আমরা সকলেই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবগত। শুধু অতি প্রয়োজনীয় কাজ কর্ম ছাড়া প্রায় সমস্ত রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। এই ভাইরাস চীন থেকে শুরু হয়ে ক্রমশ সারা বিশ্বকে সংক্রমিত করেছে। এটি নতুন প্রকারের করোনা ভাইরাস, যা ‘নোবেল করোনা ভাইরাস’ বা ‘COVID-19’ নামে পরিচিত, যা অন্যান্য করোনা ভাইরাসের স্ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশী সংক্রমণযোগ্য এবং ভয়াবহ। বিভিন্ন প্রকারের করোনা ভাইরাসের স্ট্রেনের সন্ধান মানুষ এবং প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া গেছে কিন্তু এই নোবেল করোনা ভাইরাস আগে কখনো দেখা যায়নি। নোবেল করোনা ভাইরাস চীনে প্রথম পাওয়া যায় এবং ক্রমশ সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, যা মহামারীর আকার ধারণ করে। কোনরকম লক্ষণ ছাড়াই এই নোবেল করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। একটি ভালো খবর যে, নোবেল করোনা ভাইরাস পশু থেকে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার খবর এখন পাওয়া যায়নি।
গৃহপালিত পশুরা কি করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে (Can livestock spread the corona virus) ?
ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত কোন গৃহপালিত পশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও কিছু পোষ্য বিড়াল এবং চিড়িয়াখানা বাঘের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে সংক্রমিত মানুষ থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সাধারণত গৃহপালিত গরু, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি থেকে নোবেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম, তবুও সাবধানতা বজায় রাখা একান্ত দরকার। কারণ, করোনা ভাইরাস মানুষের মধ্যে নীরব বাহক হিসাবে কাজ করতে পারে এবং 80% করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি কোনরকম লক্ষণ ছাড়াই অন্য মানুষকে সংক্রমিত করতে পারেন।
প্রাণিজ প্রোটিন থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা !
প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত এই নোবেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু এখনো পর্যন্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি যে, প্রাণিজ প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম ইত্যাদি; এমনকি শাকসবজি থেকে মানুষ করোনাতে সংক্রমিত হয়েছে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
সংগঠিত ডেয়ারি ফার্মের জন্য করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ -
১. সকল কর্মচারীর প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অন্তত ১ মিটারের ও একই সাথে নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
২. প্রতিনিয়ত ডেয়ারি ফার্মে জীবাণুনাশক স্প্রে করা।
৩. একটি মাত্র গেট দিয়ে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা এবং একটিমাত্র গেট খোলার অনুমতি দেওয়া।
৪. অপ্রয়োজনীয় ফার্ম পরিদর্শন নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
৫. সবাইকে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন মাক্স, গ্লাভস, গামবুট ও গগলস্ ইত্যাদি পরিধান করতে হবে।
৬. করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে অনুশীলন করতে হবে, সেইসাথে দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ও দুগ্ধজাত সরঞ্জাম নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৭. খামারের শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে যে, করোনা ভাইরাস গবাদি পশু ও দুধ দ্বারা সংক্রামিত হয় না।
৮. ক্রস ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা, যাতে প্রয়োজনে একটি কর্মচারী খামারের অন্য আরেকটি কাজ সহজেই করতে পারেন।
৯. কোন ব্যক্তির সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশির মত উপসর্গ দেখা গেলে তা উপেক্ষা না করে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করা এবং ফার্ম ম্যানেজারকে অবগত করা উচিৎ।
১০. প্রতিনিয়ত প্রবেশ পথে ফার্মে কর্মরত কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কিছু তথ্য সংগ্রহ করা এবং থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা একান্ত দরকার।
উপসংহার:
করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী এক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এহেন পরিস্থিতিতে ফার্মের প্রত্যেকটি কর্মচারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য যে, করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাক্স ব্যবহার করা। সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিনিয়ত করোনা ভাইরাস সম্বন্ধে খবরা খবর নেওয়া এবং ফার্মের প্রত্যেকটি কর্মচারী একে অপরের স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় খবর আদান-প্রদান করা একটি ডেয়ারি ফার্মের নিরাপত্তার মূল মন্ত্র।
নিবন্ধ লেখক - ডাঃ সন্তু মন্ডল (প্রাণী চিকিৎসক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)
Image Source - Google
Related Link - (Profitable fish Tilapia farming) তিলাপিয়া মাছের প্রজনন ও ব্রুডস্টক পরিচর্চা
মৎস্য চাষ করলে বেশী লাভ করতে চান? সাফল্যের দিশা পেতে অনুসরণ করুন এই পদ্ধতির
এ আই ব্যবহার করে গাভীর কৃত্রিম প্রজনন (Artificial insemination of cows using AI)