মাছ মরে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাতে পচন ধরে। মাছের কোষের মধ্যে থাকা উৎসেচক ও ব্যাকটেরিয়া মাছের কোষকে নষ্ট করতে থাকে। এছাড়াও অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় কোষে জল ঢুকে পড়ে। এইসব মিলে মাছের শরীরে পচন শুরু হয়। তাই মাছকে জল থেকে তোলার পর নিম্নে উল্লিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
- বরফ দিয়ে সংরক্ষণ-
এই ধরনের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মাছ ও বরফের অনুপাত সাধারণত ১:১ থাকে।এই ভাবে মাছ ৩ থেকে ৪ দিন ভালো অবস্থায় থাকে। তবে এই পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের জন্য বরফগুলোকে বার বার বদল করা দরকার। এর ফলে জীবাণু ও উৎসেচকের কাজ করার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। বরফ জলের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ০.০৫ থেকে ০.১% সোডিয়াম- হাইপোক্লোরাইট মেশানো হয়। গুঁড়ো বরফ তখনই ভালো কাজ দেয় যখন নিকটবর্তী স্থানে মাছ পরিবহন করা হয়।কার্বন- ডাই- অক্সাইড গ্যাস জমিয়ে শুষ্ক-বরফ তৈরী করা হয়, যা অনেক সময়ে ভালো কাজ দেয় মাছের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে।
- কোল্ড-স্টোরেজ সংরক্ষণ-
এই পদ্ধতিতে মাছকে প্রায় শূন্য ডিগ্রীর কাছাকাছি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। বাড়তি থেকে যাওয়া মাছকে সাধারণত এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জলে কোনো জীবাণু সংক্রমণ না থাকে আর বরফ গলে জল হলে সাথে সাথে জল বদলে দেওয়া দরকার।
- ফ্রিজিং প্রণালী-
এই পদ্ধতিতে মাছকে দীর্ঘদিন অবিকৃত অবস্থায় রাখা যায়। খুব কম তাপমাত্রা (-১৮ থেকে -২৫ ডেগ্রী সি) বজায় রাখা হয় ফ্রিজের ভিতর। ফলে এক্ষেত্রে মাছের কোষের ভিতর থাকা জল জমে বরফ হয়ে যায় ফলে মাছের পচন কমে যায়।
এই পদ্ধতিতে সামুদ্রিক মাছকে শুকনো করে বিক্রি করা যায়। সূর্য-কিরণকে কাজে লাগিয়ে মাছকে ৪ থেকে ৫ দিনের মত সময় লাগে শুকোতে। এই পদ্ধতির প্রধান নীতি হল মাছ থেকে জলীয় অংশকে সূর্যের তাপে বার করে দেওয়া হয়।
- কলম্বো-পদ্ধতি-এই পদ্ধতি সাধারণত দক্ষিণ ভারতে অনুসরণ করা হয়। এই প্রথায় মাছের সাথে লবণ, হলুদ ও তেঁতুল মিশিয়ে বড় বড় পিপাতে সংরক্ষণ করা হয়।
- ধোঁয়া দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়- এই প্রথা প্রায় উঠেই গেছে। প্রথমে মাছকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে নাড়ীভুঁড়ি বের করে লবণ জলে ধুইয়ে রৌদ্রে রাখা হয়। তারপর জল ঝরে গেলে চিমনীর ভিতর ছিদ্র করে মাছগুলোকে কাঠের উনানে রেখে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা রেখে শুকানো হয়।
- টিনের কৌটোয় সংরক্ষণ বা ক্যানিং- এটি মাছ সংরক্ষণের সহজতম প্রথা। প্রথমে নাড়িভুঁড়ি বাদ দেওয়া হয়, তারপর লবণ জলে কম তাপমাত্রায় সেদ্ধ করা হয়। তারপর জল ঝরিয়ে টিনের কৌটোয় ভর্তি করা হয়। কৌটোর মধ্যে টমেটোর রস, লবণ জল ইত্যাদি দিয়ে হাওয়া বের করে কৌটো সিল করে দেওয়া হয় এবং উত্তপ্ত করা হয়। এর পর কৌটো ঠাণ্ডা জলে ফেলে ঠাণ্ডা করে নেওয়া হয়। এই ভাবে সংরক্ষিত মাছ অনেক দিন ভালোভাবে থাকে।
উপসংহারঃ
আমরা সকলেই জানি, মাছ প্রচণ্ড পরিমানে পচন-প্রবন একটি বস্তু। মাছের সংরক্ষণ এমন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা মাছের গুণগত মানকে খারাপ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। উপরিউক্ত বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে মাছকে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু খুব প্রাচীন পদ্ধতিগুলি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয় না। তাই সব সময় এমন আধুনিক পদ্ধতি বাছাই করতে হবে, যা মাছের গুণগত মানকে উন্নত করার পাশাপাশি মাছকে অনেক বেশী দিন ধরে ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
নিবন্ধ লেখক - শতরূপা ঘোষ
(পিএইচডি স্কলার , অ্যাকোয়াটিক এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ)
Image source - Google
Related link - (Cultivating snails) শামুক থেকে লক্ষ্মীলাভ করছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষক, আপনিও এই পদ্ধতিতে চাষ করুন আর নিজের আয় বৃদ্ধি করুন
(Tharparkar cows) পশুপালকরা অতিরিক্ত আয়ের জন্য পালন করুন থারপারকার প্রজাতির গরু
Share your comments