রাজ্যের মোট মৎস্য উৎপাদনের ৭৫% পশ্চিমবঙ্গ থেকেই আসে। তবে আমাদের রাজ্যের মাছ চাষীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে হলে তাদের মিশ্র চাষ করতে হবে। মিশ্রচাষ –এর অর্থ হল কোন মাছের সাথে সাথী ফসল হিসাবে কোন মাছ চাষ করলে কৃষকের আয় বাড়বে।
মিশ্রচাষের মধ্যে কোন কোন মাছ চাষ করা যায়, সে সম্পর্কে রইল তথ্য।
আমুর কার্প (Amur Carp) -
অতিরিক্ত চর্বি, মেদ ঝরিয়ে এক্কেবারে স্লিম হয়ে নতুন চেহারায় ফিরে এসেছে এই কমন কার্প বা আমেরিকান রুইয়ের নতুন নাম হয়েছে আমুর কার্প ( a new breed of Common Carp )। বর্তমান কমন কার্প বা আমেরিকান রুইয়ের অসুবিধে গুলি হল- এরা দ্রুত যৌন পরিপক্কতা পায় (<৬ মাস) ও বাজারযোগ্য আকার অর্জন করার আগে লালন পুকুরে ডিম ছেড়ে ফেলার ফলে সংখ্যা বেড়ে যায়, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব হয়, আর তার জন্য এদের বৃদ্ধি ভালো হয়না। এই সমস্যার জন্য বিজ্ঞানীরা দ্রুত বৃদ্ধি হার এবং বিলম্বিত পরিপক্কতা সম্পন্ন উন্নত জাতের কমন কার্প তৈরী করার চেষ্টা করে এই আমুর মাছ তৈরী করেছেন। পুকুরের নিচের তলার মাছ (যেমন মৃগেল) কম ছেড়ে বা বন্ধ রেখে এই মাছের মিশ্রচাষ অত্যন্ত লাভ জনক
চ্যানস চ্যানস বা মিল্ক ফিশ (Milk Fish) -
ফিলিপাইনের জাতীয় মাছ। নাম চ্যানস চ্যানস বা মিল্ক ফিশ। এই মাছ আবার ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ানেও দারুণ জনপ্রিয়। এ দেশের দক্ষিণ ভারতেও মেলে। ‘ডেকান হিলশা’ বা ‘দাক্ষিণাত্যের ইলিশ’ হিসেবেই পরিচিত।
প্রশান্ত মহাসাগরের বাসিন্দা এই চ্যানস চ্যানসের স্বাদের সঙ্গে ইলিশের নাকি আচরণেও মিল আছে। ইলিশের মতো চ্যানস চ্যানসও ঝাঁক বেঁধে ঘোরে। ইলিশের মতোই ডিম পাড়ার সময়ে দলবেঁধে মোহনার দিকে বা অপেক্ষাকৃত মিষ্টি জলে চলে আসে চ্যানস চ্যানস। ফলে স্বভাবগত দিক দিয়ে ইলিশের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে চ্যানস চ্যানস বা মিল্ক ফিশের। তার উপরে ইলিশের মতো চ্যানস চ্যানসেও যথেষ্ট কাঁটা রয়েছে।
এই মাছ মিষ্টি জলেও চাষ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে এর আকার একটু ছোট হয়। আঁশ এবং কাঁটাযুক্ত এই মাছের খাদ্যগুণও অনেকটাই বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
মিল্ক ফিশ শাকাহারী মাছ। জলাশয়ের তলদেশে জন্মানো শৈবাল, ল্যাব-ল্যাব খেয়ে এরা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নোনাজলে লবণের পরিমাণ কমবেশি হলে তা সহজেই সহ্য করে নিতে পারে এই প্রজাতির মাছ। সেই কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশে এই মাছের বেঁচে থাকার হারও বেশি। চাষের পুকুরে কম প্রোটিনযুক্ত খাবার দানা খাদ্য গ্রহন করে। ছয় মাসের চাষে বাজারজাত করণের উপযুক্ত ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন লাভ করে। ইলিশের মতোই দেখতে ও দেহে কাঁটার বিন্যাস থাকার জন্য এদের “দাক্ষিণাত্যের ইলিশ” হিসাবে গণ্য করা হয়।
১-২ সেন্টিমিটারের ধানীপোনা প্রতি বর্গ মিটারে ২০-৩০ পিস হিসাবে মজুত করা হয়। পুকুরের তলদেশে জন্মানো শৈবাল, ল্যাব ল্যাব এরা খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে। এই ধানীপোনা ৪-৬ সপ্তাহে ৫-৮ সেমি আকারের আঙুলে পোনায় পরিণত হয়, যেগুলি চাষের পুকুরে ছাড়ার উপযুক্ত।
৪-৬ মাসে , এই মাছ ৪০০-৫০০গ্রাম ওজন হয় ও ৪-৪.৫ টন/হেক্টর উৎপাদন পাওয়া যায়। টানা জাল বা ফাঁস জালের দ্বারা মিল্ক ফিশ ধরা যায়।
মুক্তোগাছা -
এটি কেরালার রাজ্য মাছ কারিমীন। ইংরেজী নাম পার্ল স্পট বা গ্রীন ক্রোমিড। মিঠাজল ও উপকূলবর্তী নোনাজলে চাষ করা যায়। এরা সর্বভুক, প্রধানত পচা জৈব বর্জ্য, জলজ শৈবাল ও উদ্ভিদ খায়। ৮-১০ মাসের সময়ের মধ্যে একটি মাছ ১২০-১৫০ গ্রাম হয়ে যায়, অর্থাৎ বাজারযোগ্য আকার অর্জন করতে পারে। পার্ল স্পট এর মিশ্রচাষ করা যায়, যা এই মাছ চাষিদের জন্য অতিরিক্ত আয় প্রদান করতে পারে। এটি একটি কম চর্বি, উচ্চ প্রোটিন খাদ্য, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা আমাদের হৃদয় ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে।
আরও পড়ুন - Pastured Poultry Farming: কিভাবে চারণভূমিতে হাঁস, মুরগি পালন শুরু করবেন?
মাছের ফলন থেকে ভালো আয় হলে পরবর্তী পর্যায়ে, তিনি আরও ভালোভাবে চাষের কথা চিন্তা করতে পারবেন। যার পক্ষে সম্ভব, তিনি পুকুর পাড়ে হাঁসের ঘর বানাতে পারেন। কয়েকটা হাঁস পুকুরে চড়ে বেড়ালে মাছের বাড় ভালো হয়, বাড়তি আয়ও হয়।
Share your comments