আমাদের দেশে গবাদি পশুরা নিম্ন গুণমান খাদ্যের উপর নির্ভরশীল, যাতে প্রোটিনের মাত্রা খুবই কম। এর ফলে গবাদি পশুদের বৃদ্ধি ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে পশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেমন খরা ও বন্যার ফলেও গবাদি পশুদের খাদ্যের অভাব দেখা যেতে পারে, এমতাবস্থায় চাষীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই অবস্থা থেকে চাষী ও গবাদী পশুদের রক্ষার জন্য “ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক’ (Urea Molasses Block) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
‘ইউ.এম.বি’ কী জাতীয় খাদ্য :
ইউ.এম.বি. হল এক উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যা পশুদের পাকস্থলীতে উপস্থিত রূমেন জাতীয় অনুজীবকে নন - প্রোটিন নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। গবাদী পশুদের পৌষ্টিকতন্ত্রে এই রূমেন অণুজীব নন প্রোটিন নাইট্রোজেন থেকে প্রোটিন প্রদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ফলে গবাদী পশুদের বৃদ্ধি ও দুগ্ধ উৎপাদন বেড়ে যায়।
UMB তে উপস্থিত প্রয়োজনীয় খনিজ ভিটামিন, লবন, গবাদী পশুদের ভাল স্বাস্থ্য রক্ষা এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। UMB তে উপস্থিত গুড়, বিভিন্ন খনিজ ও অন্যান্য মৌল গবাদি পশুদের শক্তির উৎস। এর মিষ্টি স্বাদ ও গন্ধ আকর্ষনীয় ও সুস্বাদু।
UMB তে উপস্থিত গম ও চালের তুষ স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন ও ফসফরাসের উৎস, গুড়ের উপস্থিতি জলীয় পদার্থ শোষণে সহায়তা করে ও UMB কে খন্ডের আকার দিতে সহায়তা করে। এর পরিবর্তে আঁখ বা বাদামের ছিবরাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সিমেন্ট UMB- র উপাদান গুলিকে বাঁধতে সহায়তা করে। সিমেন্টের ব্যবহারের কোন ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়না, যদি এক থেকে তিন শতাংশ মাত্রা অবধি তা গ্রহন করা হয়।
‘ইউএমবি’ কী ভাবে তৈরি করবেন :
১০০ কেজির ‘ইউএমবি’ তৈরি করতে নিম্ন লিখিত উপাদান গুলি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে - গুড় ৪৫ কেজি, ইউরিয়া ১০ কেজি, সিমেন্ট ১০ কেজি, লবন ২ কেজি, মিনারেল ৩ কেজি, গম/চালের তুষ ৩০ কেজি, জল ৪ কেজি।
উল্লিখিত উপাদানের মধ্যে প্রথমে জলের সঙ্গে সিমেন্ট, ইউরিয়, লবন, খনিজ লবন, গুড় মেশাতে হবে। এরপর এই মিশ্রনে আস্তে আস্তে গম/চালের তুষ মিশিয়ে নরম মন্ড তৈরি করে ছোট ছোট ব্লকের মধ্যে ২৪ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর সেই ব্লক থেকে মন্ড গুলিকে আলাদা করে ৪-৫ দিন রোদে শুকোতে হবে ।
আরও পড়ুন - গ্রামের যুবকরা/মৎস্য চাষিরা পার্শে মাছের বাণিজ্যিক চাষে আয় করুন অতিরিক্ত
‘ইউএমবি’ কী ভাবে ব্যবহার করবে –
১) তৃণভোজী/গবাদী প্রাণীদের জন্যই শুধু ইহা ব্যবহার করা উচিত।
২) ৬ মাসের উর্দ্ধে গবাদি পশুদের ইহা দেওয়া যেতে পারে।
৩) খালি পেটে এই খাবার কখনো দেওয়া উচিৎ নয়। ঘাস বা খড় জাতীয় খাবারের পরে এটা খাওয়ানো যেতে পারে ।
৪) ভেড়া, ছাগল জাতীয় ছোট প্রাণীদের জন্য দিনে ১০০ গ্রামের বেশী এই খাবার দেওয়া যাবে না। ৫ কেজির ব্লককে ছাগল/ভেড়াকে তিন সপ্তাহ ধরে খাওয়ানো যেতে পারে।
৫) ২০০ কেজি ওজনের একটি গরুর জন্য ৫ কেজির ব্লক এক সপ্তাহ ধরে খাওয়ানো যেতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য –
একটা জিনিস জেনে রাখা উচিৎ, ‘ইউ.এম.বি’ কখনো মূল খাদ্য নয়, এটি একটি পরিপূরক খাদ্য। এই খাদ্য বাচ্চা পশুদের দেওয়া উচিৎ নয়। এছাড়াও এটি কখনো গুড়া করে বা ভিজিয়ে খাওয়ানো যাবে না।
আরও পড়ুন - গ্রামীণ অর্থনীতিতে মাছ চাষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে উপার্জনে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, জানুন বিস্তারিত
Share your comments