মৎস্য চাষ করলে বেশী লাভ করতে চান? সাফল্যের দিশা পেতে অনুসরণ করুন এই পদ্ধতির

যদি বিঘা প্রতি হিসাব করা যায়, তাহলে যেগুলি দরকার হয়, তা হল – চুন – ৪০ কেজি, মহুয়া খোল – ৩০০ কেজি, গোবর – ২০০ কেজি, ইউরিয়া ও সুপার ফসফেট – ৫ কেজি করে। এছাড়া চাই মাছের পোনা (সাধারণত একটি আঙ্গুলের সাইজের) অন্তত ১৫০০ টি। এরপরে চাষ চলাকালীন (৮ মাস পর, যদি চৈত্রতে শুরু হয়, তাহলে কার্ত্তিক মাস অবধি) প্রতি মাসের পরিচর্যায় – চুন ৫ কেজি, গোবর – ১০০ কেজি, ইউরিয়া – ২ কেজি, সুপার ফসফেট – ৪ কেজি, জাল টানা – ১ বার।

KJ Staff
KJ Staff
Fingerling
Fish Farming

বাঙালী মৎস্যপ্রিয়। শুধু অনুষ্ঠানেই নয়, দৈনন্দিন জীবনেও আমাদের বাঙালীদের মাছ ছাড়া প্রায় চলেই না। আমাদের দেশে মৎস্য চাষীভাইদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নারী ও পুরুষ মিলিয়ে অনেকেই এই পেশায় যুক্ত আছেন। কিন্তু অনেক সময় সঠিক তথ্যের অভাবে মৎস্যচাষে তাদের লাভ করা তো দূরের কথা, বরং তাঁরা সম্মুখীন হন বিভিন্ন সমস্যার, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার তাঁরা অনেকেই চাষ করতে গিয়ে লোকসানও করেন। ফলে তারা মাছ চাষ করতে শঙ্কাবোধ করেন, এর থেকে বিরত থাকতে চান। তবে এই মৎস্য চাষীদের কথা স্মরণে রেখে, নেওটিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. প্রতাপ কুমার মুখোপাধ্যায় আলোচনা করেছেন, মৎস্য চাষ বিষয়ক কিছু জরুরী প্রশ্ন এবং তার উত্তর সম্পর্কে। গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্যগুলির সহায়তায় মৎস্য চাষীরা হবেন অনেকটাই লাভবান।

এই প্রশ্ন এবং উত্তরগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল -

১) প্র. মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতির কি দরকার হয়?

উ. যদি বিঘা প্রতি হিসাব করা যায়, তাহলে যেগুলি দরকার হয়, তা হল – i) চুন – ৪০ কেজি, ii) মহুয়া খোল – ৩০০ কেজি, iii) গোবর – ২০০ কেজি, iv) ইউরিয়া ও সুপার ফসফেট – ৫ কেজি করে। এছাড়া চাই মাছের পোনা (সাধারণত একটি আঙ্গুলের সাইজের) অন্তত ১৫০০ টি। এরপরে চাষ চলাকালীন (৮ মাস পর, যদি চৈত্রতে শুরু হয়, তাহলে কার্ত্তিক মাস অবধি) প্রতি মাসের পরিচর্যায় – চুন ৫ কেজি, গোবর – ১০০ কেজি, ইউরিয়া – ২ কেজি, সুপার ফসফেট – ৪ কেজি, জাল টানা – ১ বার। এছাড়া সবচেয়ে প্রয়োজনীয় রোজকার পরিপূরক খাবার যোগান ( মোট মাছের ওজনের প্রায় ২% )।

২) প্র. পুকুরের আকারের সাথে মাছ চাষের সাফল্যের কি কোন সম্পর্ক আছে?

উ. হ্যাঁ; সাধারণত আমরা দেখি দুই থেকে চার-পাঁচ বিঘা মাপের পুকুরে সুচারুভাবে মাছ চাষ করা যায়। আর মাছের বৃদ্ধির হারও ভালো হয়। একেবারে ছোট পুকুরে মাছের বৃদ্ধির হার একটু কম হয় আর খুব বড়ো পুকুর বা দীঘিতে মাছ চাষ, চাষীর নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

৩) প্র. মাছ চাষ করতে চাইলে যে কয়েকটি প্রয়োজনের কথা মনে আসে, সেগুলি কি কি?

উ. সেগুলি হল ‘পঞ্চ-প’ – পুকুর, পোনা, পুঁজি, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ।

৪) প্র. বছরের কোন সময়টা মাছের বৃদ্ধি খুব বেশী হয়?

উ. সাধারণত গ্রীষ্মের শুরুতেই মাছের বাড় দ্রুত হতে আরম্ভ করে। জলের তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত মাছের বাড়ের পক্ষে খুব ভালো। জলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রীর কম হলে বা বেড়ে ৪০ ডিগ্রীর কাছাকাছি হলে আমাদের চাষযোগ্য মাছগুলি সাধারণত বাড়ে না।বলা যেতে পারে, এই তাপমাত্রাতে মাছের বিপাক ক্রিয়ায় নানা ধরণের অসুবিধা হয়। তাই এই সময়গুলিকে মাছ চাষের সহায়ক সময় বলা যায় না। বরং সহায়ক সময়টি হল ফাল্গুন থেকে আশ্বিন।

Fish pond
Pond In Good Condition For Fish Farming

৫) প্র. পুকুর কতটা গভীর হলে মাছ চাষ ভালো হয়?

উ. সাধারণ অভিজ্ঞতা অনুসারে বলা যায়, ৫-৬ ফুট গড় গভীরতার পুকুরে মাছের ফলন ভালো হয়। কম গভীরতায় তাপবৃদ্ধিজনিত সমস্যা হতে পারে, আর বেশী গভীরতায় সূর্যকিরণ প্রবেশের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটা ঠিক, গভীরতা ঠিক থাকলেও যদি মাছের ঘনত্ব বাড়ে বা প্রয়োজনের বেশী জৈব সার বা খাবার দেওয়ার ফলে, জলদূষণ দেখা দিতে পারে, আর তখন গভীরতা বজায় রেখেও মাছের বৃদ্ধি তো দূর অস্ত, মাছের টিকে থাকা দায় হয়ে যায়।

৬) প্র. মাছ চাষে জলের গুণমান ঠিক কেমন হওয়া উচিৎ?

উ. দ্রবীভূত অক্সিজেন সাধারণত পুকুরের জলে ৫-৭ মিলিগ্রাম (লিটার প্রতি) থাকা উচিৎ, একটু কম থাকলেও তেমন অসুবিধা নেই। তবে ৩ মিলিগ্রাম-এর কম হলেই মাছ খাবি খেতে আরম্ভ করে। এই সরল উপায় তা বোঝার কৌশল আর বুঝতে পারলে সেই মুহূর্তে করণীয় অন্তত একটি বিষয় – খাবার দেওয়া বন্ধ রাখা। জলে তৎক্ষণাৎ অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজন কোনভাবে ফোয়ারা বা ঢেউ সৃষ্টি করা অথবা পুকুরে সাঁতার কাটলেও হবে।

জল যদি ঈষৎ ক্ষারকীয় হয়, অর্থাৎ পিএইচ (pH) ৭.৩-৭.৮ পর্যন্ত থাকলে মাছ বেশ সাবলীল থাকে। খুব সহজেই নামমাত্র খরচে পিএইচ পেপারের সাহায্যে এটি দেখে নিতে পারেন। না হলে সহজ টোটকা উপায়ও আছে। যদি কোনভাবে জল একটু আম্লিক হয়ে পড়ে, অর্থাৎ পিএইচ ৭- এর নীচে চলে যায়, তাহলে পরিমাপ মতো চুন প্রয়োগ করতে হবে, আর যদি বেশী হয়ে যায়, তাহলে তেঁতুল, আমড়া, চালতা প্রভৃতি গাছের ডালপালা ছড়িয়ে সমস্যা মেটানো যায়।

জলের স্বচ্ছতা – খুব স্বচ্ছ পানীয় জলের মতো নয়, আবার কাদা গোলা ঘোলা জলও নয়। এটা এক মাঝারি স্বচ্ছতা। মাপের বিচারে (ঘরের তৈরী সেক্‌চি ডিস্কের) স্বচ্ছতা ৩০-৪০ সেমি. হল এক আদর্শ স্বচ্ছতা, যা থেকে আমরা জৈব সার, খাবার কতটা দিতে হবে, তার আন্দাজ করতে পারি।

৭) প্র. জলে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য আছে কিনা বোঝার সহজ উপায় কি?

উ. উদ্ভিদকণার পরিমাণ বেড়ে গেলে বা সে কারণে স্বচ্ছতা কম হলে জলের ওপরে হালকা সবুজ সর পড়তে পারে। আবার প্রাণীকণা যদি খুব বেশী হয়, বা জলের বাদামী বর্ণটি যদি চোখে পড়ে, অর্থাৎ উদ্ভিদকণা কম হয়ে যায়, তাহলে জলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরী হতে পারে না। উভয়ের সামঞ্জস্য থাকা এই কারণে দরকার, যাতে অক্সিজেনেরও ঘাটতি না হয়, আবার প্রাণীকণার পরিমাণও ঠিকঠাক থাকে। সেক্‌চি ডিস্ক দিয়ে মাপা যায় জলের স্বচ্ছতা, আর প্ল্যাঙ্কটন নেট দিয়ে পরিমাপ করা হয় প্রাণীকণার।  সাধারণত স্বচ্ছতা ৩০-৪০ সেমি. ও প্রাণীকণা ৫০ লিটার জলে ১.৫ মিলি. থাকলে খুব ভালো হয়।

৮) প্র. পুকুরে মাছের চারা পোনা মজুতের পরিমাণ কেমন হলে সবকিছুর ভারসাম্য (মূলত খাদ্যকণা ও অক্সিজেন) বজায় থাকে?

উ. যেহেতু পুকুরে সব মাছেদেরই পছন্দের কিছু জায়গা এবং পৃথক কিছু প্রিয় খাবার থাকে, তাই খাদ্যের নিরিখে মাছ নির্বাচন করাটাই সাধারণ প্রথা। যেমন- কাতলা খায় প্রাণীকণা, থাকে জলের ওপরের স্তরে। রুই খায় সবুজকণা, থাকে জলের মধ্য স্তরে। মৃগেল থাকে পুকুরের নীচের স্তরে, খায় নীচের দিকে পড়ে থাকা আধপচা সার, পাতা ইত্যাদি। তাই ১০ টি মাছ ছাড়লে ওপরে (কাতলা সিল্ভার কার্প উদ্ভিদকণা খেতে অভ্যস্ত) চার, মাঝে (রুই) তিন, নীচে (মৃগেল, বাটা, কালবোস ইত্যাদি) তিন – এভাবে ছাড়তে হবে। এক শতকে (৫২ শতক = ১ বিঘা) সর্বাধিক ৪০ টি, মোট ওজন প্রায় ৫ কেজি, মাছ ছাড়া যাবে। মাছ ছাড়ার সময় মার্চ-এপ্রিল।

৯) প্র. মাছ থাকাকালীন পুকুরের পরিচর্যা কিরকম হওয়া উচিৎ?

উ. প্রথমত, প্রতি মাসে একবার করে পরিমিত হলেও জৈব সার বা জৈব জুস দেওয়া দরকার। এতে খাদ্যকণার যোগান অব্যাহত থাকে এবং মাছের ফলনও ভালো হয়। এছাড়া বিঘা প্রতি জলে ৫ কেজি হারে চুন (আগের দিন রাত্রিবেলা ২৫ লিটার জলে চুন ভিজিয়ে রাখতে হবে) এবং ২ মাসে একবার পুকুরের তলায় মাটি রেকারের সাহায্যে আঁচড়ে দিতে হবে, এতে পুকুরের তলদেশের জমা গ্যাস বেরিয়ে যাবে। এর ফলে পুকুরে কখনও প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি হবে না। মাসে অন্তত একবার জাল টানবেন, এতে জলের গ্যাস দূষণ কিছুটা কমে আর মাছের ব্যায়ামও হয় এবং এই কারণে মাছের বাড়ও ভালো হয়।

১০) প্র. পরিপূরক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কতটা?

উ. অল্প পরিমাণে হলেও বাইরে থেকে নিয়মিত কিছু খাবার মাছকে দেওয়া দরকার। সহজলভ্য কিছু উপাদান যেমন- সরষে খোল, বাদাম খোল, তিল খোল, চিঁড়ের গুঁড়ো, চালের পালিশ কুঁড়ো, ভুট্টা গুঁড়ো, সয়াবিন গুঁড়ো – এর মধ্যে যে কোন একটি তৈল বীজের খোল ও সেই সঙ্গে চাল/চিঁড়ে/ভুট্টা- এর যে কোন একটি মিশিয়ে, সঙ্গে খুব সামান্য খাবার লবণ, চিটে গুড় এবং সুগন্ধিজাত একটি উপাদান, যেমন- একাঙ্গি ও মেথি ভাজা গুঁড়ো (খুবই অল্প পরিমাণে) মিশিয়ে অল্প গরম জল সহযোগে মেখে বল আকারে তৈরী করে, তারপরে সিমাই তৈরী মেশিনের সাহায্যে চাউমিন আকারে বানিয়ে শুকনো করে দিতে পারলে ভালো হয়। মেশিনটি অপরিহার্য নয়। ছোট ছোট বল আকারে বাঁশের তৈরী ঝুলন্ত ট্রে-এর সাহায্যে দেওয়া যেতে পারে।

Image Source - Google

PM KISAN পিএম কিষাণ যোজনার ষষ্ঠ কিস্তি পাবেন ১ লা আগস্ট থেকে, আপনার নাম রয়েছে তো এতে? এখনই নিবন্ধন করুন/স্থিতি পরীক্ষা করুন এই পদ্ধতিতে

Published On: 16 July 2020, 12:21 PM English Summary: Want to earn more profit from fish farming? Follow this approach to get the direction of success

Like this article?

Hey! I am KJ Staff . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters