রাসায়নিক ভাবে মাটি দুই প্রকারের অবস্থায় থাকে – আম্লিক এবং ক্ষারীয়। অম্লমাটি ও ক্ষারমাটি চিহ্নিত করা হয় পি. এইচ. স্কেলের মাধ্যমে। এই স্কেলের সর্বনিম্ন ঘর ‘০’ , সর্বোচ্চ ঘর ‘১৪’ এবং মধ্যবর্তী স্থানটি হল ‘৭’ নম্বর ঘর। কোন মাটির পি. এইচ. ‘০’ থেকে ‘৭’ এর মধ্যে হলে আতে আম্লিক মাটি বলে আর ‘৭’ থেকে ‘১৪’ এর মধ্যে হলে তাকে ক্ষারীয় মাটি বলে। মাটির পি. এইচ. ‘৭’ হলে তাকে প্রশম মাটি বলে। ভালো মাটির পি. এইচ. ‘৬.৫’ থেকে ‘৭’ এর মধ্যে থাকা উচিত, এ কথা মনে রাখা দরকার যে কোন মাটি দীর্ঘদিন প্রশম অবস্থায় থাকতে পারে না।
মাটির অম্লত্ব/ ক্ষারত্বের সমতা না থাকলে মাটিতে খাদ্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও গাছ মাটি থেকে খাদ্য উপাদানগুলো সঠিক মাত্রয় নিতে পারে না। তাই , কোন খাদ্য উপাদানের অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই দেখা দরকার মাটির পি. এইচ. ঠিক আছে কিনা।
মাটির পি. এইচ. ‘৭’ থেকে ‘১৪’ এর মধ্যে হলে মাটি ক্ষারীয় হয়ে যায়। ক্ষারীয় মাটিতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হয় এর সাথে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে জিপসাম প্রয়োগ করতে হবে। আর মাটির পি. এইচ. ৬.৫ এর কম হলে মাটি আম্লিক হয়ে যায় তাই পরীক্ষার ভিত্তিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে। জৈব পদার্থ যুক্ত মাটির আম্লিক হওয়ার প্রনণতা বেশী কারণ বিভিন্ন জৈব পদার্থের পচনের সময় কিছু জৈবিক অ্যাসিড তৈরী হয় যা মাটিতে মিশে মাটিকে আম্লিক করে তোলে। একই কারণে রুক্ষ ক্ষারীয় মাটিতে জৈব পদার্থ (জৈব সার) মেশালে মাটি প্রশম হয়। অম্লমাটিতে গাছের পক্ষে খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা একদিকে যেমন কঠিন, তেমনই বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু অম্ল মাটিতে খুব দ্রুত বিস্তারলাভ করে, তাই মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ চুন প্রয়োগ বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
চুন সাধারণত গ্রীষ্মকালে (ফাল্গুন – বৈশাখ) মাসে , জমিতে যখন ফসল থাকেনা তখন প্রয়োগ করতে হয়, তবে প্রয়োজন মতো অল্প অল্প করে চুন সারা বছরই ফসল চাষের আগে জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করা যেতে পারে। বেশী মাত্রায় চুন প্রয়োগের পর ১মাস সেই জমিতে চাষ করা উচিত নয়।
অম্ল মাটিকে প্রশম করতে পোড়া চুন (CaO) বা কলিচুন (Ca(OH)2) প্রয়োগের মাত্রা নিচের সারণীতে দেওয়া হল –
মাটির পি. এইচ. |
বেলে মাটি |
বেলে দোঁয়াশ |
দোঁয়াশ |
পলি দোঁয়াশ |
||||
পোড়াচুন (কুই/বিঘা) |
কলিচুন (কুই/বিঘা) |
পোড়াচুন (কুই/বিঘা) |
কলিচুন (কুই/বিঘা) |
পোড়াচুন (কুই/বিঘা) |
কলিচুন (কুই/বিঘা) |
পোড়াচুন (কুই/বিঘা) |
কলিচুন (কুই/বিঘা) |
|
৪.০ |
২.১৭ |
২.৮৬ |
৪.২০ |
৫.৫৩ |
৫.৮৫ |
৭.৭০ |
৭.০৫ |
৯.২৭ |
৪.৫ |
১.৮০ |
২.৩৭ |
৩.৫২ |
৪.৬৮ |
৪.৮৭ |
৬.৪১ |
৫.৮৫ |
৭.৭০ |
৫.০ |
১.৫০ |
১.৯৭ |
২.৮৫ |
৩.৭৫ |
৩.৮২ |
৫.০৩ |
৪.৬৫ |
৬.১১ |
৫.৫ |
০.৯৭ |
১.২৮ |
২.১৭ |
২.৮৬ |
২.৮৫ |
৩.৭৫ |
৩.৩৭ |
৪.৪৫ |
৬.০ |
০.৫৩ |
০.৭০ |
১.১২ |
১.৪৮ |
১.৫০ |
১.৯৭ |
১.৮০ |
২.৩৭ |
তথ্য সূত্র :সব্জী বিজ্ঞান , সি কে মন্ডল ও পি কে গরাঁই।
উপোরোক্ত মাত্রার চুন ৩ ভাগে ভাগ করে ৩ বছরের মধ্যে প্রয়োগ করা উচিৎ। যদি এক বারে সমস্ত চুন প্রয়োগ করা হয় তবে মাটিতে বসবাসকারী সমস্ত উপকারী জীবাণু ধ্বংস হয়ে গিয়ে মাটি অনুর্বর ও চাষের অযোগ্য হয়ে যাবে। মাটি পরীক্ষা করার সুযোগ না থাকলে বছরে ৩০ কেজি / বিঘা চুন প্রয়োগ করা যায়। এতে মাটির পি. এইচ. প্রশম হয় ও মাটিতে বসবাসকারী ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট হয় ও মটিতে ক্যালসিয়াম. ম্যাগনেশিয়াম ( যা ডলোমাইটে থাকে) প্রয়োগ করা যায়।
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments