কচ্ছপ। অতি ধীর এবং শান্ত একটি প্রাণী। দেখতে নিরীহ হলেও কচ্ছপ কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। ভারতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে কচ্ছপ হত্যা ও খাদ্য হিসাবে ব্যবহার অতি গর্হিত একটি কাজ। এই জলজ প্রাণীর শিকার, হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায়, ভারতে কচ্ছপের প্রজনন ও বংশবিস্তার সুষ্ঠু ভাবে হয়ে চলেছে। সৌখিন মানুষেরা কচ্ছপ পোষেন। তাই বাংলায় কোথাও কোথাও কচ্ছপ খামার গড়ে উঠেছে। এই খামারগুলি প্রধানত মিষ্টি জলের কচ্ছপ প্রতিপালন করে।
কচ্ছপের ডিম পাড়ার পদ্ধতি: (Laying of tortoise eggs)
কচ্ছপ সাধারণত একসঙ্গে ২-২০টি ডিম পেড়ে থাকে। কোনও কোনও সমুদ্রের কচ্ছপ ৩০০-রও বেশি ডিম দেয়। কচ্ছপ সাধারণত স্থলভাগে ডিম পাড়ে। মাটিতে বা বালি খুঁড়ে ডিম পেড়ে স্ত্রী কচ্ছপ পিছনের পা দিয়ে খোঁড়া মাটি দিয়ে সেই ডিম ঢেকে দেয়। কচ্ছপের ডিম গোলাকারও হয় অথবা ক্যাপসুলের মতনও দেখতে হয়। সাদা রঙের ডিমগুলির খোলস ভীষণই শক্ত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর কচ্ছপের ডিম ফোটা নির্ভর করে।
পোনা উৎপাদন কৌশল:
এদের প্রজননের জন্য বড় পুকুর প্রয়োজন। পুকুরের এক পাড়ে ১.৫-২.৫ বর্গমিটার স্থানে ১৫-২৫ সে.মি.পুরু বালি বিছিয়ে তার ১.০-১.২ মিটার উপরে ছাউনি লাগিয়ে কচ্ছপের প্রজননের জায়গা তৈরী করলে ভালো। জল থেকে উঁচু জায়গায় প্রজননের জন্য কাঠের সিঁড়ি তৈরী করে দেওয়া উচিত।
কচ্ছপের পায়ের দাগ লক্ষ্য করে প্রজনন স্থল থেকে ডিম সংগ্রহ করা উচিত। সকালবেলায় বালির তলা থেকে ডিমগুলি সংগ্রহ করতে হবে। নিষিক্ত ও অনিষিক্ত ডিম বোঝার জন্য কাঠের বাক্সে ডিমগুলি ১ থেকে ২ দিন রেখে দেওয়া উচিত। নিষিক্ত ডিমের মাথায় সাদা মুকুট দেখা যায়, আর অনিষিক্ত ডিমের গায়ে সাদা দাগ দেখা যায়। নিষিক্ত ডিম খুঁজে নিয়ে সাদা মুকুট উপরের দিকে রেখে ৫ সে.মি.পুরু বালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া দরকার। ডিমের সাদা মুকুট উপরের দিকে রাখতেই হবে, নাহলে ডিম ফোটার হার অনেকাংশে কমে যাবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, ডিম ফোটার জায়গায় যাতে কড়া রোদ ও বৃষ্টি না পড়ে। মোটামুটি ২৫ডিগ্রী থেকে ৬০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হয়। ডিম ফোটার স্থানে সামান্য গভীর জলাশয় তৈরী করা উচিত যাতে ডিম থেকে বাচ্চা কচ্ছপ বার হয়ে জলে নিজের আশ্রয় করে নিতে পারে। সবে সবে ডিম ফেটে বেরিয়ে আসা বাচ্চার আয়তন ২-৩ সে.মি. এবং ওজন ২-৪ গ্রামেরে মধ্যে হয়ে থাকে। মাছ, কেচোঁ ও মুরগির মাংস খাদ্য হিসেবে এইসময় কচ্ছপ ছানাদের খাওয়াতে হবে। এদের বেড়ে ওঠা জলের পরিচ্ছন্নতা এবং খাদ্যের মানের উপর নির্ভর করে। কচ্ছপ বাচ্চার দৈর্ঘ্য যখন ১০-১২ সে.মি. না হওয়া অবধি সেগুলিকে লালন জলাশয়ে রেখে দিতে হবে।
মজুদ পুকুরে কচ্ছপের চাষ: (Turtle Farming)
মজুদ পুকুরের আয়তন কমপক্ষে ২০০-১০০০ বর্গমিটার এবং জলের গভীরতা ৫০-৭০ সে.মি. হতেই হবে। পুকুর পাড়ে বেড়া দিয়ে দিতে হবে না হলে কচ্ছপ জল থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
কচ্ছপের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার: (Necessary food for Turtle)
কচ্ছপের খাদ্যে কম চর্বি এবং কমপক্ষে ৪৫-৫৫% প্রোটিন থাকা বাঞ্ছনীয়। ছোট মাছ, মরগির মাংস কচ্ছপকে খাওয়াতে হবে। নিয়মিত পুকুরে কচ্ছপের খাবার যোগান দিতে হবে।
জলের পরিচ্ছন্নতা: (Cleanness of water)
কচ্ছপ চাষ করতে গেলে তাদের বাসস্থান পুকুরটিকে পরিষ্কার রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শ্যাওলা বা আগাছা না বৃদ্ধি পায়। কচ্ছপ যেহেতু বেশিরভাগ সময় জলের তলায় কাদার ভিতরে থাকে, তাই পুকুরে জৈব পচন বেশি হয়ে গেলে, অক্সিজেন কমে আসবে। ফলে জলে বিষক্রিয়ায় অসংখ্য কচ্ছপ মারা যেতে পারে। জলকে তাই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
আরও পড়ুন: Cattle rearing: উন্নতজাতের গরু পালনে গো-পালকদের অধিক আয়
কচ্ছপ চাষের সতর্কতা: (Turtle Cultivation Warning)
কচ্ছপ বড় হয়ে উঠলে, পুরুষ ও স্ত্রী কচ্ছপকে আলাদা স্থানে রাখা প্রয়োজন। কারণ পুরুষ কচ্ছপ স্ত্রী কচ্ছপকে আক্রমণ করে কামড়ে দিতে পারে। পুকুরের জল শুকিয়ে নিয়ে অথবা সতর্কতার সঙ্গে জাল ফেলে পরিণত কচ্ছপদের ডাঙায় নিয়ে আসা উচিত।
আরও পড়ুন: Profitable Fish Farming: কৃত্রিম উপায়ে পতিত জলাভূমিতে মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা
Share your comments