পেঁয়াজ চাষের জমিতে মৌপালনের জন্য কিছু তথ্য ও পরামর্শ –
- একটি পরীক্ষা থেকে জানা গেছে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের জমিতে মৌমাছির বাক্স রাখলে আড়াই গুন বেশি বীজ পাওয়া যায়। বিঘে প্রতি একটি মৌমাছির বাক্স রাখলেই ভালো কাজ দেবে।
- পেঁয়াজে শোষক ও অন্যান্য পোকা দমনের জন্য চাষিরা যথেচ্ছ পরিমাণে রাসায়নিক বিষ তেল প্রয়োগ করেন। এটি মৌমাছির জন্য অত্যন্ত হানিকর। এর প্রতিকার হিসাবে পেঁয়াজে ফুল ফোটার আগেই সমস্ত রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধ করুন। বিকল্প হিসাবে নীল আঠা ফাঁদ ব্যবহার করুন।
- জমিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়ান ও সুষম সার প্রয়োগ করুন। এতে পেঁয়াজ ফুলের মধুর স্বাদ মৌমাছিকে আকৃষ্ট করবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত পটাশ সারের প্রয়োগে পেঁয়াজ ফুলের মধুর স্বাদের হেরফের হয়। এতে মৌমাছি পেঁয়াজ ফুল এড়িয়ে যায়।
- যে সমস্ত অঞ্চলে অনুখাদ্যের ঘাটতি আছে (বিশেষত বোরনের) সেখানে মাটিতে মিশিয়ে অথবা স্প্রে করে অনুখাদ্য প্রয়োগ করুন। এতে বীজের পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়বে।
- পেঁয়াজ জমির আশেপাশে আমবাগান, সর্ষে ক্ষেত, মৌরি ক্ষেত ইত্যাদি থাকলে মুশকিল। মধুর পরিমাণ ও গুণগত উৎকর্ষতার কারনে মৌমাছি পেঁয়াজ ক্ষেতে না এসে ঐ সব জায়গায় ভিড় জমাবে। মৌমাছিকে আকৃষ্ট করতে জমিতে মৌরি (কন্দ লাগানোর সময়ই) ও ধনে (কন্দ লাগানোর ২০-২২ দিন পর) লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে, ১০ সারি পেঁয়াজ এরপর ২ সারি মৌরি বা ধনে এই হিসাবে লাগাতে হবে।
- পেঁয়াজের পুষ্পমঞ্জরি শুকিয়ে এলে ও ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে জমিতে ফেলে রাখবেন না। এতে বীজ ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হবে।
- জমিতে সঠিক সময়ে কন্দ রোপণ করুন। দেরি করলে বীজ পাকার সময় কালবৈশাখীর প্রকোপে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বিপুল লোকসানের সম্ভবনা।
- পেঁয়াজ বীজ চাষের জমিতে ছাঁচি পেঁয়াজ লাগাবেন না। কন্দ কম পড়লে বাজার থেকে কিনে ঘাটতি মেটাতে যাবেন না। এতে সুখসাগর বা যে জাতের বীজ করতে চাইছেন সেটি তার নিজস্বতা হারাবে। এর সঙ্গে আশেপাশের জমিতে কেউ অন্য জাতের পিঁয়াজের বীজ যাতে না করে সেই জন্য সচেষ্ট হন। বীজের জন্য পেঁয়াজ চাষ করলে একটি জমি থেকে অন্য জমির মধ্যে যাতে সরকারী ভাবে বলে দেওয়া নিদিষ্ট দূরত্ব বজায় থাকে তা লক্ষ্য রাখুন। নিদিষ্ট করে দেওয়া দূরত্বটি মৌমাছিদের চারণ ভূমি। ঐ দূরত্ব পেরিয়ে এসে মৌমাছি এক জমির পেঁয়াজের পরাগ অন্য জমিতে ছড়াতে পারে না।
- বড় জমিতে মৌমাছির বাক্স বসান। এ ছাড়া মৌমাছির জন্য অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং / অথবা কৃত্রিম বাসা তৈরি করুন।
- আপনার জমিতে যদি প্রচুর মৌমাছির আনাগোনা থাকে তবে তবে সেটি প্রকৃতিগত ভাবে স্বাস্থ্যকর। মৌমাছি পরিবেশের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি জৈব সূচক।
তথ্য সহায়তায় : জয়দীপ মণ্ডল (অধ্যাপক - পল্লী শিক্ষা ভবন, বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন, পশ্চিমবঙ্গ)
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments