প্রাচীন কাল থেকেই ভারতে গোবর (Cow dung) ও গোমূত্র (Cow urine) নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পুজো -পাঠের আগে পুজোর জায়গা গোবর দিয়ে লেপে দেওয়া হত। পোকা-মাকড়, মশা-মাছি ভিড়তে পারত না। পূজার্চনার পক্ষেও আবশ্যকীয় ‘পঞ্চগব্য’- দুধ, দধি, ঘি, গোবর ও গোমূত্র ( গোচনা )। এখনও গ্রামে গ্রামে গৃহবধূরা প্রত্যূষে সদরে গোবরছড়া দিয়ে দিন শুরু করেন। গোবরের ঘুঁটে ও গোবরগ্যাস জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে চাষের কাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার চলছে। ফলে চাষের কাজে সহায়ক নানান ক্ষুদ্র প্রানীকূল ( insects, bacteria etc.) ধ্বংস হচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োগে উৎপন্ন ফসল , ফল-মূল, শাক-সব্জির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমেযাচ্ছে। উপরন্তু কৃষিতে ব্যবহৃত কীটনাশক খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানান রোগের সৃষ্টি করছে এহেন পরিস্থিতিতে জৈব চাষ মানুষের স্বাস্হ্যরক্ষা করতে পারে, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে। জৈব সার মাটির অম্ল ও ক্ষারের সূচক (পি.এইচ.) নিয়ন্ত্রণে রেখে নানান উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি করে। জৈবসার প্রয়োগে মাটির জলধারন ক্ষমতা ও তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। গাছের প্রধান খাদ্য – নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ (এন.পি.কে)। গৌণ খাদ্য – ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার। কৃষিবিজ্ঞানীরা দেখেছেন গরুর গোবরে নাইট্রোজেন ০.৪০%, ফসফেট ০.২০% ও পটাশ ০.১০% আছে। গরুর মূত্রে নাইট্রোজেন ১.০০% , ফসফেট ০.৫০% ও পটাশ ০.৩৫% রয়েছে। প্রতিটি গরুর গোবর ও গোমূত্র থেকে প্রাপ্ত জৈব সারের আনুমানিক পরিমাণ বছরে নাইট্রোজেন ৪২.৬৫ কেজি, ফসফরাস ১০.২৮ কেজি ও পটাশ ৩৪.৯৩ কেজি। এই জৈব সারের কৃষিতে প্রয়োগে উৎপাদিত ফসলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার ও হার্টের অসুখ প্রতিরোধ করে।
গোবর ও গোমূত্র দিয়ে নানান জৈব সার তৈরি করা যেতে পারে। গোমূত্র ১ লিটার, কাঁচা গোবর ১ কেজি, মিছরি ১০০ গ্রাম ও জল ১০ লিটার একত্রে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে ফসলের পাতায় স্প্রে করলে ফসল ভালো হয় ও রোগ থেকে রক্ষা করে। গোমূত্র, কাঁচা গোবর, সর্ষের খোল, চিটে গুড়, নিম খোল, বেসন, ছানাকাটা জল, ফেলে দেওয়া টক দইয়ের সাথে পরিমাণ মতো জল মিশিয়েও তরল জৈব সার তৈরি করা যায়। এই সার ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করলে ফসলে পোকা ও রোগ হয় না। ‘অমৃতপানী’ জৈব সার তৈরিতেও কাজে লাগে।
আরও পড়ুন রাসায়নিক ব্যবস্থার বাইরে কীটদমন করবেন কিভাবে
‘অমৃতপানী’ তৈরিতে লাগে ২ লিটার গোমূত্র, ১ কেজি কাঁচা গোবর, ২৫০ গ্রাম চিটেগুড় ও ১০ লিটার জল। চার দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। ১ লিটার ‘অমৃতপানী’-তে ৯ লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ফর নেচার এন্ড এনভায়রনমেন্ট স্টাডি (আইনেস) সুন্দরবণের হিঙ্গলগঞ্জে উপরোক্ত জৈবসার গুলির প্রয়োগে কার্যকরী ফল পেয়েছেন। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও রোগ থেকেও রক্ষা পেয়েছে।
রাসায়নিক সারের ব্যবহারে নষ্ট হওয়া মাটি জৈব সার ব্যবহারে উর্বরতা ফিরে পায়। দেখা গেছে পরপর তিন বছর যদি জৈবসার ব্যবহার করা যায় তবে সেই জমিতে আর রাসায়নিক সার ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা থাকে না এবং মাটিও পূর্বের স্বাভাবিক উর্বরতা ফিরে পায়।
তথ্যসূত্র : শ্রী বিজয় কুমার চন্দ্র
- রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments