জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে ক্রমশঃ, আর এই খাদ্যের চাহিদা মেটাতে একক প্রতি জমিতে বেশী খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্যে অধিক মাত্রার রাসায়নিক সার ব্যবহার হতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই ফলন বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ইদানিং প্রায় সর্বত্র এই বৃদ্ধির হার ক্রমশঃ স্থিতিশীল আবার কোথাওবা নিন্মমুখী। এর মূল কারণগুলি হল মাটি পরীক্ষা না করে সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, মাটির অম্লত্ব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়া, মাটির পুষ্টিমৌলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়া, মাটিতে দীর্ঘদিন জৈবসার ব্যবহার না করার ফলে মাটির জৈব কার্বনের মাত্রা (যা কিনা জীবাণুর খাদ্য) কমতে থাকায় মাটিতে বসবাসকারী উপকারী জীবাণুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং সংখ্যায় কমে, ফলে মাটিতে ব্যবহার করা রাসায়নিক সারের রুপান্তরিত হওয়া কমে যায়, গাছ কম খাবার পায়। এমতাবস্থায় মাটির গঠন ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে জমির উর্বরতা বাড়াতে জৈবসার ব্যবহার একান্ত আবশ্যক। গোবরসার, খাবার পচা সার, সবুজ সার, জীবাণু সার ইত্যাদি নানান জৈবসারের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল, কেঁচোসার তথা ভার্মিকম্পোষ্ট। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অধিক মূল্য দিয়ে প্রয়োজন মতো সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ, আবার অনেক সময় বেশী পয়সা খরচ করে কিনেও দেখা যায় যে তা গুনগত মানে নিকৃষ্ট। তাই নিজের জমিতে ভালো সার ব্যবহার করতে নিজের সার নিজেই তৈরী করুন। খুব সহজেই একজন মানুষ স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সময়ে এই সার তৈরী করতে পারেন। নিজের জন্য ছাড়াও বাণিজ্যিক ভাবেও এই সার উৎপাদন করতে পারেন। শুধুমাত্র কৃষক নয় যুবা কৃষক, বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মধ্যেও এই সার তৈরীর ব্যপারে বিশেষ উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু এই সার তৈরীর বিষয়ে যেসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলি রয়েছে সেগুলিকে সঠিকভাবে না জানার ফলে দেখা যাচ্ছে অনেকেই কিন্তু সফলভাবে এই সার তৈরী করতে পারছেন না। বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে এক-দু বছর করার পর অনেকেই আর করেন না। তাই সঠিক পদ্ধতিতে কৃষক বন্ধুরা যাতে সার তৈরী করতে পারেন, সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে এবং এই সার তৈরী খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অবগত করতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট জাতের কেঁচোর সাহায্যে অর্ধপচা জৈব আবর্জনাকে তাদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করিয়ে মল হিসেবে যে বর্জ্য পদার্থ পাওয়া যায়। তাই কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্ট। এই সার পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে নানান সুবিধাগুলি পাওয়া যায়। যেমন –
১. কেঁচোসার মাটিতে জৈব কার্বন ও অন্যান্য উপাদানযুক্ত করে মাটির জৈব, রাসায়নিক এবং মাটির ভৌত গুনাগুন চরিত্রের মানের উন্নয়ন ঘটায়।
২. এই সারে জলে দ্রবণীয় উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান অন্য যেকোনো সারের তুলনায় বেশী পরিমাণে থাকে যা অনেক সহজলভ্য।
৩. মূল সারের পাশাপাশি অনেক অনুখাদ্য যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, মলিবডেনাম ইত্যাদি এই সারের মধ্যে থাকে।
৪. এতে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৫. উৎপাদিত ফসলের গুণগত মান ভালো হয়।
৬. মাটিতে ফাঁপ তৈরী করে ফলে শিকড়ের বৃদ্ধি যেমন ভালো হয় তেমন প্রয়োজনীয় জল, উদ্ভিদ খাদ্য এবং বায়ু ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৭. পচনশীল, অব্যাহত বা বর্জ্য পদার্থে সুষ্ঠ ব্যবহার হয় বা তাদের পুনরায় কাজে লাগানো সম্ভব হয়, দূষণও কমে।
৮. জল ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
৯. এই সারে বিভিন্ন হরমোন যেমন জিব্বারোলিক অ্যাসিড, অক্সিন সাইটোকাইনিন, হিউমিক অ্যাসিড থাকে যা অঙ্কুরোদগম ও গাছের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
১০. সর্বোপরি মাটিকে শক্তিশালী করে ও মাটিকে উর্বর করে।
কেঁচোসারের পুষ্টিমৌল –
খাদ্য উপাদান |
কেঁচোসার (শতকরা পরিমাণ) |
নাইট্রোজেন |
১-১.৬০ |
ফসফেট |
২-২.৪৫ |
পটাশ |
০.৮০-১.১০ |
ক্যালসিয়াম (পি.পি.এম.) |
০.৪৪ |
ম্যাগনেসিয়াম (পি.পি.এম) |
০.১৫ |
আয়রন (পি.পি.এম) |
১৭৫.২০ |
ম্যাঙ্গানিজ (পি.পি.এম) |
৯৬.৫০ |
জিঙ্ক (পি.পি.এম) |
২৪.৪৫ |
কপার (পি.পি.এম) |
৪.৮৯ |
কার্বন : নাইট্রোজেন |
২৫.৫০ |
এই সার তৈরী পদ্ধতির দুটি ধাপ। প্রথমটি মাটির উপর খোলা আকাশের নীচে রৌদ্রযুক্ত স্থানে যেখানে জল জমে না এমন জায়গায় কেঁচোর খাবার তৈরী করা আর দ্বিতীয় ধাপটি হল ছাউনির নীচে পিট তৈরী করে সেই খাবার কেঁচোকে খাইয়ে কেঁচোসার তৈরী করা। এ বিষয়ে উল্লেখ্য কেঁচোর অর্ধপচা খাবার তৈরীর জন্য গর্ত বা চৌবাচ্চা করবার প্রয়োজন নেই। সার তৈরীর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে প্রয়োজনীয় উপাদান তথা কাঁচামালের উপর। যার উপরে কেঁচোসারের গুণগত মান নির্ভর করে। যে কোনো জৈব পচনশীল বস্তু গোবর, মুরগীর বিষ্ঠা, ছাগল-ভেড়ার মল অথবা ইত্যাদিকে কেঁচোসারে পরিণত করা যায়। ফসল তুলে নেওয়ার পড়ে অথবা ঝাড়াই-মারাই করার পরে, পড়ে থাকা ফসলের দেহাংশ-ই কৃষিজ বর্জ্য, যেমন – পাতা, কান্ড বা ডাঁটা, খোসা, তুষ, ছাল, সব্জির কুটো, আখের ছিব্ড়ে ইত্যাদি। নিজের সার নিজে তৈরী করতে গেলে কৃষককে তার হাতের কাছে সহজলভ্য উপাদানের উপর জোর দিতে হবে। বায়োগ্যাস পেয়ে যাওয়ার পড়ে প্ল্যান্ট-এ পড়ে থাকা স্লারীও কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কাঠের গুড়ো, শাঁস ইত্যাদির সাথে সাথে ধঞ্চে পাতা, সুবাবুল গাছের পাতা, শিম্বগোত্রীয় গাছের পাতা, সজনে পাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, আলু ইত্যাদির পাতা, খোসা, কচুরিপানা, টোপাপানা ইত্যাদি। কচুরীপানা শিকড় বেশী বড় হলে তা কেটে বাদ দিতে হবে। এছাড়াও সবুজ নরম জাতীয় গাছ যেমন কলা গাছ, পেঁপে গাছ ইত্যাদিকে আগে থেকে সংগ্রহ করে ছোট ছোট করে কেটে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে যে ২দিন বা ৩দিন ধরে কাঁচামাল জোগাড় করা গেলেও সার তৈরীর কাজ একদিনেই সারতে হবে। সহজে পচে না এমন দ্রব্য সমূহ যেমন প্লাস্টিক, রাবার, ছেঁড়া কাপড়, পাথর, টিন ইত্যাদিসহ আলু, পেঁয়াজ, লঙ্কা, আদা, রসুন, গাজর এবং শক্ত কাঁটাযুক্ত গাছের দেহাংশ ব্যবহার না করাই উচিত। শুধু ভালো খাবার তৈরী করলে হবে না, তা খাবার জন্য এমন কেঁচো ব্যবহার করতে হবে, যা বেশী পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করবে এবং বেশী মলত্যাগ করবে। ৪ ডিগ্রী থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা, ৫০-৬০ শতাংশ আর্দ্রতা এবং ৬-৮ পি.এইচ এ বেঁচে থাকতে পারে এমন এপিজোয়েক কেঁচো যার মাটির উপরের অংশে থাকে তাদের ব্যবহার করতে হবে। সারা বিশ্বে প্রায় ৪,২০০ - এর বেশী কেঁচো আছে। কিন্তু কেঁচোসার তৈরীর জন্য আইসেনিয়া ফোয়েটিডা, ইউড্রিলাস ইউজেনি ও পেরিওনিক্স এক্সকাভেটাস প্রজাতির ব্যবহার বহুল প্রচলিত যাদের সক্রিয়তা ও কার্যকারিতা আমাদের দেশীয় কেঁচোর তুলনায় অনেক অনেক গুণ বেশী।
সার তৈরী করার আগে সমস্ত জৈব উপাদান তথা গাছের পরিত্যক্ত দেহাবশেষ, গোবর, সবজির অবশিষ্টাংশ, কলাগাছ, লতা-পাতা, খড়, কচুরিপানা, সবুজ ঘাস ইত্যাদি সংগ্রহ করে এক জায়গায় জোগাড় করে রাখতে হবে। পেঁপে বা কলাগাছের কান্ড ছোট ছোট করে টুকরো করে কেটে নিতে হবে দু-এক দিন আগেই। নরম জল ভরা সবুজ দেহাংশ যেমন, কচুরিপানা ২-৩ দিন রোদে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। কচুরিপানার বড় শিকড় থাকলে তা কেটে বাদ দিতে হবে। গোবর ও গোমূত্র মিশ্রিত মাটি সংগ্রহ করে গুছিয়ে নিতে হবে। উৎকৃষ্টমানের কেচোঁসার তৈরী করার জন্য সবুজ অংশ ও গোবরের অনুপাত ৩ : ১ হওয়া উচিত।
কেঁচোসার উৎপাদন করতে গেলে কাঁচামাল বা উপাদান সংগ্রহ করার পর প্রথমেই তা সঠিকভাবে ভালো করে পচিয়ে কেঁচোর খাবার তৈরী করে নিতে হবে। এটা করতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ দিন সময় লাগবে। গ্রীষ্মকাল থেকে শীতকালে সময় একটু বেশী লাগে। সরাসরি মাটির উপরেই একটা উঁচু জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে জল দাঁড়াতে না পারে। সর্বপ্রথম মাপমত শুকনো খড় দিয়ে একটা বেস তৈরী করে নিতে হবে, চওড়ায় ৩ ফুটের বেশী নয়। এরপর ক্রমপর্যায়ে প্রথমেই শুকনো জিনিস তারপর সবুজ তাজা উপাদান, আবার শুকনো তারপর আবার লতাপাতা ইত্যাদি বিভিন্ন কাঁচামাল স্তর প্রতি স্তর দিয়ে যেতে হবে এবং প্রত্যেক স্তরকে গোবর গোলা জল দিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক সময় স্বল্প পরিমাণে (৫০-১০০) গ্রাম ইউরিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে প্রতি স্তরে। যদি সম্পূর্ণ জৈব কৃষিতে এই সার ব্যবহার করা হয় তখন ইউরিয়া বা অন্য কোন রাসায়নিক বস্তু কোন মতেই দেওয়া যাবেনা। গাঁদা তৈরী করার সময় সমস্ত উপকরণ একদম ঠাসাঠাসি করে চেপে রাখতে হবে যাতে বেশী বায়ু চলাচল করতে না পারে। অক্সিজেন কম হলে পচন ভালো হয়। এইভাবে ৪ ফুট পর্যন্ত উঁচু স্তূপে করে তাতে কাদা ও গোবর মিশ্রিত মাটি দিয়ে ভালো করে লেপে দিতে হবে। এরপর ভালো করে কালো প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিয়ে চারপাশে মাঝে মাঝে ইট দিয়ে চাপা দিতে হবে। লক্ষ্য করা যায় স্তূপের মধ্যে পচন শুরু হয়েছে এবং তাপমাত্রা ক্রমশঃ বাড়তে শুরু করেছে। এই সময় প্লাস্টিকটা একটু উঠিয়ে দেখলে ভেতরকার তাপমাত্রা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়। ১৫-২০ দিনের মাথায় সর্বত্র মোটামুটি ভালো করে পচানোর জন্য এই আধপচা দ্রব্যসমূহ কোদাল দিয়ে উল্টেপাল্টে মিশিয়ে দিন এবং মেশানোর সময় প্রয়োজন মত জল এবং হালকা গোবর মিশ্রিত জল ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে আবার প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিন। এরপর আবার ৩০-৪০ দিনের মাথায় দেখলে দেখা যাবে প্রায় সব অংশটাই বেশ ভালোভাবে পচে গেছে। ফলে কেঁচোর খাবার তৈরী। কিন্তু একটা এখানে বিষয় ভীষণভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে কখনোই এই খাবার সরাসরি কেঁচোকে দেওয়া যাবে না। এই ভুল কিন্তু অনেকেই করেন। দীর্ঘদিন পচনক্রিয়ার ফলে ওর মধ্যে বিষাক্ত গ্যাস, দুর্গন্ধ ও অধিক তাপমাত্রা থাকার কারনে কেঁচোর ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই খাবারকে কমপক্ষে একদিন ছায়ায় ছড়িয়ে রাখতে হবে। এতে গ্যাস ও তাপ উভয়েই দূর হবে। এবার এই অর্ধপচা বস্তুকে কেঁচোর খাবার হিসাবে দিতে হবে।
আরও পড়ুন ইউরিয়ার বিকল্প হতে পারে এজোলা
কেঁচোসার তৈরীর এই ধাপটি ছায়াযুক্ত স্থানে ছাউনির নীচে চারধার খোলা জায়গায় ৬ ফুট X ৩.৫ ফুট X ১ ফুট ইট-সিমেন্টের চৌবাচ্চা তৈরী করে তাতে কেঁচোসার তৈরী করা যায় যা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। পাকা পিঠ না বানিয়ে কম খরচে সার উৎপাদন পদ্ধতিটি একটু আলাদা যেখানে অস্থায়ী ভার্মিপিট তৈরী করা হয়। যেখানে কোনো স্থায়ী চৌবাচ্চা না করে ৬ ফুট X ৩ ফুট জায়গাতে একসারি করে ইট সাজিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরী করতে হবে। এবার ঐ ফাঁকা জায়গায় মাটি ভর্তি করে তাতে অনেকক্ষণ কাঠ বা ইট দিয়ে পিটিয়ে সম্মান করে নিয়ে চারপাশ থেকে ইট সরিয়ে নিতে হবে। ফলে মাটি থেকে সামান্য উঁচু একটা বেড তৈরী হবে যার একদিকে সামান্য ঢাল রাখতে পারলে ভালো তাতে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাবে। এবার তার উপরে একটা পলিথিন দেওয়া হবে যেটা চারিদিকেই একটু করে বাড়তি থাকবে। এবার তার উপরে এক বা দুই সারি ইট দিয়ে দিতে হবে সুবিধা মত। ফলে একটি চৌবাচ্চা বা পিটের মতই তৈরী হবে। এবার ঐ পিটের মধ্যে শুকনো খড় বিছিয়ে দিয়ে তার উপর একসারি পাটকাটি দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এবার এর ওপর ঠান্ডা অর্ধপচা খাবার প্রায় দেড় ফুট উঁচু করে দিয়ে কেঁচো ছাড়তে হবে। কেঁচো ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যাবে যে তা অতিদ্রুত নীচের দিকে চলে গেছে। এইভাবে ঢিবি করে দেড় ফুট খাবার দিলে তা চারিদিক থেকে বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে ফলে অক্সিজেন সরবরাহ ভালো হয় এবং কেঁচোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ছোট অথচ গভীর চৌবাচ্চা করে সার তৈরী করতে গেলে অনেক সময় অক্সিজেনের ঘাটতি কেঁচোর সক্রিয়তাকে প্রভাবিত করে। খাবার দিয়ে কেঁচো ছাড়ার পর তাতে কচুরিপানা বা খড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং প্রয়োজন মতো জল দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ঐ অর্ধপচা খাবারটি মুঠো করে চাপ দিয়ে দেখে নিতে হবে। যদি হালকা চাপ দিলেও জলের রেখা দেখা যাচ্ছেনা তখন জল দিতে হবে, বেশী বেশী জল পড়লে বুঝতে হবে জল বেশী আছে। আর যদি অল্প রস বেরিয়ে আসে বুঝতে হবে ঠিক আছে, তখন আর জল লাগবে না। ৪০-৪৫ দিনের মাথায় উপরের দিকে কালো চায়ের দানার মত সার পাওয়া যায় যা অবশ্যই কেঁচোর সংখ্যা আর খাবারের পরিমাণের উপর নির্ভর করে।
অন্যান্য কম্পোষ্ট সারের তুলনায় কেঁচোসারে গ্রহণযোগ্য খাদ্যোপাদান অনেক বেশী পরিমাণ থাকে। এছাড়া এই সারের মধ্যে বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন জিব্বারোলিক অ্যাসিডের সাথে সাথে আবার বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকও থাকে যা গাছের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও নার্শারিতে বিভিন্ন গাছের কলম তৈরীর জন্য কাটিংকে কেঁচোসারে বসালে সহজেই শিকড় গজায়। ধান বা যে কোন সবজি বা পেঁয়াজের চারাতলা বা বীজতলাতে এই সারের ব্যবহার বিশেষ আবশ্যক কারণ এই ক্ষেত্রে চারা বা চারাগাছ তুললে শিকড়ের কোনো ক্ষতি হয়না মাটিতে ফাঁপ থাকার কারণে। মাঠের ফসলে বিঘা প্রতি ২.৫ থেকে ৫ কুইন্ট্যাল, বাগানের ফসলে গাছ প্রতি ২০০-৫০০ গ্রাম এবং টবের গাছে ১০০-২০০ গ্রাম প্রতি টবে প্রয়োগ করতে হবে। মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করলে সাধারণভাবে শেষ চাষের সময় আর বাকি অর্ধেক পরিমাণ রোয়ার ৩-৮ সপ্তাহ পড়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে ২০১৫ সালকে “আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বর্ষ” (International Year of Soil)। আর প্রতি বছর ৫ই ডিসেম্বর উদ্যাপিত হয় বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। আগামী দিনেও মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে ও ভালো ফলন পেতে মাটির স্বাস্থ্যর দিকে নজর দিতে হবে। সুষম সারের ব্যবহারের সাথে সাথে জৈব সারের ব্যবহারও বাড়াতে হবে।
ডঃ কিরণময় বাড়ৈ
বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (শস্য বিজ্ঞান)
হুগলী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- অভিষেক চক্রবর্তী (abhishek@krishijagran.com)
Share your comments