কৃষিজাগরন ডেস্কঃ বাংলা আমার সর্ষে ইলিশ চিংড়ি কচু লাউ।‘ কে না পরিচিত বাঙ্গালির এই অতিপ্রিয় গানের সাথে! তবে ইলিশ নয় আজকের আলোচ্য বিষয় হল চিংড়ি। এমনই একধরনের চিংড়ি যার প্রসার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কুচো চিংড়ি কিংবা গলদা, সে তো নাহয় সবারই চেনা! তবে যেটি বেশ কিছুদিনের মধ্যে এসেই জলজ চাষীদের তাক লাগিয়েছে, সেটি হল ‘ভেনামি’। ‘বাগদা’ চিংড়ির আরেক প্রজাতি। নোনা জলেই এর চাষ। সাদা চিংড়ি বা ‘Whiteleg shrimp’ বলা হয় একে। এমনকি ‘চিংড়ির রাজা’ নামেও পরিচিত। বিজ্ঞানসম্মত নাম হল Litopenaeus vannamei ।
FAO Fishtat,2009 এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০২ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী জলজ চিংড়ি চাষে, বাগদা অর্থাৎ Penaeus monodon এর অবদান ছিল সর্বোচ্চ (৫০-৬০ শতাংশ) এবং ভেনামির অবদান ছিল মাত্র ১৫-২০ শতাংশ। সেখান থেকে ২০০৭ সালে ভেনামির সেই অবদান প্রায় আকাশ ছাড়িয়ে পৌঁছোয় ৭০ শতাংশে এবং বাগদার হার নামে ১৮ শতাংশে। এছাড়াও অন্যান্য চিংড়ি রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ভেনামির সারকথা-পর্ব দুই
তবে চিংড়ি চাষের উচ্চফলন লক্ষ্য করা যায় ২০০২ থেকে চীন এবং অন্যান্য দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ভেনামির আগমনে । এবং ভারতবর্ষে এই চিংড়ি আসে ২০০৮ সালে। হেক্টর প্রতি ভেনামির উৎপাদন প্রায় সাত হাজার কেজির বেশি। তবে সাম্প্রতিক বেশ কিছু সমস্যা উঠে এসেছে, যার কারনে উচ্চ ফলনশীল হওয়া সত্বেও রীতিমত রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে ভেনামিকে।
আরও পড়ুনঃ পুরনো পুকুর ই পারে অভ্যন্তরীণ মাছের উৎপাদন বাড়াতে-পর্ব এক
প্রথমত,ভেনামি চাষের ফলে আগের তুলনায় অনেক বেশি রোগ দেখা দিচ্ছে চিংড়িদের মধ্যে, যেখানে ভেনামি চারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথেই আসছে। দ্বিতীয়ত, এত বেশি প্রাধান্যের ফলে প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। তাই হঠাৎ আগমনে যেমন সবার মন জয় করেছিল, ঠিক সেরকম ভাবেই এই ভারসাম্যহীনতার কারনে ভেনামিকেই দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে কারন গুলো একেবারে্ই অনস্বীকার্য নয়। তবে প্রতিকারের উপায়!
এবার দেখা যাক বিজ্ঞানীরা কী বলছে! সঠিক ভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে অভাবনীয় ফলন দেখায় এই চিংড়ি, বলাবাহুল্য যদি সেটা রোগ্মুক্ত হয়। কারন ভেনামি অত্যন্ত সংবেদনশীল এক প্রকার চিংড়ি, যেটি এদেশীয় নয়। এটি উঠে এসেছে সুদূর প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন মেক্সিকো এবং দক্ষিন আফ্রিকা থেকে। অন্য সকল চিংড়ির চেয়ে এর উৎপাদন অনেক বেশি। তাই সাধারন জলজ চাষিরা ভেনামি চাষে অত্যন্ত আগ্রহী। তবে দেখা যায় যেখানে একটা কালচার পুকুরে প্রতি মিটার স্কোয়ারে ৩০ থেকে অন্তত ৬০ টি চিংড়ি স্টক করার কথা, সেখানে কিছু চাষিরা অতিরিক্ত লাভের আশায় কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ টি চিংড়ি স্টক করে থাকে। আর ঠিক সেখানেই দেখা যায় গলদ।
খুশি প্রধান
Share your comments