দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের নিরিখে কৃষির ভূমিকা ক্রমশ হ্রাসমান হলেও ভারতীয় অর্থনীতির মূল মেরুদন্ড হল কৃষি। আবার কৃষি প্রধান দেশ ভারতবর্ষের কৃষি অনেকটাই নির্ভর করে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের উপর। পৃথিবীতে চীনের পরেই জনসংখ্যার দিক দিয়ে ভারতের স্থান দ্বিতীয় , তাই ‘খাদ্য সুরক্ষার বিষয়’ ভারতের মত জনবহুল দেশে এক অত্যন্ত জরুরী ও প্রাথমিক কর্মসূচি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন সংস্থান ও শিল্পের চাহিদার জন্য চাষ যোগ্য জমির ক্রম সংকোচন ও বিগত এক দশক ধরে ফসলের উৎপাদনশীলতার স্থিতিশীল অবস্থা কৃষির উপর এক ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করেছে। যার নিট ফল হল চাষ হয়ে দাঁড়িয়েছে গতিহীন ও অলাভজনক। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে গেলে কৃষি জমিকে ধারাবাহিক সুসংহত ও সুস্থিত ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির দিকে সুস্পষ্ট ভাবে নজর দিতে হবে আর এই কর্মসূচীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রতি একক জমির জন্য ব্যবহৃত জল ও সারের সর্বোত্তম উৎকর্ষতা বৃদ্ধি।
১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার এই প্রেক্ষাপটে চাষে নিয়ে এসেছে এক নতুন মাত্রা। কৃষি বিজ্ঞানের এই বিশেষ প্রযুক্তির প্রয়োগ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণমানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে যা দেশের খাদ্য সুরক্ষা অভিযানের এক অত্যন্ত ইতিবাচক দিক হতে পারে।
সারা পৃথিবীতে মিষ্টি জলের যা আধার রয়েছে তার মাত্র ৪ শতাংশ ভারতে পাওয়া যায় আর এই ৪ শতাংশ মিষ্টি জলের প্রায় ৮০ % ব্যবহৃত হয় কৃষিতে। যেখানে সারা পৃথিবীতে মিষ্টি জল সেচ সেবিত ফসলের উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি ৪ টন, সেখানে ভারতের গড়পরতা ফসলের উৎপাদনশীলতা হেক্টর প্রতি ৪ টন, সেখানে ভারতের গড়পরতা ফসলের উৎপাদনশীলতা মাত্র ২.৫ টন প্রতি হেক্টর এবং সেচের উৎকর্ষতা মাত্র ৩০ শতাংশ। সুতরাং দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে ও কৃষিকে অধিক উৎপাদনশীল, সুস্থায়ী ও আরো লাভজনক করতে সেচ ব্যবস্থার প্রসার সহ ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সারের প্রচলন এক বিপুল সম্ভাবনার সঞ্চার করেছে।
একথা অনস্বীকার্য যে, পাশাপাশি সারা পৃথিবী ব্যপি মানুষের খাদ্য অভ্যাসের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন ফল ও সবজির ব্যপক চাহিদা। উন্নতমানের শংকর জাত ও অধিক উৎপাদনশীল জাতের বীজ ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব শস্য প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি অনুসেচ বাহিত ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার ব্যবহার কৃষিকে দেবে এক নতুন মাত্রা যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সুস্থায়ী কৃষি ব্যবস্থার অভিযানকে করবে গতিশীল। এই কর্তব্যের নিরিখেই ফসলের সম্পূর্ণ পুষ্টি লাভকে ত্বরান্বিত করে ফসলের বর্ধিত গুনমাণ ও অধিক উৎপাদন তথা প্রতি একক জমি থেকে কৃষকদের আয়কে বাড়াতে বর্তমান বাজারে এসেছে সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে তৈরি ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সারের সম্ভার যথা – ইউরিয়া ফসফেট, এন. পি. কে – ১৮ : ১৮ : ১৮, সালফেট অফ পটাশ, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির সুফল গ্রাম বাংলার কৃষকদের মাঠে প্রদর্শন ও পৌঁছে দেবার লক্ষে প্রায় দুই শতাধিক ট্রায়াল বা প্রদর্শন ক্ষেত্রের আয়োজন করা হয় যেখানে গড়ে ৮ শতাংশ থেকে প্রায় ৩৬ শতাংশ পর্য্যন্ত ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফসলের গুণে ও মানে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
পশ্চিমবঙ্গে ১৩ টি জেলায় ৬৩ টি গ্রামে মোট ফসলের উপর ২০১ টি প্রদর্শন ক্ষেত্রের আয়োজন করা হয়। গ্রাম ও ক্ষেত্র বিশেষে প্রদর্শন ক্ষেত্রগুলির আয়তন ছিল ২০০ – ৪০০ বর্গমিটার। পর্যাপ্ত জৈবসার সহযোগে মূল জমি তৈরি করে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ফসলের প্রয়োজনীয় মূল সার ও চাপান সার প্রয়োগ করার পাশাপাশি চাষিভাইরা এইসব প্রদর্শন ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার শতকরা ১ শতাংশ হারে ফলিয়ার স্প্রের মাধ্যমে ফসলের মুখ্য বৃদ্ধি কালে প্রয়োগ করে কমপক্ষে ৮ শতাংশ থেকে সর্বাধিক ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বর্ধিত ফলন পেয়েছেন এবং ফসলের আকার, রঙ, উজ্জ্বলতা, চয়োনোত্তর সংরক্ষণ ক্ষমতা প্রভৃতি গুণেও এসেছে প্রভুত উন্নতি। ১ ও ২ নং টেবিলে বিভিন্ন ফসলের উপর আয়োজিত ১০০ শতাংশ জলে দ্রবনীয় সার ব্যবহার প্রদর্শন ক্ষেত্রের ফল এই সার ব্যবহারের কার্যকারিতা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারনা পাওয়া যায়।
এন পি কে ১৯ : ১৯ : ১৯, ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার ১ শতাংশ হারে ফলিয়ার স্প্রের মাধ্যমে ২ বার স্প্রে করলে গড়ে ১৩ – ১৪ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি সম্ভব। কারণ এই সার –
- ফসলকে দেয় সতেজ সবুজতা।
- ফসলের গুরুত্বপূর্ণ দশায় যথা ফুল আসা ও ফল ধারণে যথাযথ পুষ্টির যোগান দেয়।
- ফসলের লুকানো খিদে মিটিয়ে উৎসেচকের কর্ম ক্ষমতা বাড়ায় আর তাতে নিশ্চিত হয় ফসলের ফলন ও অধিক লাভ।
টেবিল – ১
১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় ইউরিয়া ফসফেট ট্রায়ালের ফল -
ফসল |
ট্রায়ালের সংখ্যা |
চারা লাগানোর কত দিন পর প্রথম স্প্রে দ্বিতীয় স্প্রে |
ফলন কুইন্টাল / হেক্টর কৃষক ক্ষেত্র ট্রায়াল ক্ষেত্র |
উৎপাদন বৃদ্ধি (%) |
||
শশা |
৩ |
৩৪ |
৫১ |
১২৩ |
১৪৩ |
১৬ |
আলু |
৭৪ |
৩১ |
৪৭ |
২৩৪ |
২৫৩ |
৮ |
টমাটো |
১২ |
৩১ |
৪৬ |
১৬৪ |
১৮৫ |
১৩ |
গম |
৫ |
৩০ |
৪৬ |
২৪ |
২৬ |
৮ |
আম |
৫ |
|
|
১০৪ |
১২৩ |
১৮ |
পটল |
৪ |
৩৫ |
৫০ |
১১৩ |
১২১ |
১৫ |
বীন |
১ |
৩১ |
৪৫ |
৪৫ |
৫০ |
১০ |
ব্রকোলি |
১ |
৩২ |
৪৭ |
১০ |
১৪ |
৩৬ |
বেগুন |
১০ |
৩৯ |
৪৭ |
১৯৭ |
২২৭ |
১৫ |
ফুলকপি |
১৮ |
৩১ |
৪৮ |
১২৬ |
১৪১ |
১৩ |
লঙ্কা |
৬ |
৩১ |
৫৩ |
৮৮ |
৯৮ |
১১ |
বাঁধাকপি |
৭ |
৩১ |
৪৪ |
১১৮ |
১৩৭ |
১৫ |
এন পি কে সারের প্রধান কাজ কী?
ফসলের স্বাভাবিক পুষ্টি ও জীবনচক্র সম্পন্ন করতে কমবেশি ১৬ টি খাদ্যোপাদান প্রয়োজন। যার মধ্যে ৬টি উপাদান সবচেয়ে বেশি লাগে। এদের মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সহজপ্রাপ্য কিন্তু বাকি ৩টি উপাদান নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশের (এন পি কে সার) যোগান মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় সার হিসাবে প্রয়োগ করা হয়। নাইট্রোজেনের প্রধান কাজ প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং পাতা ও কান্ডের সবুজ অংশ বা ক্লোরোফিল তৈরিতে সাহায্য করা। ফসফরাসের প্রধান কাজ ফসলের দেহকোষ গঠনে সাহায্য করা ও শিকড়, ফুল ও বীজ তৈরিতে অংশগ্রহণ করা। পটাশিয়াম উদ্ভিদের খাদ্য চলাচলে সাহায্য করে ও ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মাটিতে ব্যবহৃত এন পি কে সার ফসলের পুষ্টি লাভে অসম্পূর্ণ কেন?
মাটিতে প্রয়োগ করা সারের বেশ কিছুটা অংশ মাটির জলের সাথে চুঁয়ে বা জমির ঢাল বরাবর জলের স্রোতের সাথে প্রবাহিত হয়ে বা সরাসরি মাটি থেকে বাষ্পীভূত হয়ে নষ্ট হয়। মাটির লবণতা, ক্ষারত্ব, অম্লত্ব অস্বাভাবিক থাকলে বিভিন্ন খাদ্য মাটিতে আবদ্ধ হয়ে যায়। আবার মাটির কম তাপমাত্রা, শিশির, বাতাসের অভাব, খরা, জমে থাকা জল, ছত্রাক বা কৃমির আক্রমণে ফসলের শিকড়ের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হয় ফলে মাটিতে পর্যাপ্ত সার থাকা সত্ত্বেও বা প্রয়োগ করা সত্ত্বেও তা ফসলে উপলব্ধ হয় না এবং ফসল বিভিন্ন কারণে তার গুরুত্বপূর্ণ দশায় মাটি থেকে সম্পূর্ণ পুষ্টি পায় না, তৈরী হয় লুকানো খিদে। আর এই লুকানো খিদে মিটাতেই অত্যন্ত কার্যকরী হয় ১০০ শতাংশ জলে দ্রবনীয় সার।
১০০ শতাংশ জলে দ্রবনীয় সার কীভাবে কাজ করে?
এই সার ১০০ শতাংশ জলে দ্রবনীয় হওয়ায় ধুয়ে মুছে বা উবে কোন প্রকারে অপচয় হয় না এবং ফসল পায় ১০০ শতাংশ খাদ্য। স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করা এই সার কিউটিকল ও পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়ে পাতার কোষে কোষে পৌঁছে ফসলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দশার যথা – ফুল আসা, ফল ধরায় যথার্থ পুষ্টির যোগান দেয় ও ফসলের বিভিন্ন বিকাশ পর্যায়ে সাহায্য করে যা কৃষককে ফসলের উচ্চ ফলন পাওয়াকে নিশ্চিত করে। এই সার ফসলকে অনুর্বর মাটিতেও যথার্থ পুষ্টি দানের মাধ্যমে বাড়তি ফলন দিতে সাহায্য করে। ধান, ফুল, ডালশস্য, তৈলবীজ প্রভৃতি চাষে ইউরিয়া ফসফেট অত্যন্ত কার্যকরী, পক্ষান্তরে উচ্চলাভ যুক্ত ফসল ও পটাশ পছন্দকারি ফসল যথা সবজি, আলু, কচু, আদা, ওল, বাদাম, ফল ও অন্যান্য বাগিচা ফসলে এন পি কে ১৮ : ১৮ : ১৮ ফসলের ফলন ও গুণমান বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী।
পশ্চিমবঙ্গে অনুসেচ ব্যবস্থার প্রচলন এখনো জনপ্রিয় হয়নি। স্বল্পমূল্যের অনুসেচ ব্যবস্থার প্রসার বিশেষত সবজি ও ফল চাষে একান্ত জরুরী। অনুসেচ বা বিন্দু সেচ ব্যবস্থার পরিকাঠামো গড়ে তুলে ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার গাছের গোড়ায় গোড়ায় শিকড়ের কাছে জলসেচের সাথে প্রয়োগ করতে পারলে জল ব্যবহারের কার্যকারিতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সার ব্যবহারের উৎকর্ষতা অত্যন্ত উচ্চ মানের হবে, তাতে কমবে খরচ ও বাড়বে উৎপাদনশীলতা ও কৃষকের আয়।
১০০ শতাংশ জলে দ্রবনীয় সারের সংরক্ষণ ও প্রয়োগ বার্তা -
এই সার প্যাক করা ব্যাগে অনেক বছর মজুদ করা যায়, তবে খোলা ব্যাগ ব্যবহার করে ফেলতে হবে বা ব্যাগের মুখ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে অন্যথা সারের উপাদান নষ্ট হতে পারে বা আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। দীর্ঘদিনের মজুতে সার জমে গেলেও এর মিশ্রণ যোগ্যতা, মৌল কণা উপাদানের পরিমাণ ও কার্যকারিতা অপরিবর্তিত থাকে। এই সার সকাল ১০ টার আগে ও বিকাল ৪ টের পরে স্প্রে করা বাঞ্ছনীয়। ঝোড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির দিনে স্প্রে করা উচিত নয়। সারের সর্বোচ্চ শোষণ ও আত্তিকরণের জন্য স্প্রে-র সময় পাতার নীচের পৃষ্ঠতল সম্পূর্ণ ভিজানো দরকার। সঠিক মাত্রায় স্প্রে করা উচিত কারণ মাত্রা বেশি হলে ফসলের যেমন ক্ষতি হতে পারে তেমনি মাত্রা বা ঘনত্ব কম হলে স্প্রে অকার্যকর হবে। উপযুক্ত মাত্রা হল প্রতি লিটার জলে ১০ গ্রাম অর্থাৎ ১ শতাংশ।
ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও গুণমান উন্নত করার পাশাপাশি ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার পরিবেশবান্ধব ও অতি সহজে পাতায় স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করা যায় বলে এই সারের ব্যবহার কৃষকদের কাছে শীগ্ঘ্রই আবশ্যিক হয়ে দাঁড়াবে। পাতার মাধ্যমে শোষিত বা অনুসেচ সহযোগে ব্যবহৃত এই সার পাতার ক্লোরোফিল সংশ্লেষণ ও শর্করা উৎপাদন বাড়িয়ে উদ্ভিদের জল শোষণ ক্ষমতা বাড়ায় ফলে ফসলের পরিবহন তন্ত্রের মাধ্যমে পুষ্টি মৌল কণার আত্তিকরণের বৃদ্ধি ঘটে, ফসল পায় উপযুক্ত পুষ্টি।
টেবল – ২ (ইফকোর দ্বারা আয়োজিত প্রদর্শন ক্ষেত্রের ফলাফল)
১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় এন পি কে ১৯ : ১৯ : ১৯ ট্রায়ালের ফল
ফসল |
ট্রায়ালের সংখ্যা |
চারা লাগানোর কত দিন পর প্রথম স্প্রে দ্বিতীয় স্প্রে |
ফলন কুইন্টাল / হেক্টর কৃষক ক্ষেত্র ট্রায়াল ক্ষেত্র |
উৎপাদন বৃদ্ধি (%) |
||
কলা |
৩ |
১৮০ |
২২০ |
৪৪০ |
৫০৩ |
১৪ |
ভিন্ডি |
২ |
৩১ |
৪৭ |
৭৫ |
৮৪ |
১২ |
উচ্ছে |
১ |
৩১ |
৪৭ |
৫০ |
৫৬ |
১২ |
বেগুন |
৩ |
৩১ |
৫০ |
১৯৭ |
২২২ |
১৩ |
ফুলকপি |
১ |
৩১ |
৪৭ |
১০০ |
১০৯ |
৯ |
লঙ্কা |
২ |
৩৪ |
৫০ |
৮৫ |
৯২ |
৯ |
শসা |
২ |
৩১ |
৪৭ |
১২০ |
১৪০ |
১৭ |
আলু |
১০ |
৩১ |
৪৭ |
২১৪ |
২৩৬ |
১০ |
বোরো ধান |
১ |
৩৭ |
৪৭ |
৪২ |
৮৭ |
১১ |
টমেটো |
৩ |
৩১ |
৪৭ |
১৩০ |
১৪০ |
৮ |
পিঁয়াজ |
৩ |
৩১ |
৪৭ |
১৪৩ |
১৫৭ |
১০ |
গাঁদা |
২ |
২৫ |
৪১ |
৭৫ |
৮৮ |
১৭ |
দ্রুত চলমান পুষ্টিকণার অভাবজনিত লক্ষণ লক্ষিত হয় ফসলের পুরানো পাতায় এবং অপেক্ষাকৃত মন্থর পুষ্টিকণার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয় ফসলের কচি পাতায় ও মুকুলে। এটা দেখা যায় যে উদ্ভিদের গর্ভাবস্থায় শেকড়ের সক্রিয়তা প্রায়শই স্লথ হয় অথচ এই সময়ে ফসলের পুষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগের ফলে ফসলের লুকানো খিদে মেটানো যায়। অপেক্ষাকৃত অনুর্বর মাটিতেও এই সার ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগ্রহণ করে। এক কথায় মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত জৈব সার সহ জমিতে সুসম সার প্রয়োগ ও ফসলের গুরুত্বপূর্ণ দশায় ফলিয়ার স্প্রের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার এর ব্যবহার একে অপরের পরিপূরক। পাতার মাধ্যমে শোষিত ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ফসলের শারীরবৃত্তিয় দশা, সৌর বিকিরণ, রোগ-পোকার আক্রমণ, স্প্রে করার সময়, আবহাওয়ার অবস্থা বিবেচনা করে ফসল ও জাতের কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত মাত্রায় এই সার ব্যবহার করতে হবে। কোনজেট নজলের মাধ্যমে কম আয়তন স্প্রে করলে ও সাথে সামান্য সারফেকট্যান্ট দিলে পাতার পর্যাপ্ত প্রয়োজন যে কৃষি শ্রমিকদের অপ্রতুলতা ও মজুরী বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে স্প্রেকে অধিক কার্যকরী করতে পাওয়ার স্প্রেয়ার সহযোগে ফলিয়ার স্প্রের প্রসার অত্যন্ত উপযোগী হবে।
পরিশেষে একথা স্মরণ করতে হবে যে পশ্চিমবঙ্গ হল মূলত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের রাজ্য যেখানে ৯০ শতাংশ জমি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের। কাজেই রাজ্যের কৃষিকে মজবুত করতে গেলে এই ৯০ শতাংশ জমির চাষে পরিবেশ বান্ধব স্বল্প ব্যয় ভিত্তিক এই সার উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করে ফসলের উৎপাদনশীলতা ও মানের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে হবে। আর এই সার ব্যবহারে কৃষক অভ্যস্ত হয়ে গেলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে কমিয়ে আনতে পারেন। এতে মাটির সুস্থতার যেমন উন্নতি সম্ভব তেমনই ১০০ শতাংশ জলে দ্রবণীয় সার সাবসিডি মুক্ত হওয়ায় দেশের ও দশের সকলের সাশ্রয় হবে।
- পার্থ ভট্টাচার্য
মুখ্য আঞ্চলিক প্রবন্ধক, ইফকো
- অভিষেক চক্রবর্তী
Share your comments