স্বল্প মেয়াদী ফসল সবজি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ব্যতিরেকে ব্যবসায়ীক উৎপাদন কিছুটা কঠিন হলেও দীর্ঘমেয়াদী সুস্থির কৃষির লক্ষ্যে ফলবাগানকে জৈব বাগান হিসেবে সহজেই গড়ে তোলা যেতে পারে।
যে জমিতে ফল বাগান করা হবে তাতে বিঘা প্রতি ২০ কুইন্টাল গোবরসার বা ১০ কুইন্টাল কেঁচোসারের সঙ্গে ট্রাইকোডার্মা + নিমখোল বা দানা ( সুপারিশ অনুযায়ী) দিয়ে গভীর চাষ দিলে ভালো। না পারলে যতটা পারবেন করবেন। চাষ জমি হলে আগে ডালশষ্য জৈব উপায়ে চাষ করে নেবেন।
আম চাষের জৈব প্যাকেজ –
- দেশি জাতের জন্য ১০ মিটার x ১০ মিটার ও হাইব্রিড জাতের জন্য ৫ মিটার x ৫ মিটার ২.৫ কেজি নিমখোল বা নিম দানা ২০০ গ্রাম + ৫০ গ্রাম ভালো সয়েল কন্ডিশনার বা হিউমিক অ্যাসিড + ৫০ গ্রাম জীবানু সার দিয়ে গাছ বসাতে হবে।
- গাছের পাতা – ডাল নিয়ন্ত্রণে রেখে হিউমিক অ্যাসিড ও গ্রোথ এনহ্যান্সার স্প্রে ।
- বাগানের মাঝে শীতকালীন সবজি বিশেষত: শুঁটিজাতীয় ও অন্য মরশুমে ডালশষ্য চাষ।
- বাগানের চারদিকে জৈব বেড়া লেবু / করমচা গাছের গড়ে তোলার সঙ্গে ফল আসতে শুরু করলে ফলের মাছির ফেরোমন ফাঁদ লাগানো ও মৌমাছি চাষ।
- সার ব্যবস্থাপনা – বর্ষার আগে ও বর্ষার পর চারদিকে রিং নালা করে দেবেন দু ভাগে।
প্রথম বছর – গোবর সার ২৫ কেজি বা কেঁচোসার ১০ কেজি + ২ কেজি সরষে বা নিমখোল, ৫০ গ্রাম জীবানুসার, ৫০ গ্রাম হিউমিক অ্যাসিড, জৈবউৎসেচক দানা ৫০ গ্রাম , এসবের সঙ্গে ১০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা। এই সার প্রতি বছর সামান্য করে বাড়িয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
১০ বছর থেকে গোবর সার ২০ কেজি বা কেঁচোসার ৫ কেজি + ২ কেজি সরষে বা নিমখোল, ১০০ গ্রাম জীবানুসার, ১০০ গ্রাম হিউমিক অ্যাসিড, জৈবউৎসেচক দানা ১০০ গ্রাম , এসবের সঙ্গে ১০০ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা।
লিচু চাষের ক্ষেত্রে আমের মতোই তবে চারা বসানোর সময় ২ কেজি পুরোনো লিচুর মাটি দিন।
নারকেল চাষে – আমের মতই ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দ্বিতীয় বছর থেকে কাঠের ছাই ১ কেজি থেকে বাড়িয়ে ৩ কেজি প্রয়োগ করবেন। গাছ বড় হলে লাল শিকড় তুলে জৈব মাকড় নাশক রুটফিডিং এর সাথে জৈব উৎপাদক মাকড়নাশক ও রোগপোকানাশক স্প্রে করতে হবে।
পেয়ারা চাষের জৈব প্যাকেজ –
- আমের মতই জমির পূর্ববর্তী ব্যবস্থা অবলম্বন।
- ৬ মিটার x ৬ মিটার বা অধিক ঘন ৩ মিটার x ৩ মিটার বা বর্তমানে সুবিধাজনক ঘনত্বে ২ ঘনফুট গর্তে ১০ কেজি গোবর সার / ৫ কেজি কেঁচোসারে ২৫ গ্রাম জীবানু সার + ২৫ গ্রাম ভালো জৈব সয়েলকন্ডিশনার দানা বা হিউমিক অ্যাসিড + ২৫ গ্রাম জৈব এনজাইমের সাথে ৩/৪ কেজি নিম খোল প্রয়োগ।
- সার ব্যবস্থাপনা - বর্ষার আগে ও পরে সমান দুভাগে ভাগ করে রিং নালা কেটে প্রয়োগ-
প্রথম বছর – গোবর সার ২০ কেজি / কেঁচো সার ১০ কেজি + খোল ১ কেজি, জীবানুসার ৫০ গ্রাম, হিউমিক অ্যাসিড ৪০ গ্রাম , জৈব উৎসেচক দানা ৪০ গ্রাম প্রতি বছর সমান অনুপাতে বাড়িয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
ষষ্ঠ বা সপ্তম বছর থেকে - গোবর সার ২৫ কেজি / কেঁচো সার ১০ কেজি + খোল ২ কেজি, জীবানুসার ৭০ গ্রাম হিউমিক অ্যাসিড ৭০ গ্রাম , জৈব উৎসেচক দানা ৭০ গ্রাম প্রতি বছর সমান অনুপাতে বাড়িয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- পেয়ারার ক্ষেত্রে ফল আসলে আবশ্যিক ভাবে ফলের মাছির ফেরোমন ফাঁদ বিঘাতে ২টি লাগানো ও প্রাথমিক বাড়বৃদ্ধির বছরে জৈব রোগনাশক স্প্রে। মাঝে ফুল থেকে ফল আসার সময় নিমবীজ নির্যাস বা নিমতেল (নিমজাত কৃষিবিষ) ১০০০০ পি পি এম ২ মিলি / লিটার জলে স্প্রে।
- ফুল আসার পর ফলের বাড় বৃদ্ধিতে জৈব বাড়বৃদ্ধি কারক স্প্রে ফলের উৎপাদনের সঙ্গে গুণগত মান বৃদ্ধি করে যা চাষির লাভ বাড়ায়।
পেয়ারার মত প্যাকেজ লেবু, জামরুল, বাওকুল, সবেদা ও অন্যান্য ফলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, তবে ফলের মাছির ফেরোমন ফাঁদ এক্ষেত্রে না লাগালেও চলবে কিন্তু বিশেষ ফলে রোগপোকার জন্য জৈব স্প্রে জরুরী।
আরও পড়ুন মাটির অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের সমতা বজায় রাখার উপায়
কলা চাষের জৈব প্যাকেজ – বর্তমান যুগে ব্যবসায়ীক সিঙ্গাপুরী কলা চাষে টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে তৈরি গ্রান্ড-নাইন বা G-9 কলার জাত চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে তবে এই কলা একটু বেশী খাদ্য উৎপাদন চায় তাই পুরো রাসায়নিক সার ব্যতিরেকে এই জাতের পুরো ফলন প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দেশি মর্তমান, কাঁঠালী ও অন্যান্য সিঙ্গাপুরীর সঙ্গে কাঁচকলায় জৈব প্রযুক্তিতে ভালই ফলনের সম্ভবনা।
- কলা চাষের জমি আগে চুন দিয়ে শোধন করে মাসখানেকে গভীরচাষ দিয়ে ২০-২৫ কুইন্টাল গোবরসার বা ১৫ কুইম্টাল কেঁচোসারের সাথে ২০০ কেজি নিমখোল (না পেলে নিমদানা ২ কেজি) + ২ কেজি হিউমিক অ্যাসিড + ২ কেজি জৈবউৎসেচক ও ৫০ কেজি ছাই মিশিয়ে দিতে হবে।
- গাছ বসানোর সময় ২০ কেজি গোবর সার / ১০ কেজি কেঁচোসার ট্রাইকোডার্মা ও সিউডোমোনাস ৫০ গ্রাম করে প্রতিটি মিশিয়ে সঙ্গে ২৫ গ্রাম হিউমিক অ্যসিড + ২৫ গ্রাম নিমদানা + ২৫ গ্রাম জৈব উৎসেচক + পরিমান মত জীবানুসার দিয়ে চারা রোপন ।
সার ব্যবস্থাপনা –
প্রথম মাসে – ১ কেজি নিমখোলের সাথে ২৫ গ্রাম জৈব উৎসেচক ২৫ গ্রাম গ্রোথ এনহান্সার জৈব দানা প্রতি মাসে বাড়িয়ে অষ্টম মাসে – ২ কেজি নিমখোলের সাথে + ৫০ গ্রাম জৈব উৎসেচক + ৫০ গ্রাম জৈব দানা
- কলার ছড়া পড়লে দেদো পোকার আক্রমণ রোধে নিমবীজ নির্যাস বা নিমজাত কৃষি বিষ ২/৩ বার ৭ দিন ব্যবধানে স্প্রে ও পারলে পূর্ণতায় কাঁদি ঢাকা দিতে হবে।
- গাছের মোচা নামার আগে অবধি ভিতরে শুঁটিজাতীয় সবজি বা ডালশষ্য চাষ। খুব বেশী তেউড় না রেখে ১/২ টি সঠিক তেউড় পরের ফসলের জন্য বাছে রাখতে হবে।
পেঁপে চাষের ক্ষেত্রে কলার মতই ব্যবস্থা অবলম্বন করুন তবে সার ৫/৬ মাস অবধি দিলেই চলবে। এক্ষেত্রে হলুদ ফাঁদ গাছ প্রতি একটি করে টাঙ্গান।
তথ্যসূত্র: ড: শুভদীপ নাথ (সহ উদ্যানপালন অধিকর্তা, উত্তর ২৪ পরগণা)
- রুনা নাথ (runa@krishijsgran.com)
Share your comments