তেলাপিয়া মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু এবং বাজারে এই মাছের চাহিদাও বেশ ভালো | প্রায় সারাবছরই বাজারে এই মাছের উপস্থিতি চোখে পরে | তেমনি এই মাছ চাষ করে আপনিও হতে পারেন মোটা টাকার মালিক | এই নিবন্ধে কোন জাতের তেলাপিয়া মাছ চাষ (Tilapia fish cultivation)করলে লাভ হবে এবং কিভাবে চাষ করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো |
জাত:
গিফট জাতের তেলাপিয়া মাছের চাষে মোটা টাকা আয় করা যায়৷
পুকুর প্রস্তুতি(Pond preparation):
পুকুর প্রস্তুতির আগে এই মাছ চাষের প্রধান বিষয় হলো সঠিক পুকুর নির্বাচন করা | মাসে ৪ থেকে ৬ মাস জল থাকে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে | নার্সারি পুকুর ১৫ থেকে ২০ ডেসিমেল আয়তনের ও লালন পুকুর ২০ থেকে ১০০ ডেসিমেল আয়তন হলে ভাল। তবে এর থেকে কিছুটা ছোট বড় হলেও চলবে। পুকুরের পাড় মেরামত করতে হবে ও পাড়ে গাছ-পালা থাকলে তার ডালপালা কেটে দিতে হবে। পুকুরে জল শুকিয়ে যেতে দেখলে অবাঞ্ছিত মাছ ও অন্যান্য প্রাণী সরিয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে দিতে হবে। এর পর প্রতি ডেসিমেলে এক কিলোগ্রাম হারে চুন দিতে হবে। চুন প্রয়োগের তিন-চারদিন পর জলাশয়ে নতুন জল ভরতে হবে। চুন প্রয়োগের ৭ দিন পর ডেসিমেলে ৬ ’কিলোগ্রাম গোবর অন্তত ৩ দিন পচিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ৭০ গ্রাম সিঙ্গল সুপার ফসফেট দিতে হবে। সার প্রয়োগের ২ -৩ দিন পর পুকুরের জল হাল্কা সবুজাভ-বাদামী রঙের হলে মাছ ছাড়তে হবে।
পোনা ছাড়ার পদ্ধতি:
আঁতুড় পুকুরে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম ওজনের মাছ প্রতি ডেসিমেলে ১.৫ থেকে ২০০০ পোনা ছাড়া যায়। পোনা ১০-১৫ গ্রাম ওজনের হলে লালন পুকুরে ২৫০টি সুস্থ-সবল পোনা মজুত করা যাবে। সুতরাং, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে একক চাষ করলে ২০০- ৩০০টি গিফট তেলাপিয়ার পোনা এবং অন্যন্য মাছের মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ করলে তেলাপিয়া ১০০-১৫০টি ছাড়া যাবে |
আরও পড়ুন -Ool farming guide: জেনে নিন সহজ উপায়ে ওল চাষ পদ্ধতি
খাদ্য(Food):
পুকুরে মাছ চাষের সময় মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার ১ দিন পর থেকে প্রতিদিন পুকুরে উপস্থিত মাছের ওজনের ৪-৬ ভাগ হারে চালের কুরো দিতে হবে। পুকুরের মাছ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের খাদ্য হিসেবে পরিচিত যে কোনও ধরনের খাবারই দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত আঁতুড় পুকুর থেকে মজুত পুকুরে চাষের ক্ষেত্রে ১ কেজিতে ৫ হাজার, ৪ হাজার, ৫০০ , ৩০০ , ১০০ ,৪০, ৩০ , ৫ ও ২ গ্রাম ওজন মাছের চারা থাকলে মাছের গড় দেহ ওজনের যথাক্রমে ১০০% , ৭৫%, ৫০%, ৪০% হারে কৃত্রিম খাবার দিনে ৪ বার থেকে কমে কমে ২ বার করে প্রয়োগ করতে হবে। নার্সিং এ ৪-৫ সপ্তাহ এবং পরে লালন কালে ২৫-৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ ভাসমান খাবার প্রয়োগ করতে হয় এতে ফলন আরও ভাল হয়।
পরিচর্যা:
পোনা মজুতের ১ মাস পর থেকে প্রতি ডেসিমেলে ১ মিটার জলের গভীরতায় ১০০গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হবে । জলের পি এইচ দেখে পরিমাণ কম বেশি করতে হবে। প্রতি ৭ থেকে ১০ দিন পর পর জাল টেনে মাছের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। খাবার প্রয়োগের ১ ঘন্টা পর পুকুর পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি পুকুরে খাবার পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে পুকুর অথবা মাছের কোনও সমস্যা হয়েছে অথবা খাবার বেশি দেওয়া হচ্ছে। একটানা মেঘলা আবহাওয়া কিংবা অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে অথবা খাবার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। জলজ পাখি এক পুকুর থেকে অন্য পুকুরে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। তাই, পুকুরে পাখির অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য সারা পুকুরের উপর আড়াআড়ি ভাবে রঙিন রশ্মি বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া যেতে পারে।
মাছ আহরণ:
এইভাবে চাষ করলে ১ গ্রাম ওজনের গিফট তেলাপিয়া ১০০ দিনে ৩৫০-৪৫০ গ্রাম ওজন হবে। জাল টেনে ও পুকুর শুকিয়ে মাছ ধরতে হবে।
সাধারণত, বাজারে তেলাপিয়া মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ১০০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া কম করে হলেও পাইকারি হিসাবে পুকুর থেকেই ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন। তার বেশি ওজনের হলে আনুপাতিক হারে দামও বাড়বে। আর সরাসরি বাজারে খুচরো হিসাবে বিক্রি করলে কম করে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা কিলো দরে বিক্রি সম্ভব। এই মাছ যেহেতু খুব অল্প সময়ে বাড় তাই বছরে ৩ থেকে ৪ বার মাছ তুলে বিক্রি করা সম্ভব। তাই, তেলাপিয়া চাষে কৃষকবন্ধুরা ভালো উপার্জন করতে পারেন |
আরও পড়ুন - Budgerigar birds rearing: বদ্রী পাখি পালনে আপনিও হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments