মাছ চাষকে লাভজনক করতে হলে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি মাছকে বাইরে থেকে দেওয়া সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে শতকরা ৬০ ভাগই খরচ হয় খাদ্য ক্রয় করতে। সম্পূরক খাদ্য হিসাবে আমাদের দেশে সচরাচর যে উপাদান গুলো ব্যবহার করা হয় তা হলো-চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, ফিশমিল, ইত্যাদি। এসব উপাদান প্রয়োজনমতো মিশ্রিত করে চাষিরা মৎস্য খাদ্য তৈরি করে।
কারখানায় তৈরি বাণিজ্যিক খাদ্যও মৎস্য চাষে ব্যবহার করা যায়। যে ধরনের খাদ্যই মাছ চাষের পুকুরে ব্যবহার করা হোক না কেন তার গুণগতমান ভালো হওয়া আবশ্যক। খাবারের গুণগতমান ভালো না হলে সুস্থসবল পোনা ও মাছ উৎপাদন করা যাবে না ।
আরও পড়ুনঃ এই ফল চাষ করলে বছরে ২৫ লাখ টাকা লাভ হবে
মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হয় এবং মাছের মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যাবে। আবার মাছের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হবে না। খাদ্যের গুণগতমান ভালো রাখার জন্য যথাযথ নিয়মে খাদ্য উপকরণ বা তৈরি খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নলিখিত নিয়ামকসমূহ খাদ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণের সময় খাদ্যের গুণগতমান এবং ওজনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
খাদ্যের আর্দ্রতা
খাদ্যে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০% এর বেশি থাকলে ছত্রাক বা পোকা-মাকড় জন্মাতে পারে।
বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা
বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬৫% এর বেশি থাকলে খাদ্যে ছত্রাক বা পোকা-মাকড় জন্মাতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মেহেদি চাষ: খরচ কম, লাভ বেশি, এভাবে চাষ করলে আয় হবে লাখ লাখ টাকা!
তাপমাত্রা
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় খাদ্যের পুষ্টিমান নষ্ট হয় যায় । পোকা-মাকড়সমূহ ২৬-৩০ডিগ্রী সে: তাপমাত্রায় খুব ভালো জন্মাতে পারে এবং এরা খাদ্য খেয়ে ফেলে ও তাদের মলমূত্র দ্বারা ব্যাকটোরিয়া ছড়াতে পারে।
সূর্যালোক
সূর্যালোকে খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কিছু কিছু ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়।
অক্সিজেন
খোলা অবস্থায় খাদ্য রাখলে বাতাসের অক্সিজেন খাদ্যের রেন্সিডিটি (চর্বির জারণ ক্রিয়া) ঘটাতে পারে যা খাদ্যের গুণগতমানকে ক্ষতিগ্রসত্ম করে । অক্সিজেন ছত্রাক ও পোকা-মাকড় জন্মাতেও সহায়তা করে।
সঠিক খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি
খাদ্য বায়ুরোধী পলিথিনের বা চটের অথবা কোনো মুখ বন্ধ পাত্রে ঠাণ্ডা ও শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মাঝে এই খাদ্য পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিলে ভালো হয়।
-
খাদ্য পরিষ্কার, শুকনো, নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ঘরে রাখতে হবে।
-
গুদাম ঘরে সংরক্ষিত খাদ্য মেঝেতে না রেখে ১২ থেকে ১৫ সে.মি. উপরে কাঠের পাটাতনে রাখতে হবে।
-
পোকা-মাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যের বসত্মার নিচে এবং আশপাশে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
খাদ্য তিন মাসের বেশি গুদামে রাখা যাবে না। এর মধ্যেই এটি ব্যবহার করে ফেলা উচিত।
-
ইঁদুর বা অন্যান্য প্রাণীর উপদ্রবমুক্ত স্থানে খাদ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
-
খাদ্য কীটনাশক ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সাথে রাখা যাবে না।