বন্য জীব জন্তুর হাত থেকে ফসল রক্ষার উপায় হতে পারে "আনারস" চাষ

আনারস, বন্যজীব, ফসল, চাষবাস, রক্ষার, আগাছানাশক, ভিটামিন প্রয়োগ,

KJ Staff
KJ Staff
Elephant

এই মুহুর্তে গোটা ভারত বর্ষে প্রায় ৮ হাজার ফরেস্ট ভিলেজ রয়েছে।পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটা ৩৫৩৪ টি।(২০১৪-১৫ বার্ষিক রিপোর্ট)।এবং আমাদের দেশে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষ এইসব বন বস্তি এলাকায় বাস করে।এদের অধিকাংশই কৃষিকাজ ও কৃষিকাজ সংক্রান্ত শ্রমিক হিসেবে দৈনন্দিন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।পশ্চিমবঙ্গ তথা বাংলায় এই বন বস্তি গুলোর অধিকাংশ মানুষ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়।বর্তমানে বেশ কিছু বড় চা বাগান এর অবস্থা ভালো নয় এবং মজুরী সংক্রান্ত সমস্যা ঐতিহাসিক ভাবে জটিল।চা বাগানের মালিক পক্ষ এবং সরকার এইসব সমস্যা সমাধানে কখনোই আন্তরিক ছিল না।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নুন্যতম দৈনিক মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে দিনের পর দিন।ফলে চাহিদা ও প্রয়োজন বিস্তার ফারাক থাকায় এইসব এলাকায় শুধু শ্রমিকের পলায়ন নয়,বন্য জীব জন্তু হত্যা, কাঠ চুরি, নারী ও শিশু পাচার প্রভৃতি অপরাধ মূলক কাজ হয়ে আসছে দশকের পর দশক ধরে। এইসব এলাকায় যেসব চা বাগান জমি অলাভজনক বা বন্ধা হয়ে গেছে, কিংবা এইসব বন এলাকায় যেসব জমিতে চাষ আবাদ শুধু মাত্র বন্য প্রাণী অত্যাচারে র কারণে হয় না সেই সব জমিতে "আনারস চাষ" করা যেতে পারে। এটি একটি লাভজনক ফসল ও এর চাহিদা দেশ বিদেশে ভালো।শুধু ফল হিসেবে নয় এর পাতা থেকে তৈয়ারী হয় একধরনের সুতো যা তুলো,রেশম, পাট এর বিকল্প হতে পারে বস্ত্র শিল্পের জন্য। ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই আনারসের একটি দুটি প্রজাতি হাতি, বানর ইত্যাদি এই ফসল তেমন ভাবে নষ্ট করে না এটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে।বন বস্তি এলাকায় এই ধরনের বিকল্প চাষ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এলাকাবাসী দের নজর দেওয়া উচিৎ।এবার আসুন আমরা জানি এই আনারস চাষ নিয়ে:

আনারস এক প্রকারের গুচ্ছফল। এর অন্যান্য নাম - Pineapple, Anannas, Ananus, Bahunetraphalam, Anamnasam । এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Ananas comosus (L.) Merr. এই ফলের আদি জন্মস্থল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ। তবে বর্তমানে ক্রান্তীয় অঞ্চলে বিশ্বের সর্বত্রই এর চাষের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে।

চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি :

জলবায়ু – আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও চারা লাগানো যায়। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও চারা লাগানো যায়।

মাটির প্রকৃতি – দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

জাত : হানি কুইন, জয়েন্ট কিউ, মরিশাস, ঘোড়াশাল প্রভৃতি।(আমাদের পশ্চিমবঙ্গে জয়েন্ট কিউ,মরিশাস জাত গুলি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা লাভজনক)

১. হানিকুইন: পাকা আনারসের শাঁস হলুদ বর্ণের হয়। চোখ সূঁচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় এক কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস।

২. জায়েন্ট কিউ: পাকা আনারস সবুজাভ ও শাঁস হালকা হলুদ, চোখ প্রশস্ত ও চেপ্টা। গড় ওজন প্রায় দুই কেজি। গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাঁটাবিহীন।

৩. ঘোড়াশাল: পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা রঙের হয়। চোখ প্রশস্ত গড় ওজন প্রায় ১.২৫ কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত, চওড়া ও ঢেউ খেলানো থাকে।

anna nas

বংশ বিস্তার:

স্বাভাবিক অবস্থায় আনারসের বীজ হয় না। তাই বিভিন্ন ধরণের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। সাধারণত পার্শ্ব চারা, বোঁটার চারা, মুকুট চারা ও গুঁড়ি চারা দিয়ে আনারসের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এর মধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

জমি তৈরি:

১. মাটি ঝরঝরে করে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করে নিতে হবে যাতে বৃষ্টির জল কোন স্থানে জমে না থাকতে পারে।

২. জমি থেকে ১৫ সে.মি. উঁচু এবং এক মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে।

৩. এক বেড থেকে অপর বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হবে।

চারা রোপণ পদ্ধতি

১. এক মিটার প্রশস্ত বেডে দুই সারিতে চারা রোপণ করতে হবে।

২. সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে আনারস চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচ ও নিষ্কাশন:

* শুকনা মৌসুমে আনারস ক্ষেতে সেচ দেওয়া খুবই প্রয়োজন।

* বর্ষাকালীন সময়ে বেশি বৃষ্টির সময় গাছের গোড়ায় যাতে জল জমে না থাকে সেজন্য নালা কেটে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগবালাই ও তার প্রতিকার:

-এর ফলটি পচন ধরে যা সেরাটোসাইসিস প্যারাদোসা নামক ছত্রাকের আক্রমণে হয়।

-এর দমনে ভালো ছত্রাকনাশক এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

-এছাড়া নিয়মিত বাগান পরিষ্কার করা।

-বাগানে জল জমতে না দেওয়া।

-বোর্ডমিক্সার চারা রোপণ এর আগে  প্রয়োগ। এছাড়া আনারস চাষের জমিতে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র, কৃষি অধিকর্তা, কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক, বা কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় এ পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময়ের পরিচর্যা

১. চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সে.মি. পরিমাণ রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে।

২. আনারসের জমি সর্বদা আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

ফল সংগ্রহ

সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস পাকে। পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে।

উৎপাদিত ফলের পরিমাণ

প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩-৪ টন হানি কুইন আনারস ও ৪-৫ টন জায়েন্ট কিউ আনারস জন্মে।

 

(*তথ্য:উইকি)

- অমরজ্যোতি রায়

Published On: 29 October 2018, 11:38 AM English Summary: Save crop from wild animals by farming pineapple

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters