ঝাড়খণ্ড, বিহার, বাংলার প্রত্যন্ত জঙ্গলময় এলাকার গরীব আদিবাসী মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহের একটি পথ তসর পালন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে এখানে বহু বছর আগে শুরু হয়েছিল এই চাষ। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এই সব প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী নিজস্ব প্রযুক্তিতে তসরের চাষাবাদ করে আসছে। আমাদের দেশে চার ধরনের রেশমের চাষ করা হয়, ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে তুঁত, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তসর, , এরি এবং মুগা চার রকমের বাণিজ্যিক রেশমই উৎপাদিত হয়। এগুলির মধ্যে সোনালি হলুদ উজ্জ্বলতার জন্য মুগার চাহিদা বেশি।
কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু ও জম্মু ও কাশ্মীর-এই পাঁচটি রাজ্যে দেশের মোট তুঁত উৎপাদনের ৯৭ শতাংশ উৎপাদিত হয়। ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেশম উৎপাদনকারী দেশ। ২০১৩-১৪ অর্থ বর্ষে ভারতে মোট কাঁচা রেশম উৎপাদন হয় ২৬৪৮০ মেট্রিক টন, এর মধ্যে ১৯৪৭৬ মেট্রিক টন তুঁত সিল্ক, ২৬১৯ মেট্রিক টন তসর সিল্ক, ৪২৩৭ মেট্রিক টন এরি সিল্ক এবং ১৪৮ মেট্রিক টন মুগা সিল্ক।
তসর- একটি বন্য রেশম প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বছরের পর বছর চাষাবাদ হলেও ফলন অত্যন্ত কম, বর্তমানে ভারতে উৎপাদিত সমগ্র তসর চাষের ৮১ শতাংশ অবদান আছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের।
তসরের পোকা আসান, শাল ও অর্জুন পাতা খেয়ে তসর মথ-এ পরিণত হয়। তসর মত এর আগের দশা হলো কোকুন দশা বা সাধারণ কথায় গুটি দশা, যার থেকে সুতো বার করা হয়। চক্রটি সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে ৪০-৭০ দিন। অর্থাৎ, বছরে তিনটি চাষ সম্ভব।
যদি বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয় তাহলে চাষীরা কয়েক গুণ বেশি লাভবান হবেন। তা ছাড়া, বন্য জমিতে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে গাছ লাগানোয় এক দিকে বনসৃজন হবে আর বাড়বে তসর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা, অন্য দিকে স্থানীয় মানুষের জ্বালানি কাঠের জোগানও মেটাবে পুরানো অর্জুন গাছগুলিই।
আবার তসর চাষের প্রতি ধাপে পেশাদারিত্ব সহজ প্রযুক্ত থাকবে বলেও তিনি জানান। তসর-গুটি চাষের সঙ্গে যুক্ত চাষীরা জানিয়েছেন, ২০০ টাকায় এক গ্রাম ডিম কিনতে হয় মহাজনদের কাছ থেকে। তার পর তা অর্জুন গাছে ছেড়ে দিলে ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে পোকা ও পরে ধীরে ধীরে গুটি তৈরি হয়। গোপীবল্লভপুরের পায়রাশুলি গ্রামের কারুরাম মান্ডির কথায়, “এখন আমরা বছরে একবার কোকুন চাষ করি। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বর— ৪৫ দিনেই গুটি পাই। ২২০০ টাকা কাহন (চার গুটিতে এক গণ্ডা, ২০ গণ্ডায় ১ পণ, ২০ পণে ১ কাহন) দামে গুটি বিক্রি করি মহাজনদের কাছেই। তাতে প্রায় ৫ হাজার টাকা লাভ থাকে।”
লাভজনক হলে সারা বছর চাষ হয় না কেন?
(১)দালাল দের মাধ্যমে বেশিরভাগ তসর গুটি বিক্রি করেন স্থানীয় চাষীরা, দালাল দেয় নামমাত্র মূল্যে।
(২) বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষাবাদ না করার ফলে চাষীদের নানান জটিলতা সাথে লড়তে হয় যেমন (রোগ মুক্ত ডিম উৎপাদন , নানান প্রতিকূল পরিবেশে থেকে ও রোগ পোকা হাত থেকে রক্ষা) দেখা গেছে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চাষাবাদ না করে পরম্পরা গত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ৮০-৯০% ফলন ক্ষতি হতে পারে।
(3)আরো একটি অন্যতম দিক হলো এই চাষিরা সংগঠিত নয় , বিভিন্ন স্থানে ছরিয়ে ছিটিয়ে আছেন বা এক সঙ্গে কাজ না করবার জন্য অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন।
(4) চাষীদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ এবং শিক্ষার মান উন্নত না থাকার জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
(5) রেশম চাষী শুধু গুটি বিক্রি জন্য চাষাবাদ করেন কিন্তু তারা যদি , মেশিনে গুটি থেকে সুতো বের করেন তাহলে লাভের পরিমাণ বাড়বে কয়েকগুণ বেশি।
লেখা ও তথ্য :- দেব সজল ঘোষ
- রুনা নাথ (runa@krishijagran.com)
Share your comments