সংস্কৃত শব্দ এই পঞ্চগব্যের অর্থ “গাভীজাত পাঁচটি উপাদানের মিশ্রণ”। এটি প্রস্তুত করা হয় গরু থেকে সরাসরি প্রাপ্ত তিনটি উপাদান, যথা গোবর গোমূত্র ও দুধ এবং তা থেকে উপজাত দুইটি উপাদান, যথা দই ও ঘিয়ের সঠিক মাত্রায় মিশ্রণ ও পচনের মাধ্যমে। পরম্পরাগত ভাবে বৈদিক যুগ থেকে পঞ্চগব্য ধর্মীয় ও কৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পঞ্চগব্য এমন একটি জৈব পণ্য উপকরণ যা ফসলের বৃদ্ধি সহায়ক হিসেবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এবং জৈব চাষিদের কাছে খুব জনপ্রিয়ও।
মূলত নয়টি উপকরণ যথা - গোবর গোমূত্র দুধ,দই, ঝলা গুর,ঘি, কলা, ডাবের জল ও জল দিয়ে পঞ্চগব্য প্রস্তুত করা যায়। এই উপকরণগুলিকে যথাযথ পরিমাণে ও পরিমাপে মিশ্রিত করে ব্যবহার করলে বিস্ময়কর ফল পাওয়া যায়। সাত কেজি গোবরের সাথে এক কেজি গোরুর দুধের ঘি মিশিয়ে সকাল ও সন্ধেবেলা ভালোভাবে নাড়িয়ে তিন দিন রেখে দিতে হবে। তিন দিন পড়ে এর সাথে ১০ লিটার গোমূত্র ও ১০ লিটার জল যোগ করে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। এই ১৫ দিন ধরে নিয়মিত সকাল ও সন্ধেবেলা ভালোভাবে মেশাতে হবে। ১৫ দিন পড়ে মিশ্রণের সাথে তিন লিটার গোরুর দুধ,দু লিটার দই,তিন লিটার কচি ডাবের জল, ও তিন কেজি ঝলা গুর ও ১২ টি সুপরিপক্ক কলা মিশিয়ে ৩০ দিন রেখে দিলেই পঞ্চগব্য প্রস্তুত। উপরিলিখিত উপকরণগুলিকে কোনও প্রশস্ত উন্মুক্ত মাটির পাত্রে বা সিমেন্টের চৌবাচ্চায় বা প্লাস্টিকের পাত্রে মেশানো যেতে পারে। যে পাত্রই হোক সেটিকে মুখখোলা অবস্থায় ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। মিশ্রণটিকে দিনে দুবার সকাল ও সন্ধেবেলা ভালোভাবে ঝাঁকাতে হবে। এইভাবে ৩০ দিন পর পঞ্চগব্য নামক উৎকৃষ্ট তরল জৈব সার এর জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে মোষ থেকে উপজাত কোনও দ্রব্য যেন না যোগ করা হয়। তাছাড়া এক্ষেত্রে দেশী গরু থেকে প্রাপ্ত উপাদানের উৎকর্ষ, বিদেশী গোরুর থেকে বেশি হয়ে থাকে। উন্মুক্ত পাত্রে রেখে দেওয়ার সময় তারজালির চাদর বা প্লাস্টিকের মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মিশ্রণে মাছি ডিম না পড়ে এবং শূককীট না জন্মায়। ঝলা গুড়ের পরিবর্তে আখের রসও ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
কৃষি বিভাগ
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
- জয়তী দে
Share your comments