সুসংহত উপায়ে ধানের রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ বা আই পি এম পদ্ধতির সার্থক রূপায়নের জন্য যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেগুলি হল নিম্নরূপ :
- সহনহীল জাত নির্বাচন।
- পরিচর্যামূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
- যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
- জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Organic farming)
- রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
(ক) প্রথমত ধানের কয়েকটি রোগ সহনশীল জাতের নামের তালিকা দেওয়া হল –
(১) বাদামী শোষক পোকা সহনশীল জাত :
জাতের নাম |
স্থায়ীত্ব (দিন) |
দানার আকৃতি |
আই ই টি – ৭৫৭৫ |
১৩০ – ১৩৫ |
লম্বা-সরু |
আই আর – ৩৬ |
১১৫ – ১২০ |
লম্বা-সরু |
মানস সরোবর |
১৫০ – ১৫৫ |
বেঁটে-মোটা |
দয়া |
১৩০ – ১৩৫ |
মাঝারি-সরু |
শক্তিমান |
১২০ – ১২৫ |
বেঁটে-মোটা |
ভূবন |
১৩০ – ১৩৫ |
মাঝারি-সরু |
নাগার্জুন |
১৪৫ – ১৫০ |
লম্বা-সরু |
প্রতাপ |
১৩০ – ১৩৫ |
মাঝারি-সরু |
(২) শ্যামাপোকা সহনশীল জাত :
জাতের নাম |
স্থায়ীত্ব (দিন) |
দানার আকৃতি |
নীলা |
৯০ – ৯৫ |
মাঝারি মোটা |
শক্তি |
১৩৫ – ১৪০ |
বেঁটে মোটা |
আই আর – ৩৬ |
১১৫ – ১২০ |
লম্বা-সরু |
ভূবন |
১৩০ – ১৩৫ |
মাঝারি-সরু |
(৩) ভেঁপু পোকা সহনশীল জাত :
জাতের নাম |
স্থায়ীত্ব (দিন) |
দানার আকৃতি |
আই আর – ৩৬ |
১১৫ – ১২০ |
লম্বা-সরু |
হীরা |
৮০ – ৮৫ |
লম্বা – মোটা |
দয়া |
১৩০ – ১৩৫ |
মাঝারি-সরু |
সারথী |
১১৫ – ১২০ |
ম্ঝারি মোটা |
ললাট |
১২০ – ১২৫ |
লম্বা-সরু |
(৪) ছত্রাক ঘটিত ঝলসা রোগ (Blast) সহনশীল জাত
জাতের নাম |
স্থায়ীত্ব (দিন) |
দানার আকৃতি |
আই আর – ৩৬ |
১১৫ – ১২০ |
লম্বা-সরু |
আই আর ৬৪ |
১১৫ – ১২০ |
লম্বা-সরু |
আই আর ২২৩৩ |
১০০ – ১০৫ |
মাঝারি-মোটা |
হীরা |
৮০ – ৮৫ |
লম্বা – মোটা |
(৫) খোলা ধ্বসা রোগ (Sheath Blight) রোগ সহনশীল জাত : আই আর – ৪২, আই আর ৩৬, মানস সরোবর, শতাব্দী।
(৬) পামরী পোকা সহনশীল জাত : শস্যশ্রী, মানস সরোবর।
(৭) মাজরা পোকা সহনশীল জাত : শস্যশ্রী, সবিতা, ললাট, বিরাজ, যোগেন, মদ্দিরা, তুলসী।
(৮) জীবানু ঘটিত ধ্বসা (BLB) সহনশীল জাত : আই আর ৩৬, ক্ষীতিশ, কুন্তী, অজয়া।
(৯) টুংরো রোগ (RTD) সহনশীল জাত : রত্না, হীরা, আই আর ৩৪, বিক্রমাচার্য্য, রসি, মন্দিরা সুরেশ।
(১০) বাদামী চিটে রোগ সহনশীল জাত: আই আর ৩৬, রসি, সুরেশ।
(১১) নিম্নলিখিত রোগ – পোকা প্রবণ জাতগুলি চাষ করবেন না। এতে চাষের ঝুঁকি থাকতে পারে।
ইরি, চায়নাবোর, আই আর ৫০, পন্থ ৪, বি ১১, পঙ্কজ, লালস্বর্ণ, স্বর্ণমাসুরী ইত্যাদি।
(খ) পরিচর্যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গুলি নিম্নরূপ :
- শস্য পর্সায়ের পরিবর্তন করা।
- ফসল কাটার পর গ্রীষ্মকালীন চাষ দেওয়া ও আল ছাঁটা এবং ধন গাছের মুড়ি বা নাড়াগুলি এক জায়গায় জমা করে সার গাদায় দিয়ে দেওয়া দরকার (পুড়িয়ে ফেলা উচিত নয় এতে পরিবেশ দূষিত হয়)। এগুলি পরবর্তী ফসলে রোগ পোকা ছড়ায়।
- বোনার পূর্বে বীজ শোধন এবং শংসিত বীজ ব্যবহার। শুকনো ধানেরর ক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম কার্বান্ডাজিম মিশিয়ে নিতে হবে। ভেজা বীজের জন্য ১ কেকি বীজ, ১.৫ লি জলে ১.২ গ্রাম কার্বান্ডাজিম বুষ মিশিয়ে ৮-১০ ঘন্টা ভিজাতে হবে।
- বীজতলায় চারা শোধন অবশ্য কর্তব্য বিশেষ করে ঝলসা, খোলধ্বসা টুংরো রোগ প্রবন এলাকায় ও বাদামী শোষক পোকা, শ্যামাপোকা ও ভেঁপু পোকা প্রবণ এলাকার জন্য। এর জন্য রাসায়নিক দানাবিষ অবশ্যই প্রয়োগ করুন।
- মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে, সুষম সার বিশেষত: নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করতে হবে। পটাশ ঘটিত সার অবশ্যই প্রয়োগ প্রয়োজন।
- জৈব সার বা সবুজ সার হিসাবে ধান চাষের আগে ধৈঞ্চা চাষ করা যেতে পারে অথবা ধানের সঙ্গে অ্যাজোলা চাষ করা যায়। জীবানু সার যেমন অ্যাজোটোব্যক্টর, অ্যজোস্পাইরিলাম ও পি এস বি ব্যবহার করা উচিত।
- মূল জমিতে চাষ দিয়ে আগাছা ইত্যাদি পচিয়ে কাদা করে রোয়া উচিত। অল পরিষ্কার রাখুন।
- সঠিক সময়ে, সঠিক বয়সের ৪-৫ পাতার সুস্থসবল চারা সঠিক দূরত্বে ও সারিতে এক থেকে দেড় ইঞ্চি গভীরে রোয়া করা দরকার।
- সঠিক সময়ে সেচ প্রয়োগ করুন। জমিতে বেশী জল ধরে রাখা ধান চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে মাঝে মাঝে জমি থেকে জল বের করে মাটি ঘেটে দেওয়া ভালো।
- সঠিক মাত্রায় চাপান সার দিন। ঝলসা, খোলাপচা বা খোলা ধ্বসা ইত্যাদি রোগ ও শোষক পোকা দেখা দিলে নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগ না করে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ প্রয়োগ করে জমি ঘেটে দিতে হবে।
- রুনা নাথ
Share your comments