যে আমের জন্য চাষী ভাইবোনেরা ভাল দাম আশা করছেন তাকে পাড়ার আগে থেকে গুটি ধরার সময় থেকেই যত্ন নিতে হবে।
আমের গুটি ধরার পর ফল চয়নের আগে অবধি পরিচর্যা নিচে দেওয়া হল -
- এই সময় থেকেই সেচের জন্য লক্ষ্য রেখে ১৫-২০ দিন অন্তর নিয়মিত সেচ দেওয়া দরকার ফলে আমের পরিপুষ্টতা ও গুনমান সমৃদ্ধ হয়।
- কচি অবস্থা থেকেই সূলীপোকা বা ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হয় আর এর জন্য নিম ঘটিত যে কোন কৃষি বিষ সেই বিষের ঘনত্ব অনুযায়ী বলা প্রয়োগ মাত্রায় স্প্রে করুন। এতে পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষার সঙ্গে আমকে নিরাপদ বিষ প্রয়োগের ব্যবস্থাপনায় আনা যাবে।
- আমের গুটি বড় হতে শুরু করলেই চৈত্র-বৈশাখ মাসেই ফলের মাছির উপদ্রব শুরু হয়। ফলে এই সময় ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী পর্যায়ে আম বড় হলে ক্ষতিকারক রাসায়নিক প্রয়োগ থেকে যেমন বাঁচা যাবে তেমনই খরচ কমিয়ে বাগানকে তথা আমকে “Export Quality” তে উন্নীত করা যাবে।
- চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে পুরো আমের ফল তোলার মরশুম অবধি আম বাগিচায় হেক্টর প্রতি ১০-১২ টি (বিঘা প্রতি ২-৩ টি) ফলের মাছি ধরার ফাঁদ লাগাতে হবে। বাজারে নানা কোম্পানীর ফেরোমোন ফাঁদ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।
- উৎকৃষ্ট গুণমানের লক্ষে ফলের উপর কালো দাগ একটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আমের বিভিন্ন শোষক পোকাদের দ্বারা নিঃসৃত মধুর উপর ছত্রাক জমে আমের পাতার উপর কালো দাগ সৃষ্টি করে যা বৃষ্টির সঙ্গে ধুয়ে নেমে ফলের উপর কালো দাগ করে ফলের গুণমান তথা দাম কমিয়ে দেয়। প্রতি বাগিচাতেই কম বিস্তর পাতায় কালো ছোপ হয়। ফলে এগুলি চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জলে দ্রবনীয় সালফার + অ্যাসিফেট + গাম অ্যাকাসিয়া (০.২% + ০.০৫% + ০.৩%) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। চাষীভাই বোনেরা এসমস্ত রাসায়নিক প্রয়োগ না করতে পারলে শুধুমাত্র ভাতের মাড় বা স্টার্চ ২% স্প্রে করলে কিছুটা সুফল পাবেন।
এছাড়া অ্যানথ্রাকনোস বা ধ্বসা রোগ গাছের মুকুলে এলে প্রতিকার ব্যবস্থা ঠিকমত না নিলে তা আমে এসে ফলকে ক্ষতিগ্রস্থ করে বা পরবর্তী পর্যায়ে ফল পাকার সময় ভ্যাপসা আবহাওয়ায় পরিপূর্ণ ফলের গায়ে এই রোগের ফলে কালো দাগ পড়ে ফলগুলির গুণমান প্রভূত পরিমানে কমিয়ে দেয়। ফলের গুটি অবস্থা থেকেই কুয়াসা, হালকা বৃষ্টিপাত ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার ক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম ১ গ্রাম প্রতি লিটারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এর সঙ্গে ২ মিলি অ্যাসিফেট + ইমিডাক্লোপ্রিডের মিশ্র কীটনাশক মিলিয়ে এই দুই রাসায়নিক স্প্রে আমের গুটি অবস্থায় রোগ ও পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে এক সুরক্ষা কবচের কাজ করবে।
তথ্য সহায়তা : ড. শুভদীপ নাথ
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments