বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে উৎপাদকরা যতখানি সম্ভব শ্রমিক কম নিয়োগ করতে চাইছেন, তা সে উৎপাদনকার্যের জন্যই হোক বা মোড়োকজাতকরণের জন্যই হোক। এই কারণে রোবটিক্স হল এমন একটি উপায় যা কিনা এই বাড়তি শ্রমের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। অবশ্য চা বা স্ট্রবেরীর মতো ফসল চাষের ক্ষেত্রে এই রবোটিক্স অনেকটাই জটিল পদ্ধতি, এছাড়াও এই পদ্ধতি এখনো পর্যন্ত এতটা সুলভ হয়ে ওঠেনি, যদিও বা পাওয়া যাবে, এর খরচ বহন করা অনেক উৎপাদকদের কাছে প্রায় অসাধ্য।
রবোটিক্স পদ্ধতির মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশের মতো নিয়োজিত শ্রম হ্রাস পাচ্ছে, তাই রোবটিক্সে বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিজীবী সংস্থা বা উদ্যোক্তারা এমন একটি সফটওয়ার তৈরী করেছেন যা একটি রোবটিক কুকুর তৈরীতে তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে। তাদের মতে” আমরা বর্তমানে এমন রোবট বানাতে ইচ্ছুক যাদের মধ্যে মানুষের মতো কর্মক্ষমতা রয়েছে। সাধারণতঃ রোবটরা খুব বড়, আড়ষ্ঠ, ধীর গতি সম্পন্ন ও চাকার উপর উপবিষ্ট থাকে, তাই তাদের কার্যক্ষেত্রও খুব সীমাবদ্ধ”। রিয়াক্ট রোবটিক্স কোম্পানির CEO মিঃ গ্রেগরী ইপ্স্ ব্যাখ্যা করেন, “ আমরা এমন কোনো রোবট বানাতে চাই যারা মানুষের মতো কাজ করতে পারে এবং শুধু কাজই নয়, তারা চলতেও পারবে। চাকা ব্যাপারটি খুবই ভালো, কিন্তু সমান জমির থেকে অসমান জমিতে চাকার রোবট চালানো খুবই অসুবিধাজনক বা কোনো সিঁড়ির ধাপের ক্ষেত্রেও চাকার রোবটের কাজ করতে অনেকটাই অসুবিধা হয়। জমিতে কোনো আঁকাবাঁকা রূপ থাকলে, ঢাল থাকলে, কোনো খানাখন্দ থাকলে বা কোনো ইট কাঠ পাথর থাকলে চাকা বেকার হয়ে যায়, যেখানে পায়ের কাজ অনেকটাই সুষ্ঠু” তিনি ব্যাখ্যা করেন।
আসলে পাওয়ালা রোবট সচরাচর বাজারে দেখা যায় না। যে সমস্ত রোবটের অত্যাধুনিক গমনযোগ্য প্লেট রয়েছে, সাধারণতঃ তাদের দাম অনেকটাই বেশি, প্রায় আড়াই থেকে পাঁচ লক্ষ ডলার। এত দাম হওয়া সত্ত্বেও তারা অনেক বেশি ধীরগতিসম্পন্ন। গ্রেগরীর মতে, “আপনারা যদি কৃষককে দেড়শ লক্ষ ডলার মূল্যের ধীরগতিসম্পন্ন রোবট কেনার পরামর্শ দেন, যা কিনা মানবিক শ্রমের ১০ গুণ করতে অক্ষম, তবে কৃষকরা অত দাম দিয়ে নিশ্চয়ই রোবট কিনতে যাবেন না তাই আমাদের লক্ষ্য হলো চাষিদের হাতে এমন কোনো রোবট তুলে দেওয়া যাতে তারা অনেকবেশী কাজ অতি অল্প সময়ে করতে সক্ষম হবে, এবং যার গতি হবে অনেকটাই বেশি, ওজন হবে হাল্কা, ও দাম হবে সাধারণ রোবটের তুলনায় প্রায় ১০ ভাগ সস্তা।
এই কোম্পানি এখন কৃষকদের সাথে কথা বলে এই ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়কে জানতে চাইছে এবং কীভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করা যায় সেই বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। গ্রেগরী বর্তমানে শ্রমের সুলভতা কমে যাবার জন্য উৎপাদন জগৎকে এমন একটি যন্ত্র দিতে বদ্ধপরিকর, কাজের দিক থেকে বিচার করলে যা কিনা অনেকটাই সুলভমূল্যে পাওয়া যাবে।
ঠিক এই মূহুর্তে ব্রিটেনে ২০% ঋতুভিত্তিক শ্রমের ঘাটতি রয়েছে এবং এই ২০% ঘাটতিই উৎপাটন কার্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। এই কারণে রিয়াক্ট রোবটিক্স সংস্থাটি এমন কিছু বানাতে চায় যা তাদের দেশের এই ঘাটতি উৎপাদনের পরিমাণ পূরণ করবে।
“ আমরা একটা রোবট বানিয়েছি যার কিনা চারটি পা আছে, এর নাম DOGBOT, এই রোবটসদৃশ যন্ত্রটি জমি থেকে উৎপাটিত ফলনকে ট্রেতে সাজিয়ে মোড়কঘরে চালান করবে। যারা ফসল উৎপাটন করছে তারা একটি ট্রে ফলে ভর্তি করে তা আসে পাশে ভ্রাম্যমাণ রোবটের কাছে দিয়ে দেবে। DOGBOT সেই ভর্তি ট্রেটিকে কোনো মোড়কঘর বা ট্রেলারে চালান করে দেবে।
সংস্থাটি কৃষকদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে এই বিশেষ যন্ত্রটির সুরাহা চেয়েছেন, আসলে সংস্থাটি জানতে চায় ঠিক কোন ক্ষেত্রে এই বিশেষ DOGBOT ব্যবহার করলে বেশি শ্রম ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় হতে পারে, সেটা ঘরের বাইরে উৎপাদনের ক্ষেত্রে, নাকি পলিহাউসের ক্ষেত্রে? এবং কোন ফলের ক্ষেত্রে এটি বেশি ফলদায়ক? স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, চেরি, নাকি তরকারির ক্ষেত্রে? ইত্যাদি।
গ্রেগরী আরও বলেন “ আমরা হিসাব করে দেখেছি যে, আমরা এটি অনেক সঠিক দামে দিতে পারবো, কিন্তু চাষিদের সাথে আলোচনা না করে আমরা একে বাজারে আনবো না, তাই ২০১৯ শে আমরা DOGBOT-কে জমিতে নামিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বুঝতে পারবো, আমরা ঠিক কতদূর এগোলাম। এরপর যদি কিছু সংস্কার করতে হয়, তা করবো। আমাদের লক্ষ্য যেনতেনপ্রকারেণ ২০২০-তে DOGBOT কে মাঠে নামানো।
“আমরা কৃষকদের কাছে ভাড়া বাবদ DOGBOT-এর পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছি। এখনো চাষের জন্য প্রায় ৩.৫ মাস পড়ে আছে, এবং আমরা মনে করি এখনি কারো পক্ষে এই রোবট কিনে বছরে মাত্র ৩.৫ মাস চাষ করা সম্ভব নয়। যদি এই যন্ত্র চাষ ছাড়াও খামার বাড়ির অন্যান্য কাজ করতে সক্ষম হয়, তবে আমার মনে হয় মানুষের এটি কেনার প্রতি ঝোঁক বৃদ্ধি পাবে। ১ টা রোবট পাঁচটা লোকের কাজ করতে সক্ষম। যদি কারও জমিতে ২০০ লোক লাগে তবে তাকে হিসাবমতো ৪০ টি রোবট কিনতে হবে। তবে আমার মনে হয় অতগুলি যন্ত্র না কিনলেও চলবে।“
DoGBOT এককালীন ২০ কেজির ভার বহন করতে সক্ষম। তাই ছোট ফলের ক্ষেত্রে এর সাফল্য সুনিশ্চিত। কিন্তু আপেল বা পিয়ারস্ এর মতো বড় ফলের ক্ষেত্রে এর সাফল্য নাও আসতে পারে। এই রোবটটি আদপে একটি কুকুরের আকার আকৃতি বিশিষ্ট হবে। কাজ করার সাথে সাথে এর মধ্যে আলাদা কিছু সুবিধা যেমন সেন্সর বা আর ক্ষুদ্র কিছু যন্ত্র লাগানো থাকবে যা কিনা মাটি পরীক্ষা করতে সক্ষম হবে। গ্রেগরী এই DOGBOT-এর সাফল্যের ব্যাপারে এতটাই সুনিশ্চিত যে তিনি কৃষির সাথে রোবটের অন্য কাজগুলি করার ব্যাপারেও বেশ আশাবাদী।
- প্রদীপ পাল
Share your comments