয় | ভেড়ার প্রায় সব রোগের মূল কারণ কৃমি | তাই কৃমিনাশক দেওয়া অত্যন্ত জরুরি |
নবজাতকের যত্ন:
নবজাত ভেড়া শাবককে জন্মের পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ওজন অনুপাতে শালদুধ পান করাতে হয়। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠে।
আপনি কিভাবে লাভ পাবেন(Profitable business)?
ভেড়া থেকে একই সাথে মাংস,দুধ ও পশম পাওয়া যায়। জায়গা না থাকলে গরু ও ছাগলের সাথে একই সাথে ভেড়া পালন করা যায়। এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই যোগাড় করতে পারে। ভেড়াপালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম। মেষের মলমূত্র জমির সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এরা জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে,জলাশয়ের ঘাস চরে খেতে পারে | সর্বোপরি মেষের রোগ-ব্যাধি অন্যান্য প্রাণী অপেক্ষা তুলনামূলক কম হয়। আরেকটি বড় সুবিধা হল, ভেড়া দলবদ্ধভাবে বসবাস ও বিচরণ করে, সুতরাং বাড়িতে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কম, চড়ানোর জন্য বাড়তি কর্মীর প্রয়োজন নেই, অপেক্ষাকৃত কম খেয়ে অধিক মাংস ও পশম উৎপাদন করে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Rooftop Poultry Farming: বাড়ির ছাদেই পালন করুন মুরগি, শিখে নিন নিয়ম
Share your comments