মাছের দেহ মূল্যায়ন পদ্ধতি মাছ চাষ গবেষনায় খুবই গুরুত্বপূর্ন বিশেষত এটি প্রজনন,উৎপাদন ব্যবস্থাপনা,খাদ্য ও পুষ্টি নির্ধারনে প্রয়োজন। এই পূল্যায়নের জন্য সঠিক,মানসম্মত এবং অভিন্ন পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। উৎপাদন ক্ষমতা ও মাছের বৃদ্ধি সম্পর্কিত জ্ঞান থাকাও জরুরি, যার দ্বারা মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
ভূমিকা
মাছ চাষে কম খরচে উচ্চ প্রোটিন পাওয়া সম্ভব যা অন্যান্য কৃষিখাতের তুলনায় অনেক বেশি। মাছের উৎপাদন বিভিন্ন কারনে প্রভাবিত হয় যেমন
-
পুকুরের জলের গুনমান
-
মাছের বীজের পুনমান
-
মাছের মজুতের ঘনত্ব
-
খাদ্য এবং
-
সংগ্রহ ইত্যাদি।
এসব বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা মাছ চাষের সফলতার জন্য অপরিহার্য।
প্রধান বিষয়গুলি হল-
উৎপাদন দক্ষতাঃ
মাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে প্রজনন ক্ষমতা ও অন্যান্য কারনে যেমন জেনেটির গঠন,আচরন,জনসংখ্যার গতিশীলতা, অন্তঃক্ষরা বিদ্যা, খাদ্য ইত্যাদি। উচ্চ বৃদ্ধির হার মাছের উৎপাদন বাড়ায়। দ্রুত বর্ধনশীল মাছের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি হয়।
মাছের গুনমানঃ
মাছের প্রজাতি,মাছের আকার ও আকৃতির ওপর মাছের গুনমান নির্ভর করে। মাছের দেহে ফ্যাট বা চর্বির পরিমান এবং ভোজ্যমাংসের গুনমান ও প্রকার নির্ধারন করা দরকার। মাছের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে চর্বির অবস্থান ও পরিমান ভিন্ন হতে পারে।
উন্নত প্রজাতির নির্বাচনঃ
মাছের উচ্চ গুনমানের জন্য ভালো প্রজাতির নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ন। সঠিক প্রজাতির নির্বাচন মাছের বৃদ্ধি ও গুনমান উন্নত করে।
ইন্টারমাসকুলার হাড়ঃ
কিছু কার্প প্রজাতির (বেশির ভাগই)মাছের দেহে মেরুদন্ড ছাড়াও ছোট ছোট হাড় (কাঁটা) থাকে। এগুলি ফিলেটিং করতে সমস্যা তৈরী করে। বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে এর সহজ সমাধান সম্ভব। সাধারনত ফিলেটে ১৬-১৮ শতাংশ চর্বি খুব বেশি বলে বিবেচনা করা হয়।
মাছের প্রজনন শুরুর সময়কালঃ
যৌন প্রজনন শুরু হলে মাছের বৃদ্ধির হার ও খাদ্যের রুপান্তর হার বৃদ্ধি পায়। সঠিক প্রজনন ও উপযুক্ত চাষাবাদের ব্যবস্থা মেনে চললে মাছের বৃদ্ধি ভাল হয়।
বাজারে মাছের মূল্যায়নঃ
মাছের দেহের চর্বির পরিমাণ বাজারে মাছের দামের ওপর প্রভাব ফেলে। বেশি চর্বিযুক্ত মাছের মান কমে যায়।
কার্প জাতীয় মাছের চাহিদা সবসময়ই বেশী। তাই চাষকৃত কার্পের গুনমান ও বৈশিষ্ট্য ভালো রাখা প্রয়োজন। মাছের প্রজাতি,শরীরের গঠন,আকার ও আকৃতি ছাড়াও গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল- স্বাস্থ্য,চর্বির পরিমান, মাছের ভোজ্যমাংসের গঠনবিন্যাস, জলাধারন ক্ষমতা,স্বাদ ও গন্ধ। আধুনিক যুগে চাষকৃত মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন জেনেটিক পদ্ধতি বা বংশগতি বিদ্যা ব্যবহার করা হচ্ছে যেমন- উন্নত মাছের বীজ বা চারা নির্বাচন, সংকরায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি ইত্যাদি। এই পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মাছের উন্নত প্রজাতি তৈরী সম্ভব। নিবিড় মাছ চাষের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। এখানে কম জল খরচের মাধ্যমে অধিক পরিমান মাছের উৎপাদন সম্ভব। কার্প গোত্রীয় মাছের দেহ মূল্যায়নের জন্য অধিক,উপযুক্ত মানগত এবং অভিন্ন পদ্ধতি জরুরি। একটি উপযুক্ত প্রক্রিয়া ও বিন্যাস অনুসরন করে ডাটা সংগ্রহ করা হয়েছে Central Institute of Freshwater Aquaculture Kausalyaganga,India প্রতিষ্টান থেকে এই মুল্যায়নের জন্য।
আরও পড়ুনঃ স্বল্প পরিসরে মাছ চাষ করুন, রইল সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা
মাছের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাপ অনুযায়ী কাটা অংশ
১। মস্তিষ্কের কাটা অংশ
২। দেহের মধ্যভাগের কাটা অংশ
৩। পায়ু অংশের কাটা অংশ
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য নিম্নলিখিত তথ্যগুলি প্রয়োজন-
-
Accession no (জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বিচার করে এই সংখ্যা প্রদান হয়)
-
Case Sheet No ( কততম কেস)
-
তারিখ
-
মাছের প্রজাতি
-
মাছের বয়স
-
উৎপাদন প্রকৃতি বা মাছচাষের প্রকৃতি
-
পুকুর প্রকার
-
লিঙ্গ (পুরুষ/স্ত্রী)
-
শ্রেনী-(সময়,ও ওজন অনুযায়ী)
-
শরীরবৃত্তিয় স্তর
-
দেহের ওজন (গ্রাম)
মাছের দেহের বাহ্যিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া তথ্যসমূহ-
-
সম্পূর্ন দৈঘ্য
-
আদর্শ দৈর্ঘ্য (এই দৈর্ঘ্যে মাছের লেজের দৈর্ঘ্য ধরা হয়না)
-
লেজের হাড় অবধি দৈর্ঘ্য
-
মাছের দেহের পরিধি
-
মাছের দেহে ভোজ্যমাংসের পরিমান
-
মাছের পেটের অংশের চর্বির পুরুত্ব
-
Condition Factotr, যা মাছের সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করে।
বিজ্ঞানী পাউলী ১৯৮৩ সালে এই ফর্মূলা দেন-
Codition Factor = 100W/L3 M W= মাছের ওজন
L= মাছের দৈর্ঘ্য
একে দৈর্ঘ্য-ওজন ফর্মূলাও বলা হয়।
মাছের দেহ মূল্যায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে মাছের পাখনা ও আঁশ ছাড়ানো হয়। তারপর পরিস্কার করে মাছের দেহ বিভিন্ন অংশে কেটে ভোজ্যমাংসের গুনমান এবং বাকি তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এগুলি একত্রে নিচে দেওয়া হল-
-
মাছের দেহে একত্রে হাড়ের পরিমান
-
মাছের দেহে একত্রে ভোজ্যমাংসের পরিমান
-
৩ জায়গার কাটা অংশের হাড়ের ও ভোজ্যমাংসের পরিমান
-
মাছের দেহে প্রোটিন,আর্দ্রতা,ইথার নিষ্কাশন জলধারন ক্ষমতা, পেশী ফাইবারের পরিধি
-
আলাদাভাবে ৩ স্থানের প্রোটিন,আর্দ্রতা,ইথার নিষ্কাশন,জলধারন ক্ষমতা,পেশি ফাইবারের পরিধি।
-
মাছের দেহের নাড়িভুঁড়ি,অন্ত্র,যকৃত,পটকা ও পাকস্থলীর ওজন
-
আঁশ ও প্রতিটি পাখনার ওজন
কিছু পরামর্শঃ
কার্প জাতীয় মাছের বানিজ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে প্রধানত মাছের গুনমানের উপর উপভোক্তারা অথবা ক্রেতারা বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। এর জন্য মাছের দেহ মূল্যায়ন জরুরি, যা হবে নির্ভুল। একটি কার্যকরী ও সঠিক প্রক্রিয়াকরনের জন্য প্রতি প্রজন্মের মাছ পরীক্ষা করতে হবে। ফলস্বরুপ মাছের গুনমান এবং বৈশিষ্ট্যের উপর বিশদে একটি তথ্যশালা তৈরি করা সম্ভব। এতে মাছের গুনমান উন্নত হবে, মাছ ছাষ শিল্প আরও কার্যকারী এবং লাভজনক হবে।
Share your comments