দুগ্ধবর্তী গরু এবং মোষকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে গরু প্রতি দুধ উৎপাদন বাড়ে যা স্বাভাবিক ভাবেই চাষির লাভের পরিমান বৃদ্ধি করে। দুগ্ধবতী প্রাণীটির আবহাওয়ার সামান্য তারতম্যের কারনে সহজে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আবহাওয়ার তারতম্যের জন্য প্রাণীটির খাদ্যগ্রহনের হার, হজম পদ্ধতি, বিপাকের হার, শরীরের পুষ্টির চাহিদা ও উৎপাদন ক্ষমতা, বিভিন্ন দুগ্ধ উৎপাদনকারী হরমোন এবং সর্বোপরি তার প্রজনন ক্ষমতা প্রভাবিত হয়।
দুগ্ধবতী গরু (Dairy cows) এবং মোষের পর্যাপ্ত প্রবন্ধন ও পরিচর্যার কিছু নিয়মবিধি নীচে সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণিত হল -
দুগ্ধবতী প্রাণীটির দোহন (Milking Of Dairy Animals) -
-
উপযুক্ত পরিমাণ দুধ উৎপাদনের জন্য দুগ্মবর্তী প্রাণীটিকে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাবধানে সম্পূর্ণভাবে দোহন করা উচিৎ।
-
বেশি দুধ উৎপাদনকারী সংকর জাতীয় গরু বা মোষের (দিনে ১৫ কেজির বেশি) ক্ষেত্রে দোহনের হার দিনে ২-৩ বার করলে দুধ উৎপাদন ১৫%-২০% বৃদ্ধি পায়।
-
যে প্রাণীর পালানের আয়তন বড় ও চারটি প্রকোষ্ঠই সমান মাপের, পালানটি শরীরের সাথে ভালভাবে লেগে থাকে এবং দুধের শিরাটি স্ফীত ও স্পষ্ট সেই প্রাণীটিই দুধ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত।
-
মোষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে দুধ দোহনের জন্য সঠিক পর্যাপ্ত পরিমান উত্তেজনা দেওয়া প্রয়োজন। শীতের সময় দোহনের আগে ঈষৎ উষ্ণ গরম জলে পালানটি ধুয়ে নিলে দুধ নিঃসরণের সময় বৃদ্ধি পায়।
-
দুধ দোহনের আগে ও পরে পালান ও বাঁট ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। দোহনের পরে বাঁটগুলি আয়োডিন জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিন।
-
দুধ দোহকের হাত, পোশাক এবং দুধের পাত্রগুলি সর্বদা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দুধ দোহক নিয়মিত ভাবে পালান, বাট ও দুধের প্রতি খেয়াল রাখবেন, যাতে এর কোনটিতেই কোন রকম অস্বাভাবিকতা বা আঘাত বা প্রদাহের লক্ষণ না থাকে।
-
দোহনের স্থানটি শুকনো ও পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং সেই সাথে সঠিক নিকাশি ব্যবস্থা, হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। দুধ দোহনের স্থানটি অবশ্যই যে কোন পোকামাকড় মুক্ত রাখতে হবে।
-
মাস্টাইটিস বা ঠুনকো রোগ নির্ণয়ের জন্য দুধ দোহনের সময় নিয়মিত ক্যালিফোর্ণিয়া মাস্টাইটিস টেস্ট (সিএমটি)করাতে হবে।
আরও পড়ুন - দুগ্ধবতী গাভির বাসস্থানের গঠন ও তার পরিচর্যা (Maintenance of dairy cows)
যে ক্রমানুসারে খামারের গরুগুলিকে দোহন করা উচিত -
-
যে গরুগুলি প্রথম দুখ দিচ্ছে এবং যারা ঠুনকো রোগে আক্রান্ত নয়।
-
ঠুনকো রোগে আক্রান্ত নয় এমন ধরনের পুরনো গরুগুলি।
-
ঠুনকো রোগে আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু এখন কোন লক্ষণ নেই এমন গরুগুলি।
-
যে গরুণগুলির বাঁট থেকে অস্বাভাবিক দুধ নিঃসরণ হচ্ছে।
দুগ্ধবতী গাভির দোহন বন্ধ করে শুকিয়ে দেওয়ার উপকারিতা ও পদ্ধতি -
-
দুগ্ধবতী গাভিকে পরবর্তী বাচ্চা হওয়ার অন্তত পক্ষে ৬-৮ সপ্তাহ আগে দোহন বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে পরবর্তী বাচ্চা হওয়ার আগে স্তনগ্রন্থি পুনরায় পরিপূর্ণ হওয়ার সুযোগ পায় এবং পরের দুগ্ধ উৎপাদন কালে দুধের পরিমাণ বাড়বে।
-
গরু মা মোষটিকে হঠাৎ করে দোহন বদ্ধ না করে আস্তে আস্তে করা উচিৎ। প্রাথমিক ভাবে একসপ্তাহ দিনে একবার করে আর তারপরের সপ্তাহে একদিন অন্তর দোহন করে ধীরে ধীরে প্রাণীটিকে শোকাতে হবে।
-
দুগ্ধবতী গাভির দোহন বন্ধ করা বা শুকানোর সবথেকে ভালো উপায় হল দানাখাদ্য
-
একেবারে বন্ধ করে দিয়ে খাদ্যের পরিমাণ আস্তে আস্তে কম করা।
-
যে দুগ্ধবর্তী গাভির ম্যাসটাইটিসের প্রবনতা আছে তাকে অবশ্যই দোহন বন্ধ করার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর সাথে সাথে প্রসব পরবর্তী সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘ স্থায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
শুকিয়ে যাওয়া প্রাণীটিকে বাচ্চা হওয়ার আগে পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণ সবুজ গোখাদ্য এবং
দানাখাদ্য (১-২ কেজি) খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন - আধুনিক মাছ চাষে মাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োগ করুন ভাসা খাবার (Modern Fish Farming)
Share your comments