আধুনিক কৃষিতে পেস্ট (pest) এবং পেস্টিসাইড (pesticide) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রচলিত শব্দ। কৃষক, ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী সকলেই এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পোকামাকড়, ইঁদুর ইত্যাদি যারা গাছের ক্ষতি করে, তাদেরকেই pest হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরা আসলে শস্যশত্রু। আর এই শস্যশত্রু বা pest কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয় তাদের বলে পেস্টিসাইড বা কীটনাশক পদার্থ।
বিশ্বখাদ্য সংস্থা(FAO)-র তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশে মাঠে শস্য থাকাকালীন অবস্থায় প্রায় চল্লিশ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। আফ্রিকা ও এশিয়ার মত মহাদেশ গুলিতে এই ক্ষতির পরিমাণ ৫০ শতাংশের বেশী। শস্যশত্রুদের মধ্যে প্রধান হ’ল পোকামাকড়(insect), রোগজীবাণু (pathogens) এবং আগাছা(weeds). এই কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবুজ বিপ্লবকে ছুঁয়ে আজ পর্য্যন্ত ক্রমাগতই পেস্টিসাইড ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। সারা বিশ্বে পেস্টিসাইড ব্যবহারের পরিমাণ প্রতিবছরে প্রায় ২ মিলিয়ন টন এবং এতে ভারতের অংশ প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার শতাংশ। ভারতবর্ষে এখন (২০১২-১৩) প্রায় ৪৫,০০০ টন রাসায়নিক কীটনাশক পদার্থ ব্যবহৃত হয় ( প্রতি হেক্টরে ০.২৯১ কিলোগ্রাম), সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহার হল ৩৩৯০-৪১১০ টন ( প্রতি হেক্টরে ০.৫৫০ - ০.৬৭৯ কিলোগ্রাম)।
সবুজ বিপ্লবের সময়ে পেস্টিসাইড ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র্য, মাটির স্বাস্থ্য ও ফসলের গুণমানতা। এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে, এত রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা কি ঠিক হচ্ছে? এ প্রশ্ন শুধু ভারতে নয়, সারাবিশ্বের কৃষকসমাজ ও শস্যবিজ্ঞানীদের কাছে। তাই মনে হয় জৈব নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে সুসংহত রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ (Integrated Pest Management) আগামী দিনে একমাত্র সমাধানের রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
Share your comments