গ্রামোফোন অ্যাপ কৃষকদের কাছে একটি বরদান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই অ্যাপটির মাধ্যমে তারা যে কেবল তাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারছে, তাই নয় তারা কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় উপদেশও নিতে পারছে। কেউ যদি এই অ্যাপ এর সুবিধা পেতে চায় তাহলে তাকে গুগুল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটিকে ডাউনলোড করতে হবে। তাছাড়া চাষিরা বিনাব্যয়ে গ্রামোফোনকে ১৮০০-৩১৫-৭৫৬৬ নম্বরে ফোনও করে সরাসরি তাদের চাষাবাদ জনিত সমস্যারও সমাধান পেতে পারেন।
খুব বেশিদিন হয়নি কৃষি বিশেষজ্ঞরা চাষিদের সয়াবিন চাষের বিষয়ে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন। এই তথ্যাবলীতে সয়াবিন চাষের জন্য জমি তৈরি থেকে শুরু করে সয়াবিনের প্রকারভেদ সম্বন্ধে একটি পূর্ণাংগ বিবরণ ছিলো। তাদের বিবরণ অনুযায়ী ভালো জল নিকাশী ক্ষমতা যুক্ত ঈষৎ কালো মাটি সয়াবিন চাষের জন্য আদর্শ মাটি হিসেবে বিবেচিত হয়। জমি যাতে ঈষৎ ঢালু হয় সেদিকে নজর দিতে হবে কেননা এই জমিতে ভালো জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। জমিতে PH এর পরিমাণ মাঝামাঝি থাকলেই ভালো অর্থাৎ জমিতে খুব বেশি আম্লিক ভাব অথবা খুব বেশি ক্ষারীয় ভাব যেন না থাকে। জমিতে গ্রীষ্মের শুরুতেই মই দিয়ে রাখতে হবে যাতে গোটা গ্রীষ্মে মাটির মধ্যে অবস্থিত রোগ-পোকা, ক্ষতিকর জীবাণু, ও আগাছাগুলি রৌদ্রে ও তাপে বিনষ্ট হয়ে যায়। এই ভাবে বর্ষাকালে জমির মাটিকে দুই থেকে তিনবার লাঙ্গল দিতে হবে।
উচ্চ গুণমানের জাতঃ ঠিক কোন জাতের সয়াবিন চাষ করা হবে তা নির্ভর করে কোন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে এবং সেখানকার জলবায়ুর ধরণ কেমন তার উপর। যে অঞ্চলের বৃষ্টিপাত ৬০০-৭০০ মিলিমিটার এর মধ্যে সেই অঞ্চলে ৯০-৯৫ দিনের মধ্যে ফসল পেকে যায়। যেই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ৭৫০-১০০০ মিলি মিটার সেই সব অঞ্চলে ফসল পাকে ১০০-১০৫ দিনের মধ্যে। আবার যে সব অঞ্চলের মাটি খুব শক্ত ও বৃষ্টিপাত ১২৫০ মিলিমিটার এর মধ্যে সেই সব অঞ্চলে ফসল সবথেকে বেশি দেরিতে পাকে। এই অঞ্চলে চাষের ক্ষেত্রে সবথেকে বেশি যত্নশীল হতে হয়, এবং এই সব অঞ্চলে সেই বীজ বপন করতে হয় যাদের অঙ্কুরোদ্গমের ক্ষমতা প্রায় ৭০% এবং প্রতি বর্গ মিটারে ৪০ টি গাছ পুঁততে হবে, এর জন্য একটু ভালো জাতের বীজ বপন করতে হবে।
বীজ বপনের হারঃ বীজের আকার হিসেবে বিভিন্ন ধরণের বীজ কিহারে পুঁততে হবে তা নিচে প্রদত্ত হলঃ
১) ছোট দানার বীজঃ ৭০ কেজি /হেক্টর
২) মাঝারি দানার বীজঃ ৭৫-৮০ কেজি / হেক্টর
৩) বড় দানার বীজঃ ৯০ কেজি /হেক্টর
বীজ বপনের সময়ঃ সয়াবিন বীজ পোঁতার আদর্শ সময় হল ২০ জুন থেকে জুলাই এর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে, যখন গড় বৃষ্টিপাত ৩-৪ ইঞ্চি থাকে। যদি বীজ বপনে দেরি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ১/৪ অংশ বীজ বপন করতে হবে এবং প্রতিটি সারির মধ্যেকার দূরত্ব হতে হবে ৩০ সেমি। দেরিতে রোপিত বীজের ক্ষেত্রে যদি এইভাবে কাজ করা যায় তবে ফসল তাড়াতাড়ি পাক্তে পারে।
বীজ বপন পদ্ধতিঃ সয়াবিন বীজ প্রধানত সারিতে পুঁতলেই ভালো। প্রতি সারির মধ্যেকার গড় দূরত্ব ৪৫ সেমি হওয়া উচিত এবং প্রতিটি বীজের গভীরতা হতে হবে ৩-৫ সেমি। এই কাজ করতে হলে বীজ বপন ও সারক্ষেপন যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, এতে বীজ ও কম্পোষ্ট সার একসাথে প্র্য়োগ করা সম্ভব। এর ফলে প্রথমে সার ও পরে বীজ বপন করা যায়। বীজ পোঁতার সময় বীজ ও সার একসাথে মিশে না যাওয়াই ভালো।
- প্রদীপ পাল
Share your comments