আখচাষে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত এই বিশেষ ও স্বতন্ত্র নার্শারীটি মধ্যপ্রদেশ জেলায় অবস্থিত। ‘মহাকৌশল সুগারকেন’ নার্শারীর মালিক শ্রী জাভেদ গানি কথা প্রসঙ্গে আমাদের বললেন “প্রথাগত আখচাষে বীজ বোনার সময় হয় গোটা আখ নয় আখের গুচ্ছ লাগানো হয়। এর জন্য ৩৫ – ৪০ কুইন্টাল প্রতি একরে আখের প্রয়োজন হয়, আর এর জন্য প্রতি একরে ১০ – ১২ হাজার টাকা খরচ বহন করতে হয়। এই আখের পরিবহন খরচও ব্যায়বহুল।” তিনি আরো বললেন “এই নতুন পদ্ধতিতে প্রথাগত পদ্ধতিতে যে পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয় তার মাত্র ৫% বীজের প্রয়োজন হয়। পরিবহন খরচও অনেক কমে যায়। এর ফলে চারা লাগানোর খরচ ৯০% কমে যায়। এই পদ্ধতিতে চারা গজানোর হার বেশী ( ৪০%) যেখানে প্রথাগত পদ্ধতিতে ৩০%।” সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই চারাগুলি লাগানোর আগে খুব সহজেই শোধন করে নেওয়া যায় ফলে গাছের রোগপোকার আক্রমণ কমানো যায়। মেশিনের সাহায্যে মুকুলগুলিকে আখের কান্ডের থেকে কেটে নেওয়ার পর অবশিষ্ট আখগুলি গুড় বা চিনি তৈরীর কাজে লাগিয়ে নেওয়া হয়। “এর ফলে কৃষকের ন্যুনতম ক্ষতিও হয় না” তিনি আমাদের বললেন।
বর্তমানে এই পদ্ধতিতে পাঁচটি প্রজাতির আখ চাষ করা হচ্ছে। এবছরের শেষে আরো ছয়টি প্রজাতির আখ এই নতুন পদ্ধতিতে চাষ করা হবে। এই চিপ বাড পদ্ধতিতে বছরে ২৫ লাখ চারা তৈরী হয় ও ২৫ দিনের পরিণত চারা মূলজমিতে রোপণ করা হয়। এবছরের শেষে প্রায় ৫০ লাখ আখচারা তৈরীর লক্ষ্যসীমা নেওয়া হয়েছে।
নার্শারীতে চিপ বাড পদ্ধতিতে আখের চারা তৈরীর প্রচুর সুবিধা রয়েছে। এই আখচারাগুলির জীবিত থাকার হার প্রায় ১০০% কারণ চারাগুলি সুপরিকল্পিত ভাবে আগেই তৈরী করা হয়। রাসায়নিক প্রয়োগের কোন প্রয়োজন থাকে না কারণ এই চারাগুলি একটু উঁচু হয়। শস্য পর্যায়ে একমাস বাঁচানো যায় যা খরচ কমায়। শস্য পর্যায় কমে যাওয়ায় কৃষি শ্রম, সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়। উৎপাদনের গুণমানের ১০% উন্নতি হয় ও সমস্ত গাছ সমদৈর্ঘের হওয়ায় সমস্ত গাছ সমানুপাতে সূর্যালোক ও হাওয়া-বাতাস পায় ও সমান ভাবে বেড়ে ওঠে।
পদ্ধতি –
- প্রথমে টাটকা কেটে আনা রোগমুক্ত আখের কান্ড (৮-১০ মাসের) সংগ্রহ করা হয়।
- বিশেষ মেশিনের সাহায্যে শুধুমাত্র আখের মুকুলগুলি বার করে নেওয়া হয়। এই মেশিনটির নাম বাড চিপার।
- এর পর এই সমস্ত মুকুলগুলিকে রাসায়নিক দ্রবণে রেখে শোধন করে নেওয়া হয় রোগমুক্তির জন্য।
- প্লাস্টিক ট্রের গর্তগুলির অর্ধেকটা কোকোপিট, কাঠের গুঁড়ো ও ভার্মিকম্পোস্টের মিশ্রণ দিয়ে ভর্তি করা হয়। পূর্ণ মুকুলটি গর্তে প্রতিষ্ঠা করে অবশিষ্ট অংশ মিশ্রণটি দিয়ে ভরে ফেলা হয়।
- মুকুলগুলির ৮০% সহজেই অঙ্কুরিত হয়ে বড় হয় যদি ট্রে গুলি কম তাপমাত্রায় রাখা হয়। কিন্তু দেখা গেছে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় মাত্র ৪০% অঙ্কুরিত হয়।
- ট্রেগুলি পরপর সারিতে সাজিয়ে রেখে তরিক ও জাত লেখা ট্যাগ লাগিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়।
- রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments